নভেম্বর ২৫, ২০২০ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

ইগত পর্বে আমরা দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের কেরমান প্রদেশে। বলেছিলাম যে কেরমানে দুটি কেল্লা আছে বেশ প্রাচীন। কেল্লা দুটি বেশ উঁচুতে অবস্থিত । একটি কেল্লার নাম আর্দেশীর, আরেকটির নাম হলো দোখতার বা কণ্যা ।

আর্দেশীর কেল্লাটি একটি টীলার উপর নির্মিত হয়েছে । এর দেয়াল তৈরি করা হয়েছে রোদে পোড়া বড় বড় ইট দিয়ে । দোখতার বা কন্যা কেল্লাটি আর্দেশীর কেল্লার চেয়ে বেশ ছোট। কেরমানের আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য নিয়েও কথা বলেছিলাম। একই সময়ে দেখা যায় কেরমানের এক অঞ্চলের আবহাওয়া ঠাণ্ডা আবার অন্য অঞ্চলের আবহাওয়া গরম। আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারণে অনেক ধরনের ফলফলাদি সেখানে উৎপন্ন হয়।  কেরমান শহরের আরও কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনার সঙ্গে আজকের আসরে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।

কেরমান শহর দেখার প্রসঙ্গ এলেই রাস্তা বাজারের কথাটি প্রথমে আসবে। বাজারটি কেরমান বাজার এবং গাঞ্জআলি খান বাজার নামেও পরিচিত। এই বাজারে প্রাচীন দুটি বিখ্যাত হাম্মাম রয়েছে। হাম্মাম মানে হলো গোসলখানা । এই গোসলখানার একটির নাম গাঞ্জে আলী খান, আরেকটির নাম উকিল। দুটি হাম্মামই চমৎকারিত্ব এবং কারুকার্যের দিকে থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। গাঞ্জে আলী খান হাম্মামটির আয়তন ১০০০ বর্গ মিটার। সাফাভী আমলে কেরমানের শাসক গাঞ্জে আলী খান এটি নির্মান করেছেন। তাঁর নামানুসারেই হাম্মামটির নাম রাখা হয়েছে গাঞ্জে আলী খান হাম্মাম। হাম্মামটিকে বিশেষত্ব দিয়েছে এর ভিতরের কারুকাজ।

হাম্মামটিকে ভেতরের কারুকাজের মধ্যে টাইলসের শিল্পকর্মের কথা সবার আগে উল্লেখযোগ্য। এগুলো কেবল সুন্দরই নয়, বলা যায় বিস্ময়কর। এছাড়াও রয়েছে সিমেন্ট-বালুর তৈরি বিচিত্র কারুকাজ। এসব কাজের জন্যে হাম্মামটি আজ মূল্যবান এক সৃষ্টিকর্ম হিসেবে বিবেচিত হচেছ। অবশ্য হাম্মামটি এখন নৃতাত্ত্বিক যাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে। অন্যটি ওয়াকিল বা ওকিল হাম্মাম। এটি ওকিল কমপ্লেক্স নামেও পরিচিত ছিল। এই কমপ্লেক্সের ভেতরে বাজার, মসজিদ এবং সরাইখানা ছিল। অবশ্য বর্তমানে ওকিল কমপ্লেক্সকে ইরানের পুরানো স্টাইলের কফিখানায় রূপান্তর করা হয়েছে। আর এ কফিখানায় পর্যটকদের বেশ ভীড় জমে।

কেরমান জামে মসজিদ এ শহরের আরেকটি দর্শনীয় স্থাপত্য। খুবই বিখ্যাত এই মসজিদটি। মসজিদটি কেবল কেরমানেরই নয় বরং ইরানেরই সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক গর্বিত নিদর্শন। মসজিদটি নির্মাণের ক্ষেত্রে যেসব শিল্পী তাদের শ্রম ব্যয় করেছেন, তারা তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে এই পবিত্র ঘরের করুকাজ করেছেন। তাদের কারুকার্যে সৃজনশীলতার ছাপ সুস্পষ্ট। আকাশ ছোঁয়া মিনার আর বিশাল খোলা বারান্দার উপর নয়নাভিরাম কারুকার্যময় ছাদ এককথায় দৃষ্টি নন্দন। ৭৫০ হিজরী অর্থাৎ ১৩৩০ সালে আমীর মোবারেজ উদ্দীন মোঃ মোজাফ্ফরী কেরমান শহরের বাইরে এই মসজিদের কাজ শুরু করেন।

বলছিলাম ১৩৩০ সালে আমীর মোবারেজ উদ্দীন মোঃ মোজাফ্ফরী কেরমান শহরের বাইরে এই কেরমান জামে মসজিদের কাজ শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে শহরের পরিসর বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে মসজিদটির সদর দরজা এখন কেরমানের মহামূল্যবান স্থাপত্য কর্মের অন্যতম নিদর্শন। বিশেষ ধরণের উজ্জ্বল টাইলসের কারুকাজ আর নিপুন খোদাইকর্ম এখন ইতিহাসের সম্পদ। অন্যদিকে মসজিদের মেহরাবটিও দেখার মতো। মর্মর পাথরের উপরে কোরানের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি, আর তার পাশে টাইলসের উজ্জ্বল চোখ ঝলসানো সুন্দর এইসব কারুকাজ অবশ্য একবারে করা হয়নি।

মসজিদের ভেতরের নয়নাভিরাম কারুকাজ নিয়ে কথা হচ্ছিল। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এগুলো সজ্জিত হয়েছে, পরিবর্তিত হয়েছে। কেরমানের আরেকটি দর্শনীয় পূরাকীর্তি হলো জাবালিয়া গম্বুজ। এটি ইরানের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকর্মের অন্তর্ভুক্ত। এই গম্বুজটি কন্যা কেল্লার পাদদেশে অবস্থিত। এটির স্থাপত্যকর্মের যে ডিজাইন লক্ষ্য করা যায়, তাতে অনুমিত হয় যে, সাসনীয় যুগের কীর্তি এই গম্বুজ। এই স্থাপত্যটি আাসলে যরথুষ্ট্রিয়ানদের অগ্নিমন্দির ছিল। জাবালিয়া গম্বুজ ভবনটি আটকোনা বিশিষ্ট। গম্বুজটিতে বিশ মিটার উচচতার বেশ কয়েকটি খিলান আছে। এগুলো স্থাপত্যটির সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মূল ভবনের বাইরে দুই মিটার পরিমান খোলা প্রান্ত, চমৎকার সব পাথর দিয়ে মজবুত করে বাধাই করা হয়েছে। সবমিলিয়ে জাবালিয়া গম্বুজটি দৃষ্টিনন্দন বৈকি। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ