অক্টোবর ০৪, ২০২০ ২০:১০ Asia/Dhaka

জীবনযাপনের ইসলামি পদ্ধতি ও দিক নির্দেশনা বিষয়ক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান “আদর্শ জীবনযাপনের" আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা গত দুই আসরে বলেছিলাম যারা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে সমাজের সাথে এমনকি নিজ পরিবারের সঙ্গেও তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

নেতিবাচকতা যতদূর সম্ভব পরিহার করুন। আরেকটি প্রসঙ্গ আমরা গত আসরে টেনেছিলাম। প্রসঙ্গটি হলো অঙ্গীকার রক্ষা করা।

অঙ্গীকার মানে হলো আপনি কাউকে কোনো ব্যাপারে কথা দিয়েছেন সে কথা রাখতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রশ্নবোধক ভঙ্গিতে বলেছেন: যে কাজ করার কথা বলেছো সেটা কেন করছো না? এই প্রশ্ন থেকে বোঝা যায় আল্লাহ কথা না রাখাকে মোটেই পছন্দ করেন না। তাছাড়া সামাজিক শৃঙ্ক্ষলাও নষ্ট হয়ে যায় কথা অনুযায়ী কাজ না করলে। আর ভালো কাজের অনুসরণ করার কথা বলেছেন আল্লাহ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: 'হে নবী (সা)! আমার সেসব বান্দাদের সুসংবাদ দিয়ে দিন! যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে এবং তার ভাল দিকটি অনুসরণ করে'!  সুতরাং কথা বেশি বলার চেয়ে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনতে হবে এবং সুন্দর ও উত্তম কথার অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দিন-এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু করছি আজকের আলোচনা।

কুরআনের সংস্কৃতিতে চিন্তাশীলদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রচুর আয়াত ও উপাদান রয়েছে। আমরা তখনই কাউকে বলতে পারবো যে সঠিকভাবে চিন্তা করছে বা বিচার বিবেচনা করছে যখন সেই ব্যক্তি আত্মবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একটা সুষ্ঠু মানদণ্ড মেনে চলে এবং ওই মানদন্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কিছু বিচার করে। তখনই দাবি করা যাবে যে ওই লোকের সমালোচনা করার মতো গুণ ও  যোগ্যতা আছে। পবিত্র কুরআনের সূরা ইউনুসের ৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: আসলে তাদের বেশিরভাগ লোকই নিছক আন্দাজ -অনুমানের ওপর চলছে। অথচ আন্দাজ -অনুমান কোনোভাবেই মানুষের সত্যের প্রয়োজনীয়তা বিন্দুমাত্রও মেটায় না। তারা যা কিছুই করছে আল্লাহ সেসব সম্পর্কে ভালভাবেই জানেন।

সমালোচনামূলক চিন্তার আরেকটি উপাদান হলো জিজ্ঞাসা, প্রশ্ন করা। বর্তমান পৃথিবীতে যত সমস্যা আর ভুল বুঝাবুঝি রয়েছে সেসবের উৎস হলো অসচেতনতা বা অজ্ঞতা। এই অজ্ঞতা বা অসচেতনতারও বেশিরভাগই এসেছে প্রশ্নহীনতা বা জানার অনাগ্রহ থেকে। প্রশ্ন করলে বা জেনে নেয়ার আগ্রহ থাকলে এই সমস্যা হতো না। সুতরাং জানার জন্য প্রশ্ন খুবই সহযোগী। না জানার কারণে আল্লাহ সম্পর্কে বহু মানুষ অনুমান নির্ভর মিথ্যা আরোপ করে বসে। তবুও অহংকারের বশবর্তী হয়ে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকে। সূরা যুমারের ৬০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন: আজ যেসব লোক আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে কিয়ামতের দিন তুমি দেখবে তাদের মুখমণ্ডল হবে কালো। অহংকারীদের জন্য কি জাহান্নামে যথেষ্ট জায়গা নেই?

বিচার বিশ্লেষণ কিংবা সমালোচনা যাই বলি না কেন কিংবা যেই দৃষ্টিভঙ্গিই আমরা পোষণ করি না কেন, যে কথাই আমরা বলি না কেন তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো তথ্য ও প্রমাণপঞ্জি থাকা। তথ্য প্রমাণ না থাকলে কোনো বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বা রায় দেয়া মোটেই ঠিক নয়। এই প্রমাণপঞ্জি বা দলিল নির্ভরতা সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য। সূরা ফুরকানের ৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: 'তুমি কি আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা দেখ না কীভাবে তোমার রব ছায়া বিস্তার করেন? তিনি চাইলে একে চিরন্তন ছায়ায় পরিণত করে দিতেন। আমি সূর্যকে করেছি তার দলিল ও পথ-নির্দেশক'।

মানুষ যখন নিরন্তর চিন্তাভাবনা করবে,ভাববে,গবেষণা করবে তখনই উপলব্ধি করতে পারবে 'দলিল' বলতে এখানে কী বোঝানো হয়েছে।

সমালোচনামূলক চিন্তা ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো বস্তুনিষ্ঠতা ও সত্যের অনুসন্ধান।যে সত্যের মাঝে নিজের এবং অন্যদের স্বার্থ নিহিত রয়েছে সেই সত্যে উপনীত হবার চেষ্টা চালাতে ভুলে না যাওয়াই হলো বস্তুনিষ্ঠতা বা সত্যানুসন্ধান। কোনোভাবেই সত্য ও বাস্তবতাকে পদদলিত করা যাবে না। সত্য যদি পদদলিত হয় তাহলে সমালোচনামূলক চিন্তা, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিকতা সুদূর পরাহত থেকে যাবে। কারণ সত্যকে যারা দেখতে পায়, উপলব্ধি করতে পারে তাদের সঙ্গে অন্ধদের মানে যারা উপলব্ধি করতে পারে না তাদের পার্থক্য অনেক। সূরা মুমিনে'র ৫৮ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: 'অন্ধ ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী এক রকম হতে পারে না এবং ঈমানদার ও সৎকর্মশীল সমান হতে পারে না। কিন্তু তোমরা কমই বুঝতে পারো'।

মনে রাখতে হবে কেউ ভুলের উর্ধ্বে নয়। সুতরাং অপরের সমালোচনা করার আগে নিজের সমালোচনা করতে হবে। নিজের ভেতরটা নিয়ে ভাবতে হবে, বিশ্লেষণ করতে হবে। যাকে বলে আয়না দেখা। আয়নায় নিজেকে দেখতে হবে অন্যকে দেখার আগে। ঘোষিত নিষ্পাপদের বাইরে কোনো মানুষই পূর্ণতায় বা পরিপূর্ণ বিশুদ্ধতায় পৌঁছতে পারে না। আধ্যাত্মিকতার এই বৈশিষ্ট্যটি নির্ভর করে নিজেকে নিখুঁত মনে না করা এবং দুর্বলতা ও ভুল-ত্রুটিগুলো শিকার করার মধ্যে। এই মানসিকতা পোষণ করলে যে বিষয়টি বা সত্যে আমরা উপনীত হবো তাহলো, অন্যদের মাঝে যদি কোনোরকম ভুলত্রুটি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে ভাববো আমরাও সেই ভুল ত্রুটি থেকে মুক্ত নই।

এইরকম মানসিকতা আমাদের তৈরি হোক। নিজেদের ভুলের উর্ধ্বে না ভেবে অপরের ভুল দেখে নিজেকেও সেই ভুলে ভরা কিনা তা ভাবতে শিখি। আত্মসমালোচনা বেশি বেশি করি। দিনভর কী কী খারাপ কাজ করলাম সেসব নিয়ে ভেবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আর কোনো ভালো কাজ করে থাকলে তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার মানসিকতা পোষণ করি। আল্লাহর আমাদের সেই তৌফিক দিন-এই প্রত্যাশায় এখানেই গুটিয়ে নিচ্ছি আজকের আসর।

যারা দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সঙ্গ দিলেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তী আসরে আবারও কথা হবে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো:আবুসাঈদ/ ০৪

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ