ডিসেম্বর ০১, ২০২০ ১৭:০২ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক/শ্রোতা! ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতেই ঢাকা ও কোলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রধান প্রধান বাংলা দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিরোনাম তুলে ধরছি।

প্রথমে বাংলাদেশের শিরোনাম:

১৯ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা- দৈনিক প্রথম আলো

দৈনিকটির অন্য একটি খবরের শিরোনাম- লিবিয়ায় মানব পাচারে বিমান সংস্থাও জড়িত

কিছুতেই পিছু হটবে না ইমরান খান'ইসরায়েলকে স্বীকৃতিতে না -দৈনিক ইত্তেফাক

চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর-বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনার তথ্য লুকিয়েছিল চীন-সিএনএন-দৈনিক সমকাল

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আশাবাদ ফখরুলের-কালের কণ্ঠ

৩ কোটি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেয়া হবে,বাংলাদেশে টিকা আসবে কবে?-মানবজমিন

যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস-যুগান্তর

ভারতের শিরোনাম:

কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসল কেন্দ্র-আনন্দবাজার পত্রিকা

আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করতে পারেন কৃষকরা, প্ল্যান-বি ঠিক করতে বৈঠকে শাহ-নাড্ডা -সংবাদ প্রতিদিন

যোগীর রাজ্যে এবার সাংবাদিককে স্যানিটাইজার ঢেলে পুড়িয়ে খুন, ধৃত ৩-দৈনিক আজকাল

শ্রোতাবন্ধুরা! এবারে চলুন বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস-যুগান্তর

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারাভোগ করতে হবে বলে রায় দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। তবে আদালত চাইলে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ৩০ বছর কারাদণ্ড দিতে পারেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত ২০০১ সালে সাভারে জামান নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০০৩ সালে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল। হাইকোর্টে আপিলের পর বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল থাকে।এর বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন সর্বোচ্চ আদালত।রায় ঘোষণার সময় আপিল বিভাগ ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস’ এমন মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদ জানান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। 

'কিছুতেই পিছু হটবে না ইমরান খান', ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না-দৈনিক ইত্তেফাক

ইমরান খান

যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং তাদের মিত্র দেশগুলোর চাপে পিছু হটবে না পাকিস্তান, ইসরায়েলকে দিবে না স্বীকৃতি। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল রবিবার এমনই মন্তব্য করেছে। ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দল ক টুইট বার্তায় বলেছে, ফিলিস্তিনের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবের ন্যায়সঙ্গত এবং সুষ্ঠু নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিবে না।

এছাড়া ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌধুরী টুইট বার্তায় জানান, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের প্রতি পাকিস্তানের দৃঢ় সমর্থন থাকবে।

স্বাক্ষর জাল করে কৃষকের টাকা তুলে নেন কৃষি কর্মকর্তা!-দৈনিক যুগান্তর

স্বাক্ষর জাল করে বরাদ্দকৃত টাকাসহ সরকারের বিভিন্ন কৃষিপণ্য কৃষকের নামে তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে।মঙ্গলবার ফুলগাজীর কৃষক নুরুল হক, আবুলুল কাদের, শহীদুল, মহি উদ্দিন ও জামাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলায় কৃষি উন্নয়ন এবং লেবুজাতীয় ফল চাষের দুটি বিশেষ প্রকল্পের অধীনে ৪৬০ কৃষক রয়েছেন।রহিম নামে এক কৃষক বলেন, আমার ও অপর একজন কৃষকের নামের পাশে যে স্বাক্ষর দেখেছি, তা আমাদের নয়। আমার এ স্বাক্ষর জাল।

করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু কথা। দৈনিক ইত্তেফাক,যুগান্তরসহ প্রায় সব দৈনিকে লেখা হয়েছে,তিন কোটি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেয়া হবে। তবে দৈনিক মানবজমিনের খবরে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশে টিকা আসবে কবে? বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দিয়েছে, তিন কোটি ডোজ টিকা বিনামূল্যে দেয়া হবে। এছাড়া, গ্যাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের ব্যবস্থাপনায় কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় আগামী বছরের মধ্যে প্রায় সাত কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কবে এসব ভ্যাকসিন বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। দেশের মানুষ কবে থেকে ভ্যাকসিন পাওয়া শুরু করবে। উন্নয়নশীল ও গরীব দেশগুলোর অবস্থা একই। কবে এসব দেশে ভ্যাকসিন আসবে কেউই বলতে পারছেন না নিশ্চিত করে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য নিয়ে এই উচ্ছ্বাস নাও টিকতে পারে-দৈনিক মানবজমিনের অর্থনীতিবিষয়ক এ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে,

১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশকে ‘বাস্কেট কেস’ বা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার।কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নানা সংকটের মাঝেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নতি করেছে।গত মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চলতি বছর মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে দেশটি।একই সময়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।কিন্তু ঢাকার বুদ্ধিদীপ্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সত্ত্বেও দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের হাতে অবাধ রাজনৈতিক ক্ষমতা মজুদ থাকলে, সময়ের আবর্তে তারা দুর্নীতি ও লুটেরাতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। তেমনটা ঘটলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে প্রায় সব দৈনিকে বিশেষ গুরুত্বসহ খবর পরিবেশিত হয়েছে। বিভিন্ন দৈনিকে লেখা হয়েছে, কৃষক আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার মোদির,বাধ্য হলেন বৈঠকে বসতে। দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম এরকম, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসল কেন্দ্র। বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে,কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করল সরকার। এই বৈঠকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনে গত কয়েক দিন ধরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি পঞ্জাব-হরিয়ানায়। এই অচলাবস্থা কাটাতে সোমবার কৃষকদের আলোচনায় আহ্বান জানান কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর। তাতে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্রের খবর কৃষকদের সব সমস্যা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

তবে দৈনিকটির অন্য একটি খবরে লেখা হয়েছে, আজকের বৈঠকে যোগ দিতে নারাজ ছিল আন্দোলনকারী কৃষকদের একাংশ।তাদের যুক্তি,দেশজুড়ে অন্তত ৫০০টি কৃষক সংগঠন বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। বৈঠকে মাত্র ৩২টি সংগঠনকে ডাকা হয়েছে। যা একেবারেই অনৈতিক। 

এদিকে দৈনিক আজকালের খবরে লেখা হয়েছে, আজ সকালে কৃষকদের সমর্থনে টুইট করেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কটাক্ষ করে কেন্দ্রীয় সরকারকেও। লেখেন,“আমাদের অন্নদাতারা যখন রাস্তায় আন্দোলন করছেন। তখন টেলিভিশনে লাগাতার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। ওঁদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পরিবর্তে আমরা জীবনধারন করি। একমাত্র ওঁদের পাশে থেকেই সেই ঋণ শোধ করা সম্ভব। ওঁদের মারধর করে,কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে ওঁদের ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়।” তিনি বলেন‘অন্নদাতা কৃষক নাকি মোদির পুঁজিপতি বন্ধু, আপনি কার পাশে?’

কেন্দ্রের মোদি সরকারকে নিশানা করে এদিন কংগ্রেস সাংসদ বলেন, ‘কৃষকরাই হলেন দেশের শক্তি। প্রশ্ন ওঠে, আজ তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন কেন? হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে তাঁরা কেন দিল্লিতে আসছেন? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন, নয়া কৃষি আইন কৃষকদের ভালোর জন্যেই। যদি তাই হয়, তাহলে কৃষকরা ক্ষোভে ফুঁসছেন কেন? চাষীরা খুশি নন কেন? আসলে এই আইন নরেন্দ্র মোদির পুঁজিপতি বন্ধুদের জন্য। এখন ঠিক করতে হবে, আমাদের কাদের পাশে দাঁড়াতে হবে!‌ অন্নদাতা কৃষক নাকি প্রধানমন্ত্রীর ধনতন্ত্রী বন্ধু। এই আইন কৃষকদের ঠকানোর আইন। আর তাই এখন আমাদের কৃষকদের পাশের দাঁড়াতে হবে। দেশের শক্তির জন্য লড়তে হবে। 

দৈনিকটির অন্য একটি খবরে লেখা হয়েছে,কৃষি আইনের প্রতিবাদে এনডিএ ছাড়ার হুমকি দিল রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক দল।

আনন্দবাজার পত্রিকার খবর-নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে এ বার মুখ খুললেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনিই বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি ভারতের কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের জন্য সব সময় পাশে থাকবে কানাডা।

কৃষি আইন প্রত‌্যাহারের দাবিতে দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তে নিরাপত্তারক্ষীদের চোখে চোখ রেখে শান্তিপূর্ণ অথচ দৃপ্ত প্রতিবাদ করে চলেছেন কৃষকরা।  পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় তৈরি হওয়া কৃষক বিক্ষোভ স্ফুলিঙ্গ ক্রমশ দেশজুড়ে দাবানলের রূপ নিচ্ছে। কিছুতেই যাতে এর ফলে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয় এবং কীভাবে আন্দোলন বন্ধ করিয়ে কৃষকদের মন পাওয়া যায় সেটাই এখন বিজেপি শীর্ষনেতৃত্বের প্রাথমিক লক্ষ‌্য।

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৯

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।