সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০ ১৭:০০ Asia/Dhaka

জীবনযাপনের ইসলামি পদ্ধতি ও দিক নির্দেশনা বিষয়ক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান “আদর্শ জীবনযাপনের" আজকের আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। ইসলামে কর্মকে ইবাদাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে কাজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটি রয়েছে তা হলো এমন কাজ করতে হবে যার মাধ্যমে অর্জিত আয় হবে পবিত্র ও হালাল। আর এই হালাল রুজির সন্ধান করাটাই ইবাদাতের সমতুল্য।

প্রকৃতপক্ষে কষ্টার্জিত হালাল রুজি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি এতে তার মন-মানসিকতা ও চরিত্রও হয় উন্নত। সে হয় কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্বশীল। হালাল রুজির অধিকারী ব্যক্তির  হৃদয় হয় উদার এবং তার বাহ্যিক আচার-আচরণও হয় মার্জিত ও প্রশংসিত। হালাল উপার্জনকারী অপরের হিতাকাঙ্ক্ষী যেমন হয় তেমনি হয় পরোপকারীও। পক্ষান্তরে যে অবৈধ উপায়ে রুজি করে তার স্বাস্থ্য,মন-মানসিকতা ও চরিত্র সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন-এই প্রত্যাশায় শুরু করছি আজকের আলোচনা।

কুরআনের সংস্কৃতিতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার সকল সৃষ্টির জন্য হালাল রুজি নিশ্চিত করেছেন। অতএব মানুষ ধৈর্য্য ও অল্পে তুষ্টির মানসিকতা লালন করে তার জন্য নির্ধারিত হালাল রুজি গ্রহণ করতে পারে।কিন্তু তার মানে এই নয় যে কাজকাম ছেড়ে দিয়ে হালাল রুজির উৎস সন্ধানে পড়ে থাকতে হবে। কারণ আল্লাহ পাক কোনো কিছুর উসিলাতেই রুটি-রুজির ব্যবস্থা করেন। পবিত্র কুরআনের সূরা হুদের ৬ নম্বর আয়াতে যেমনটি বলা হয়েছে:ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যার রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর বর্তায় না এবং যার সম্পর্কে তিনি জানেন না,কোথায় সে থাকে এবং কোথায় তাকে সোপর্দ করা হয়-সবকিছুই একটি পরিষ্কার কিতাবে লেখা আছে।

পূত পবিত্র ও হালাল রুজির পথে চেষ্টা প্রচেষ্টা চালানো অন্যের মুখাপেক্ষি না করার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি ছাড়াও এই মনস্তুষ্টি পাওয়া যায় অন্তত কারও ঘাড়ের বোঝা হয়ে থাকতে হয় না। উল্টো বরং হালাল রুজি অর্জনের চেষ্টা করলে রুজিতে বরকত হয়,নীতি-নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটে এবং পরিবার ও সমাজে মানুষের সহানুভূতি আকৃষ্ট হয়।সবাই তার ওপর সন্তুষ্ট থাকে।এইসব চেষ্টা প্রচেষ্টার একটি হলো ব্যবসা বাণিজ্য। ব্যবসা একটি হালাল রুজির মাধ্যম।ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে হালাল রুটি রুজির উৎস হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ২৭৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: 'আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন'।

ইসলামের দৃষ্টিকে হালাল রুটিরুজির মাধ্যম ব্যবসার কথা বলছিলাম আমরা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে মানুষের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলেছেন তারা যেন অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যাপারে উৎসাহী হয় এবং বিশেষ করে সমুদ্র পথে বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হয়। আল্লাহ সেই ব্যবস্থা মানুষের জন্য তৈরি করে রেখেছেন।বলাবাহুল্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখনও সমুদ্র পথই উত্তম।পবিত্র কুরআনের সূরা ফাতেরের ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:'এবং এ পানির মধ্যে তোমরা দেখতে পাও নৌযান তার বুক চিরে ভেসে চলছে,যাতে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া রুটি রুজির সন্ধান কর এবং তার প্রতি কতৃজ্ঞ হও'।

নি:সন্দেহে এই সমুদ্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে জ্ঞান, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, বিশেষ যোগ্যতা এবং দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। একজন মুসলমান ব্যবসায়ীকে বাণিজ্যের নিয়ম-কানুনসহ এ বিষয়ে ধর্মীয় নীতিমালা ও মানদণ্ড সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। বাণিজ্যিক চুক্তি এবং চুক্তির নিয়ম ও ধারাগুলো সম্পর্কে যেমন জ্ঞান রাখতে হবে তেমনি বিশ্ব বাজারের বৈশিষ্ট্য এবং কোন দেশের কোথায় কোন জিনিস উৎপাদন হয়, কীভাবে সেগুলো সংগ্রহ করে বিশ্বের কোথায়, কোন বাজারে নিয়ে গেলে ব্যবসায়িকভাবে সাফল্য আসতে পারে-ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্যসহ স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রযুক্তির জগতে বিপ্লব সৃষ্টি হবার ফলে বর্তমান সময়ে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা আগের চেয়ে আরও বেশি জরুরি।

অর্থনৈতিক জ্ঞান সম্পর্কে যার ধারণা নেই সে উল্টাপাল্টা বাণিজ্যিক তৎপরতা চালিয়ে নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেইসঙ্গে পুরো সমাজকেই বিপদের মুখে ঠেলে দেয়। এ কারণে পবিত্র কুরআন মূর্খ লোকের হাতে মালামাল সোপর্দ করা বা সংরক্ষিত রাখা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। সূরা নিসার পাঁচ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:  'আর যে ধন-সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন ধারণের মাধ্যমে পরিণত করেছেন, তোমরা তা নির্বোধদের হাতে তুলে দিয়ো না। তবে তাদের খাওয়া পরার ব্যবস্থা করো এবং সদুপদেশ দাও'। তার মানে অর্থ কিংবা সম্পদ বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে এবং সফল বাণিজ্যিক তৎপরতার স্বার্থে জ্ঞানী এবং দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিতে হবে-এটাই কুরআনের শিক্ষা।

পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর যে বান্দা কর্মঠ এবং পবিত্র ও হালাল রুটি রুজির জন্য চেষ্টা প্রচেষ্টা চালায়, সে যেন প্রকৃতপক্ষে তার স্রষ্টা মহান আল্লাহর গুণেরই অনুকূল বৈশিষ্ট্যে ভূষিত হলো। শুধু তাই নয় সে যেন আল্লাহর দ্যুতি নিজের মাঝে বিকিরণ করলো। এ বক্তব্য থেকে এরকম ধারনা করা অসমীচিন হবে না যে কাজ মানে নুর, বরকত এবং সৌন্দর্যের প্রকাশ। বিখ্যাত সাহিত্যিক খলিল জিবরান বলেছেন: কাজ যখন ভালোবেসে করবে তখন নিজের আত্মার একান্ত আত্মীয় অর্থাৎ এক আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। হালাল ও পূত পবিত্র ব্যবসা-বাণিজ্য করার মধ্য দিয়ে আমরা যেন সেই সৌভাগ্য লাভ করতে পারি-এই হোক আমাদের পারস্পরিক প্রত্যাশা।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো:আবুসাঈদ/ ২৩

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ