অক্টোবর ২৮, ২০২০ ১৬:৫৩ Asia/Dhaka

ইয়াযদ প্রদেশের হস্তশিল্প ও তাঁত শিল্পের সঙ্গেও আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেইসঙ্গে ইয়াযদের কুলার সিস্টেম নিয়েও কথা বলার চেষ্টা করেছি। আজ আমরা আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো ইয়াযদ প্রদেশের ঐতিহাসিক একটি বাগিচা দৌলতাবাদ এবং সেই বাগিচার অভ্যন্তরে ঐতিহাসিক স্থাপনা ও বিশেষ ভবনের অবিশ্বাস্যরকম বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থার সঙ্গে।

ইয়াযদে এতো বেশি ঐতিহাসিক স্থাপনা ও নিদর্শন রয়েছে যে জাঁকজমকপূর্ণ এইসব স্থাপনা পর্যটকদের স্মৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বিদেশী পর্যটকরা যারা ইয়াযদ প্রদেশে বেড়াতে এসেছেন তাঁরা তাঁদের স্মৃতিকথায় এই শহরটিকে দর্শনীয় গন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং ইরান ভ্রমণে এসে ইয়াজদ ভ্রমণ না করাটা পুরো সফরটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন। ইয়াজদ শহরটি বরাবরই ইরানীদের মধ্যে "বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থার শহর" নামে পরিচিত ছিল।  বেশিরভাগ বায়ু সঞ্চালন সিস্টেমই পুরোনো শহরের আবাসিক  এলাকায় লক্ষ্য করা যায়। দৌলতাবাদ উদ্যানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বায়ুপ্রবাহ সিস্টেমটি অবস্থিত।

ইরানের অন্যতম সুন্দর একটি ঐতিহাসিক উদ্যান হলো এই দৌলতাবাদ উদ্যান। ইয়াজদ শহরে যেহেতু আমরা এসেই পড়েছি সুতরাং দৌলতাবাদ বাগান দেখার সুযোগ হাত ছাড়া করা কিছুতেই উচিত হবে না। কেননা ইরানের যে নয়টি উদ্যান ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এই দৌলতাবাদ উদ্যানও একটি। আগেই বলেছি যে ইয়াযদ প্রদেশটি মরু অঞ্চলে অবস্থিত। সুতরাং মরু অঞ্চলে যা হয়-বাগ-বাগিচা একটু কমই দেখা যায়। কেননা মরু অঞ্চলে পানির সংকুলান তেমন সুবিধার নয়। সে কারণে যেখানেই কোনো বাগিচা গড়ে উঠেছে সেই বাগিচা ইয়াযদের স্থপতি বা প্রকৌশলীদের বিশেষ দক্ষতা ও মেধার বহিপ্রকাশ বৈ ত নয়। ইয়াযদের এরকম কয়েকটি বাগিচার নাম হলো: দৌলতাবাদ, বগে খান, বগে মাশির, বগে গোলে কর, বগে মাহমুদিয়ে, বগে পাহলাভন পুর মেহরিজ, বগে তিতু বফাক, বগে হফেজি তেজেরজান এবং বগে গুলশান তাবাস।  

দৌলতাবাদ গার্ডেন স্থাপনাটি যান্দিয়া এবং আফশারিয়া রাজবংশের শাসনামলের নিদর্শন। এগারো শ ষাট হিজরিতে মুহাম্মাদ ত্বকি খান বফাকি যিনি বড় খান নামে সুপরিচিত, তাঁর গৃহীত পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ফুলে ফলে আর নানা রকমের গাছ গাছালিতে পূর্ণ বাগিচার ভেতরে গড়ে ওঠা এই স্থাপনাটির সৌন্দর্যই অন্যরকম। বিশেষ করে যারা এই বাগানে বেড়াতে যাবেন তারা আঙুর এবং আনারের সৌন্দর্যে বিমোহিত হবেন নিশ্চয়ই। এই ভবনের একটি বৃহৎ ফটক মানে প্রধান প্রবেশ দ্বার রয়েছে। রয়েছে দুমুখো পানির হাউজ, আয়নার কারুকার্জ করা অডিটোরিয়াম ইত্যাদিও। দুটি ভবন রয়েছে এখানে। একটি ভবনে গ্রীষ্মকালের জন্য অপরটি শীতকালের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে।

দৌলতাবাদ গার্ডেন স্থাপনার বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থা দুই শ সত্তর বছর আগের। ইয়াযদের স্থানীয় প্রকৌশলীদের মাধ্যমে নির্মিত বিশ্বের সর্বোচ্চ ভেন্টিলেশন সিস্টেমটির উচ্চতা তেত্রিশ মিটার আশি সেন্টিমিটার। স্থাপনাটির বিশেষত্ব হলো এটি আট কৌণিক। এর ফলে যে-কোনো দিক থেকেই বাতাস আসুক না কেন সহজেই ভবনের ভেতরে একেবারে বেইজমেন্ট পর্যন্ত চলে যেতে পারে। সেখানে ভেন্টিলেশন সিস্টেমের নীচে নির্মিত পানির হাউজে গিয়ে বাতাস ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং সেই ঠাণ্ডা বাতাস সারা ভবনে সরবরাহ হয়ে পরিবেশ ঠাণ্ডা এবং উপভোগ্য করে রাখে। নি:সন্দেহে মরু এলাকায় এ ধরনের একটি সিস্টেম তৈরি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা।

দৌলতাবাদ বাগিচার গুরুত্ব কোথায়? এ জিজ্ঞাসার জবাবে বলা যেতে পারে জান্দিয়া শাসকদের শাসনকালে কারিম খান যান্দ এই ভবনে বসবাস করতেন। এই বাগিচার মূল কামরার প্রবেশদ্বার ছোট ছোট রঙিন কাঁচ দিয়ে সাজানো হয়েছে। ভবনের সবগুলো দরোজাই আঙিনার দিকে মুখ করে বানানো। সকালে সূর্য ওঠার সময় রশ্মি এসে পড়ে আঙিনার হাউজের ওপর। হাউজের পানিতে সূর্যের কিরণের প্রতিচ্ছবি গিয়ে পড়ে রঙীন কাঁচের দরোজায়। স্বাভাবিকভাবেই অভূতপূর্ব এক মনোরম দৃশ্যের অবতারণা ঘটে তখন। ওই দৃশ্য এতোই উপভোগ্য যে যে কারুরই চোখ জুড়িয়ে যায়। এইসব বৈশিষ্ট্যই দৌলতাবাদ বাগিচাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এখানে বলে রাখা ভালো যে দুই হাজার এগারো খ্রিষ্টাব্দে এই দৌলতাবাদ প্রাসাদটিকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। তা হলো ইয়াযদ প্রদেশে জরথ্রুস্টদের একটি বিশাল গ্রুপ বসবাস করে। এ কারণে এই শহরের বেশ কিছু স্থাপনা ও নিদর্শনের সঙ্গে জরথ্রুস্টদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ইয়াযদের ঐতিহাসিক অতাশকাদেহ বা অগ্নিমন্দির সেরকমই একটি নিদর্শন। শহরের বাইরেও জরথ্রুস্ট ধর্মাবলম্বিদের গোরস্তানের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় যা ভ্রমণকারীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় একটি স্থাপনা।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।