নভেম্বর ০৯, ২০২০ ১৬:৩০ Asia/Dhaka

আজ আমরা পবিত্র ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা) সম্পর্কে বিশ্বের বেশ কয়েকজন নামকরা মনীষীর বক্তব্য ও মন্তব্য শুনব।

ইতিহাসে মহামানব হযরত মুহাম্মদ সা.- এর অবস্থান যে কতটা গৌরবদীপ্ত তা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছিলেন যে, “মুহাম্মদের ধর্মই আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়। অতঃপর মহানবী সা. এর অনুপম চরিত্র ও বহুমুখী প্রতিভায় আকৃষ্ট এবং অভিভূত হয়ে তিনি এই মর্মেও আশা প্রকাশ করেন যে, “সে সময় খুব দূরে নয় যখন সকল দেশের বিজ্ঞ ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের আমি একতাবদ্ধ করতে পারব এবং কুরআনের যে নীতিসমূহ একমাত্র সত্য এবং যে নীতিসমূহই মানুষকে সুখের পথে পরিচালিত করতে পারে সে সব নীতির ওপর ভিত্তি করে এক সমরূপ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।

ইংরেজ কবি জন কিটস্ বলেন, ‘‘পৃথিবীর যা কিছু মঙ্গলময়, যা কিছু মহৎ ও সুন্দর সবই নবী মুহাম্মদ সা.। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।’’

বিখ্যাত মার্কিন লেখক মাইকেল এইচ হার্ট বলেছেন: মুহাম্মদকে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেয়াটা অনেক পাঠককে আশ্চর্যান্বিত করতে পারে এবং অন্যদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পার্থিব এবং ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন। সম্ভবত ইসলামের ওপর মুহাম্মদের তুলনামূলক প্রভাব খ্রিস্টান ধর্মের ওপর যিশু ও সেইন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের চেয়েও বেশি।… আমি মনে করি, ধর্মীয় ও পার্থিব উভয়ক্ষেত্রে প্রভাবের এই বিরল সমন্বয়-যোগ্য ব্যক্তি হিসেবেই মুহাম্মদকে মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত করেছে। Michael H. Hart in ‘The 100, A Ranking of the Most Influential Persons In History,’ New York, 1978.

মহানবী সা. সম্পর্কে আরো একটি বলিষ্ঠ স্বীকৃতি উচ্চারিত হয়েছিল বিখ্যাত পশ্চিমা মনীষী টমাস কার্লাইলের কণ্ঠে। ১৮৪০ সালে এডিনবার্গে আয়োজিত একটি সভায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি ঘোষণা করেন যে, “শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যেই নয়, খোদার প্রেরিত দূত বা নবীদের মধ্যেও নায়কের স্থান অধিকার করে রয়েছেন সুদূর আরবের হযরত মুহাম্মদ সা.।” অতঃপর তিনি তাঁর প্রাঞ্জল অনুপম ভাষায় আরো বলেন, “জগতের আদিকাল হতে আরবরা মরুভূমির মধ্যে বিচরণ করে বেড়াত এক অজ্ঞাত, অখ্যাত মেষপালকের জাতি হিসেবেই। অতঃপর তারা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে এমন একটা বার্তাসহ সেখানে এক ধর্মবীর পয়গম্বর প্রেরিত হলেন, আর অমনি জাদুর মতো সেই অখ্যাত জাতি হয়ে উঠল জগদ্বিখ্যাত, দীনহীন জাতি হয়ে গেল জগতের শ্রেষ্ঠ জাতি। তারপর এক শতাব্দীর মধ্যে পশ্চিমে গ্রানাডা হতে পূর্বে দিল্লি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হলো আরবদের আধিপত্য। সুদীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরে পৃথিবীর এক বিশাল অংশের ওপর আরবদেশ মহাসমারোহে এবং বিক্রমের সাথে তার দ্যূতি বিকিরণ করেছে।

ফরাসি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ও ইতিহাসবিদ প্রফেসর লা মার্টিন তার ‘তুরস্কের ইতিহাস’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “কার এমন ধৃষ্টতা আছে যে, ইতিহাসের অন্য কোন মহামানবের সাথে হযরত মুহাম্মদ সা. এর তুলনা করতে পারে? প্রায় সব বিখ্যাত মানুষ যদি কিছু অর্জন করেই থাকে তা তো জাগতিক শক্তি-সামর্থ্য বৈ কিছুই নয়, যা প্রায় ক্ষেত্রে তাদের সম্মুখেই টুকরো টুকরো হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই মহামানব (হযরত মুহাম্মদ সা.) কেবল সেনাবাহিনীই পরিচালনা করেননি, আইনই কেবল প্রণয়ন করেননি, রাজ্যই কেবল প্রতিষ্ঠা করেননি, জনসাধারণকেই কেবল সুসংগঠিত করেননি, কেবল খিলাফতের ধারাবাহিকতাই স্থাপন করেননি,  এসব ছাড়াও তিনি সেই সময়কার জানা দুনিয়ার তিন ভাগের এক ভাগ অথবা ততোধিক জনপদের লাখ লাখ অধিবাসীর জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন।

প্রফেসর লা মার্টিন তার ‘তুরস্কের ইতিহাস’ গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেছেন, মুহাম্মাদ সেই সময়কার জানা দুনিয়ার তিন ভাগের এক ভাগ অথবা ততোধিক জনপদের লাখ লাখ অধিবাসীর জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে তাদেরকে উদ্ধার করেছেন কল্পিত দেব- দেবীর খপ্পর থেকে। তাদের ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসে এনেছেন পরিবর্তন। তাদের আত্মা ও মননকে করেছেন বিকশিত।একটি মহাগ্রন্থের ভিত্তিতে নির্মাণ করেছেন এক অনন্য আধ্যাত্মিক জাতীয়তা যা প্রত্যেক ভাষার মানুষকে, প্রত্যেক গোত্রের মানুষকে এক অনন্য ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করে। সেই মহাগ্রন্থের প্রতিটা অক্ষর পরিণত হয়েছে আইনে। দার্শনিক, সুবক্তা, রাসূল, আইন প্রণয়নকারী, বীরযোদ্ধা, নিরাকারের ইবাদত আনয়নকারী, কুড়িটি জাগতিক সাম্রাজ্যের এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাকারী হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ সা.। মানুষের বিরাটত্ব ও মহত্ত্ব পরিমাপের তাবৎ মানদন্ড একত্র করে আমাদের শুধু একটিমাত্র প্রশ্ন : তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কোন মানুষ কি আর কোথাও আছেন?

প্রফেসর লা মার্টিন মহানবী (সা) সম্পর্কে আরো লিখেছেন, তিনি ছিলেন বিনম্র তবু নির্ভীক, শিষ্ট তবু সাহসী। তিনি ছিলেন সবচেয়ে সম্মানিত, সবচেয়ে উন্নত, বরাবর সৎ, সর্বদাই সত্যবাদী, শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসী এক প্রেমময় স্বামী, এক হিতৈষী পিতা, এক বাধ্য ও কৃতজ্ঞ পুত্র, বন্ধুত্বে অপরিবর্তনীয় এবং সহায়তায় ভ্রাতৃসুলভ, দয়ার্দ্র, অতিথিপরায়ণ, উদার এবং নিজের জন্য সর্বদাই মিতাচারী। কিন্তু তিনি কঠিন ছিলেন মিথ্যা শপথের বিরুদ্ধে, ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে। কঠিন ছিলেন খুনি, কুৎসাকারী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা এ ধরনের লোকদের বিরুদ্ধে। ছিলেন ধৈর্যে, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারিতায়, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং নিয়মিত আল্লাহর প্রার্থনা অনুষ্ঠানে এক মহান ধর্ম প্রচারক। #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ