অক্টোবর ০৩, ২০২০ ১৮:৫৫ Asia/Dhaka

জীবনযাপনের ইসলামি পদ্ধতি ও দিক নির্দেশনা বিষয়ক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান “আদর্শ জীবনযাপনের" আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা গত দুই আসরে বলেছিলাম যারা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে সমাজের সাথে এমনকি নিজ পরিবারের সঙ্গেও তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

নেতিবাচকতা যতদূর সম্ভব পরিহার করুন। ইতিবাচক হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। প্রতিবেশি নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বনের কথাও বলেছিলাম।

প্রতিটি মানুষই কমবেশি প্রতিবেশিদের প্রভাবে প্রভাবিত হন। সুতরাং প্রতিবেশি নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করুন। চেষ্টা করবেন ইতিবাচক ও সুদৃষ্টিবান বন্ধু খোঁজার। এমন বন্ধু যে সবসময় আধা গ্লাস ভরা পানিই দেখে, আধা গ্লাস খালি দেখে না। বন্ধুদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টির অধিকারীদের কাতারে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন এবং ইতিবাচক মনোভাব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পরস্পরে আলাপ আলোচনা করুন। আপনি যখন ঘুমাতে যাবেন তখন যেসব বিষয় আপনাকে আনন্দিত করে সেসব নিয়ে ভাবুন। অপরকে মূল্যায়ন করতে শিখুন। অপরের সম্পর্কে জানুন, তার গুণগুলো বিচার বিশ্লেষণ করুন। মূল্যায়ন করতে গিয়ে আবার সমালোচনা করবেন না যেন। দোষ-ক্রুটিও খুঁজে বেড়াবেন না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কিংবা অবমূল্যায়ন করা থেকে বিরত থাকুন। এটা মানব চরিত্রের একটা বিশেষ গুন। এই গুণটি নিয়ে আজকের আসরে আমরা কথা বলার চেষ্টা করবো।

মানুষ মাত্রই ভুল করে। কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়। তবে ভুল কখনো কখনো এমন পর্যায়ের হয় যে, ব্যক্তি নিজে বুঝে ওঠার আগে অন্যরা বুঝে ফেলে। তো মানুষ যখনই জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নিজেকে অন্যদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, নিজের সম্ভাব্য ভুলগুলোকে তখন তুলনামূলকভাবে একটু ভালো বুঝতে পারে। ব্যক্তিগত ও সমাজিক উন্নয়ন, শক্তি ও দুর্বলতার দিকগুলো শনাক্ত করা বা চেনার মাধ্যমে এবং নিজের ত্রুটি ও অপূর্ণতাগুলো দূর করার চেষ্টা প্রচেষ্টা চালানোর মধ্য দিয়ে সম্ভব হতে পারে। আর এই শনাক্ত করার একটি উপায় বা পথ হলো সমালোচনা। সমালোচনা বলতে বোঝায় জিজ্ঞাসা করা এবং পর্যালোচনা করা। সমালোচনা মনে ব্যক্তির অগোচরে তার চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করা নয়।

এ সমালোচনা কিন্তু একটা বিশেষ যোগ্যতা। আর এই যোগ্যতা দিয়ে কেবল ব্যক্তির ভুল-ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো ঠিক নয় কিংবা তার সব কিছুকেই অবমূল্যায়ন করা ঠিক নয়। বরং সমালোচনার লক্ষ্য হবে গঠনমূলক বিশ্লেষণ এবং সেইসঙ্গে যা কিছু ঘটেছে তারচেয়েও ভালো একটা উপলব্ধি বা বোধ প্রতিষ্ঠিত করা। তার মানে সমালোচনার অর্থ দাঁড়ায় অকারণে কোনো কিছুকে গ্রহণ না করা, আর কোনো কারণ ছাড়া কোনো কিছুকে প্রত্যাখ্যান না করা। প্রকৃত সত্য হলো এই যে চিন্তাভাবনা একটা শিক্ষণীয় যোগ্যতা এবং এই যোগ্যতা অর্জন করার জন্য অনুশীলনের প্রয়োজন রয়েছে। সমালোচনামূলক চিন্তা আমাদের মাঝে যথাযথ যুক্তি প্রয়োগ করা, সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করা, অন্যদের সঙ্গে উন্নত ও প্রভাবশালী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বোপরি উত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা শক্তিশালী করে। সমালোচনার এই যোগ্যতা বা ক্ষমতা তথ্যের বিপুল ভাণ্ডার থেকে বিশুদ্ধ তথ্য বেছে নেয়ার কাজকে সহজ করে তোলে।  

আমাদের একটা আপত্তিকর ভুল হলো বহু সমস্যা বা বিষয়কেই আমরা কোনোরকম বিচার বিশ্লেষণ না করে,ভালোভাবে উপলব্ধি না করেই তার সমালোচনা করে বসি কিংবা প্রতিবাদ করে বসি। অথচ যে-কোনো কিছুকেই প্রত্যাখ্যান করা কিংবা সমালোচনা করার বিষয়টি নির্ভর করে সেই জিনিসকে উপলব্ধি করার ওপর। সবার আগে উচিত হলো এ ব্যাপারটি শনাক্ত করা যে বস্তুটির পক্ষে দেয়া সাফাই কতোটা যুক্তিনির্ভর আর কতোটা অযৌক্তিক। যে যুক্তি দেখাচ্ছে তার স্বার্থই বা কতোটা নিশ্চিত হচ্ছে। এ কারণেই সমালোচনা করা বা মূল্যায়ন করার আগে উচিত হলো সমালোচনার সঠিক পদ্ধতিটা জানা। যাতে সমাজে সমালোচনা গ্রহণ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে সুন্দর ও পবিত্র মেজাজের লোক কিংবা চিন্তাশীল মানুষেরা যেন সমালোচনা গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নিজেদের উন্নয়ন ও সৌভাগ্য অর্জনের পথ সুগম করতে পারে।

পবিত্র কুরআনে মূল্যায়ন বা সমালোচনা শব্দগুলো হুবহু আসে নি। তবে অনেক আয়াতে এ বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কুরআন হচ্ছে হিদায়াত এবং প্রশিক্ষণমূলক গ্রন্থ। যেখানেই মানুষ বাঁকা পথের দিকে গেছে কিংবা পথ থেকে সরে গেছে সেখানেই তাদের সমালোচনা করা হয়েছে। সূরা সফ-য়ের দুই নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:  "হে মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা করো না?"

কুরআনের এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মূলত কথার সঙ্গে কাজের অমিলের সমালোচনা করেছেন যাতে মানুষ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করে। এ বিষয়টির জন্য আত্মগঠন প্রয়োজন। আর আত্মগঠনের জন্য প্রয়োজন নিরন্তর অনুশীলন। এই অনুশীলন হয়তো সারাজীবন ধরেই করতে হতে পারে। তারপরও চেষ্টা করতে হবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করার শক্তি অর্জনে আমাদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো।

পবিত্র কুরআন অন্যত্র সুন্দর ও উত্তম কথা বা বক্তব্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। সেইসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে অনেক কথার মধ্য থেকে মনোযোগের সঙ্গে সর্বোত্তম কথাকে যেন বেছে নেয়। সেজন্য বিদ্যমান বক্তব্যগুলোকে ভালো করে  যাচাই বাছাই করে, পর্যালোচনা করে, যথাযথ মূল্যায়ন করে বক্তব্যের ভালো-মন্দ, শক্তিশালী ও দুর্বল দিকগুলো বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে ভালো যেটা সেটাকেই যেন নির্বাচন করা হয়। এটাই হলো সেই ভালো-মন্দ আর দুর্বল সবলের স্তুপ যেই স্তুপ থেকে আমরা ভালোকে বেছে নেয়াকে বলেছিলাম সমালোচনা। আর সেই ভালোর অনুসরণ করাকে উত্তম বলেছিলাম। পবিত্র কুরআনের সূরা আয-যুমারের ১৭ এবং ১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: হে নবী (সা)! আমার সেসব বান্দাদের সুসংবাদ দিয়ে দাও! যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে এবং তার ভাল দিকটি অনুসরণ করে! #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো:আবুসাঈদ/ ০৩

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ