নভেম্বর ১৭, ২০২০ ১৬:২৫ Asia/Dhaka

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি মনে করেন মহানবীকে (সা) স্মরণ করার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয় যেন হযরত ইব্রাহিম, নুহ, মুসা, ঈসা, লোকমান এবং সব বিখ্যাত সৎ ব্যক্তি, আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ) এবং সত্য পথ প্রদর্শনকারী পবিত্র ইমামদের (আ) ব্যক্তিত্বই এই পবিত্র মহামানবের মধ্যে ফুটে ওঠে।

আসলে এমন কোনো মহতী মানবীয় গুণ নেই যার শীর্ষে বা আদর্শিক শিখরে ছিলেন না মহানবী (সা)। তিনি ছিলেন নবী ও রাসুলদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল। তাঁর অনুপম চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের পরিধি বা ধারণক্ষমতা ছিল সীমাহীন। ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচারকামিতা, আমানতদারি বা বিশ্বস্ততা, দয়া, সাহসিকতা ও ঈমানে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ। তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত সব দিকেই এবং মূল্যবোধের সব ক্ষেত্রেই পরিপূর্ণ আদর্শ মানব।

ঐতিহাসিক লেনপুল বিশ্বনবী (সা) সম্পর্কে বলেছেন:

তিনি যাদেরকে আশ্রয় দিতেন তাদের জন্য ছিলেন সবচেয়ে বিশ্বস্ত রক্ষাকারী, কথাবার্তায় ছিলেন অত্যন্ত মিষ্টভাষী ও নম্র। তাঁকে যারা দেখত তারা শ্রদ্ধায় পূর্ণ হতো; যারাই তাঁর কাছে এসেছিল তাঁকে ভালোবেসেছিল; যারা তাঁর সম্বন্ধে বর্ণনা দিত তারা বলতো, “তাঁর মতো মানুষ আগে বা পরে আমি কখনো দেখিনি।” তিনি ছিলেন অতি স্বল্পভাষী, কিন্তু যখন তিনি কথা বলতেন জোরের সাথে এবং সুচিন্তিতভাবে কথা বলতেন। এবং তিনি যা বলতেন তা কেউ ভুলতে পারতো না।

আলফানসে লা মার্টিন বলেছেন:  উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব, লক্ষ্য অর্জনের উপায়সমূহের ক্ষুদ্রতা এবং আশ্চর্যজনক ফলাফল যদি অসাধারণ মানুষের তিনটি বৈশিষ্ট্য হয় তবে কে মুহাম্মদের সাথে ইতিহাসের অন্য কোন মহামানবের তুলনা করতে সাহস করবে? বেশির ভাগ বিখ্যাত ব্যক্তি শুধুমাত্র সেনাবাহিনী, আইন এবং সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন। তাঁরা যদি কিছু প্রতিষ্ঠা করে থাকেন সেটা কিছুতেই জাগতিক ক্ষমতার চাইতে বেশি কিছু নয় যা প্রায়ই তাদের চোখের সামনে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই মানুষটি শুধুমাত্র সেনাবাহিনী, আইন, সাম্রাজ্য, শাসক, লোকবলই পরিচালনা করেননি সেইসাথে তৎকালীন বিশ্বের লক্ষ-লক্ষ মানুষের জীবনকে আন্দোলিত করেছিলেন; সবচেয়ে বড় কথা হলো তিনি দেব-দেবী, ধর্মগুলো, ধারণাগুলো, বিশ্বাসগুলো এবং আত্মাগুলোকে আন্দোলিত করেছিলেন।দার্শনিক, বাগ্মী, বার্তাবাহক, আইনপ্রণেতা, নতুন ধারণার উদ্ভাবনকারী ও বাস্তব রূপদানকারী, বাস্তব বিশ্বাসের পুনরুদ্ধারকারী…বিশটি জাগতিক এবং একটি আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা-এই হলো মুহাম্মদ। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের সমস্ত মাপকাঠির ভিত্তিতে বিবেচনা করলে আমরা প্রশ্ন করতে পারি- মুহাম্মদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ আছে কি?

জার্মানির প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, পন্ডিত ড. গুস্তাভ উইল মহানবী সা.কে বিশ্বে আইনদাতা ও সমাজ সংস্কারের মূর্তপ্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্য একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ স্টানলি লেনপুল বলেছেন, ধর্ম ও সাধুতার প্রচারক হিসেবে মুহাম্মদ সা. যে রকম শ্রেষ্ঠ ছিলেন, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও ছিলেন অনুরূপ শ্রেষ্ঠ। তিনি অদ্ভুত শক্তিতে, হৃদয়ের উষ্ণতায়, অনুভূতির মাধুর্য ও বিশুদ্ধতায় ছিলেন বিশিষ্ট। জীবনে কখনো কাউকে তিনি আঘাত করেননি। তিনি (মুহাম্মদ) বলেছিলেন, ‘কাউকে অভিশাপ দেয়ার জন্য আমি প্রেরিত হইনি, প্রেরিত হয়েছি বিশ্বজাহানের জন্য রহমত স্বরূপ”,  

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এডওয়ার্ড গিবন বলেন, ‘‘আশ্রয়প্রার্থীর জন্য বিশ্বস্ততম রক্ষাকারী ছিলেন মুহাম্মদ সা.। কথাবার্তায় সবচেয়ে মিষ্টভাষী, সবচেয়ে মনোজ্ঞ, তাকে যারা দেখেছেন তারা আবেগাপ্লুত হয়েছেন অপ্রত্যাশিতভাবে। যারা কাছে এসেছে তারা তাঁকে ভালোবেসেছেন। পরে তারা বিবরণ দিয়েছেন তাঁর মতো মহামানব আগে কখনো দেখিনি, পরেও না। মুহাম্মদ সা. এর স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর গভীর, তাঁর রসিকতা ছিল শালীন। তাঁর কল্পনা ছিল উন্নত ও মহৎ। তাঁর বিচার বুদ্ধি ছিল তীক্ষ । জাগতিক শক্তির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেও মুহাম্মদ সা. নিজ গৃহের কাজগুলোও করতেন। তিনি আগুন জ্বালাতেন, ঘর ঝাড়ু দিতেন, দুগ্ধ দোহন করতেন এবং নিজ হাতে কাপড় সেলাই করতেন। তাঁর আনীত ধর্ম বিধান সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রযোজ্য।’’

প্রফেসর ফিলিপ কে হিট্টি আরব জাতি ও দেশ নিয়ে অনেকগুলো তথ্যপূর্ণ ইতিহাস গ্রন্থ লিখেছেন। তিনি মহানবী সা. সম্পর্কে বলেছেন, “মুহাম্মদ সা. তাঁর স্বল্প পরিসর জীবনে অনুল্লেখযোগ্য জাতির মধ্য হতে এমন একটি জাতি ও ধর্মের গোড়াপত্তন করলেন যার ভৌগোলিক প্রভাব খ্রিস্টান ও ইহুদিদেরকেও অতিক্রম করলো। মানবজাতির বিপুল অংশ আজও তাঁর অনুসারী। অমায়িক ব্যবহার, অনুপম ভদ্রতা ও মহৎ শিক্ষার দ্বারা তিনি আরব জাতির অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। মহত্ত্ব, সহানুভূতি ও বদান্যতার মাধ্যমে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেন। তিনি ন্যায়ের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কখনো ন্যায়নীতি ও পুণ্যতার পথ পরিহার করেননি। তিনি ওয়াদা খেলাফ করেননি বা কাউকে প্রতারিত করেননি। এমনকি তার আজীবন শত্রু, যারা তাকে দেশ হতে বের করে দিয়েছিল এবং সমগ্র আরব জাতিকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল চূড়ান্ত বিজয়ে তিনি প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। ব্যক্তিগত আক্রোশে তিনি কখনো কাউকে শাস্তি দেননি। সমগ্র দেশের শাসনকর্তা হয়েও তিনি আগের মতই দারিদ্র্যপূর্ণ জীবন-যাপন করতেন। ফলে মৃত্যুকালে তাঁর উত্তরসূরিদের জন্য কিছুই রেখে যাননি।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে নারীর মর্যাদা রক্ষার জন্য যিনি প্রথম সোচ্চার হয়ে ওঠেন, মানবজীবনে নারীর অধিকার পূর্ণভাবে যিনি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি হলেন মহানবী সা.। এ ব্যাপারে মনীষী পিয়েরে ক্রাবাইট বলেন, “মুহাম্মদ সা. সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে নারী অধিকারের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন।” গিব তাঁর ‘‘মুহাম্মডেনিজম” শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, ‘আজ এটা এক বিশ্বজনীন সত্য যে, মুহাম্মদ সা. নারীদেরকে উচ্চতর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন।” ডব্লিউ ডব্লিউ কেশ লিখেছেন, “প্রথমবারের মত ইসলামই নারীদের মানবাধিকার দিয়েছে। দেহ ব্যবসার জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। মদকে হারাম ও জুয়া খেলাকে মহাপাপ গণ্য করেছে।

 প্রখ্যাত মনীষী জন ডেভেনপোর্ট বলেছেন,

‘ইসলাম কখনো অন্য কোন ধর্মমতে হস্তক্ষেপ করেনি। কখনো ধর্মের জন্য নির্যাতন, ধর্মমত বিরোধীদের দন্ডের ব্যবস্থা কিংবা দীক্ষা ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করেনি। ইসলাম তার মত বা বক্তব্য জগতের সবার সামনে তুলে ধরেছে কিন্তু কখনো কাউকে তাঁর মত গ্রহণে বাধ্য করেনি। ইসলাম আশপাশের দেশগুলোতে তৎকালে প্রচলিত শিশুহত্যা ও আরবের দাসত্বপ্রথা তিরোহিত করেছে এবং কেবল এর অনুসারীদের ওপরই নয়, বাহুবলে বিজিত সবার ওপরই নিরপেক্ষ বিচার স্থাপন করেছে।’ #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ