নভেম্বর ২৫, ২০২০ ১৭:১০ Asia/Dhaka

আজ আমরা মহানবী (সা) সম্পর্কে মূলত বিশিষ্ট প্রাচ্যবিদ জন ডেভেনপোর্ট-এর মন্তব্য তুলে ধরব।

শত শত বছর ধরে ইসলামের শত্রুরা ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে যাতে ইসলামের মহানবীর (স) শ্রেষ্ঠত্ব অমুসলিম বিশ্বের জনগণের কাছে গোপন থাকে। কিন্তু তাদের সেই দুরাশা সফল হয়নি। বরং দিনকে দিন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এই শ্রেষ্ঠ মহামানবের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। তাই তো আমরা দেখি ইংরেজ কবি জন কিটস্ বলেন, ‘‘পৃথিবীর যা কিছু মঙ্গলময়, যা কিছু মহৎ ও সুন্দর সবই নবী মুহাম্মদ সা.’র মধ্যে রয়েছে। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই।’’

১৯৩৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা. উপলক্ষে দেয়া এক শুভেচ্ছা বাণীতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘‘যিনি মহত্তমদের মধ্যে অন্যতম, সেই পবিত্র পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ সা. এর উদ্দেশ্যে আমি আমার অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি। মানুষের ইতিহাসে এক নতুন সম্ভাবনাময় জীবনশক্তির সঞ্চার করেছিলেন হযরত মুহাম্মদ সা.। তিনি এনেছিলেন নিখাঁদ, শুদ্ধ ধর্মাচরণের আদর্শ।

ইরানের প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক এবং সংগ্রামী আলেম শহীদ অধ্যাপক আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোতাহ্‌হারি বলেছেন: ইসলামী কোনো বিষয়ে যখন কেউ সন্দেহ ও আপত্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেন তখন অন্য অনেকের বিপরীতে আমি ইসলাম ধর্ম ও মহানবীর প্রতি আমার সার্বিক অনুরাগ ও বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও আমি কখনও মনক্ষুন্ন হই না বরং খুশি হই। কারণ আমার বিশ্বাস এবং অভিজ্ঞতায়ও দেখেছি যে আসমানি পবিত্র ধর্ম ইসলাম যুদ্ধের যে ময়দানেই সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হয় সে ময়দানেই সবচেয়ে শক্তিশালী, মহিমান্বিত বা গৌরবোজ্জ্বল ও বেশি সমৃদ্ধ হয়ে দেখা দেয়।

প্রখ্যাত ইংরেজ মনীষী জন ডেভেনপোর্ট ইসলাম ও মহানবীর (সা) জীবনী নিয়ে একটি বই লিখে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন। মুহাম্মাদ (সা) ও কুরআনের প্রতি একটি ক্ষমা প্রার্থনা বা দুঃখ প্রকাশ শীর্ষক তাই বইটি ১৮৬৯ সনে লন্ডন থেকে প্রকাশ হয়েছিল। বইটির ফার্সি অনূবাদও দেখা যায়। সে যুগের ইসলাম-বিদ্বেষী পরিবেশের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে ডেভেনপোর্ট মহানবীর ব্যক্তিত্ব ও বার্তাগুলোর বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন।  মহানবীর প্রতি অনেক অপবাদ দেয়া হয়েছে বলে তিনি তার বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন। তিনি মহানবীর আহ্বান বা দাওয়াতকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন, মহানবীর আহ্বান ছিল মানবজাতির জন্য সবচেয়ে কল্যাণকামী ও সৎকর্মশীলদের অন্যতমের পক্ষ থেকে।

ডেভেনপোর্টের মতে ‘আরবরা ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নানা গোত্রে বিভক্ত। তারা ছিল ক্ষুধার্ত ও নগ্ন। আর সেই আরবদেরকে মুহাম্মাদ (সা) একটি সুসংঘবদ্ধ ও অনুগত জাতিতে রূপান্তর করেছেন। বিশ্বের কাছে এই আরবরা নিয়ে এসেছে  নানা অভিনব মহতী গুণ ও বৈশিষ্ট্য। এইসব অভিনব গুণ নিয়ে আরব মুসলিম জাতি ত্রিশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কনস্টান্টিনোপল-ভিত্তিক পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য জয় করে এবং বিলুপ্ত করে ইরানি সাম্রাজ্য। মুহাম্মাদ নামক সেই মহানায়কের প্রতিভা ও উদ্দীপনা এবং প্রাণময়তা এমন এক শক্তিশালী ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে যে তা জরাথ্রুস্তের অনুসারীদেরকে কয়েকটি ক্ষুদ্র ও বিক্ষিপ্ত সমাজে সীমিত করেছে এবং ভারত বিজয়ের পর সাবেক ব্রাহ্মন ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে বিলুপ্ত করেছে। অথচ এ দুই সম্প্রদায় ব্যাপক সংখ্যায় সমৃদ্ধ হয়েছিল। ইসলাম দুই নদীর তীরের সিরিয়া ও মিশরকেও জয় করে এবং এর অব্যাহত বিজয় অভিযান আটলান্টিক মহাসাগর থেকে কাস্পিয়ান সাগরের তীর ও মধ্য এশিয়ার সিইর দরিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।   

জন ডেভেনপোর্টের মতে ‘মুহাম্মাদের (সা) ছিল আকর্ষণীয় নানা গুণ ও আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য। উদ্ধত ও দাম্ভিকসহ সব শ্রেণীর মানুষ তাঁর বিনয়ের সামনে গলে যেত। ফলে সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা করত এবং তিনি সবারই প্রশংসা পেতেন। মহানবীর যেসব যোগ্যতা ও প্রতিভা ছিল সেসবের কারণে তিনি নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হন। তিনি যদিও প্রচলিত পড়াশুনায় শিক্ষিত ছিলেন না তা সত্ত্বেও তিনি সবচেয়ে বুদ্ধিমান শত্রুকেও বিতর্কে হারিয়ে দিতেন এবং তাঁর চিন্তাধারা সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের সঙ্গী বা সাহাবিদের মধ্যেও গভীর প্রভাব ফেলত। মহানবীর ভাষা ও বক্তব্য ছিল সুমিষ্ট বাগ্মিতাপূর্ণ, বিশুদ্ধ ও সহজ এবং এসবের পাশাপাশি তাঁর বিনম্র ও আকর্ষণীয় চেহারা সবার মধ্যেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুরাগ জাগিয়ে তুলত। তাঁর মধ্যে ছিল এমনসব প্রতিভা যে বিশিষ্ট জ্ঞানী ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষ সবাই সমানভাবে তাঁর প্রভাবাধীন হত।  

ডেভেনপোর্ট আরও উল্লেখ করেছেন, মানুষের প্রতি মুহাম্মাদের আচরণ ছিল আন্তরিক বন্ধু, আত্মীয় ও সহকর্মীর মত। মানুষের প্রতি তাঁর আচরণে দয়া ও ভালবাসায় পরিপূর্ণ সুন্দরতম মানবীয় অনুভূতিগুলো ফুটে উঠত। মহানবী নিজেও দয়া ও কোমল অনুভূতিতে হতেন প্রভাবিত। তিনি বেশিরভাগ সামাজিক ও ঘরোয়া কাজ বা দায়িত্বগুলো নিজেই পালন করতেন এবং নবীর মর্যাদা রক্ষা করে চলতেন খুব সুচারুভাবে। ... তিনি যখন গোটা আরব উপদ্বীপের একচ্ছত্র অধিপতি তখনও নিজের জুতা ও কাপড়ে নিজেই তালি লাগাতেন। তাঁর খাবার ছিল সামান্য খেজুর, পানি ও দুধ। সফরে যেতেন কয়েকটি রুটি নিয়ে এবং সেসবও নিজ খাদেমের সঙ্গে ভাগ করে খেতেন।

মহানবীর এতসব মহতী গুণ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে নানা অপবাদ দেয়া হয়েছে। ডেভেনপোর্ট এর প্রতিবাদে লিখেছেন: যিনি এমনসব বড় সংস্কার সাধন করেছেন ও নিজ দেশে এনেছেন শান্তি বা স্থিতিশীলতা এবং তাঁর সেসব সংস্কারের আগে যে দেশের জনগণ ডুবেছিল একত্ববাদের পরিবর্তে মূর্তিপূজার কুৎসিততম নানা পংকিলতায় তাঁর প্রতি উচ্চারিত এমনসব অপবাদ কি বিশ্বাসযোগ্য?  ... আবারও বলছি এমন মহান ও সৎ-সাহসী সংস্কারককে কেউ যদি বলে প্রতারক ও তাঁর পুরো জীবন ছিল কপটতায় ভরা – তা কি বিশ্বাসযোগ্য হবে? খোদায়ি যে মিশনের দাওয়াত তিনি দিয়েছিলেন সেই ধর্ম তাঁর নিজেরই আবিষ্কার- এমনটা কি কল্পনাও করা যায়?#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ