ডিসেম্বর ০৭, ২০২০ ১৯:০০ Asia/Dhaka

গত পর্বে আমরা কেরমানের কয়েকটি প্রসিদ্ধ ও দর্শনীয় স্থানের কথা বলেছিলাম। এই স্থানগুলোর একটি হলো কেরমানে জরথ্রুস্টদের বসবাসের ঐতিহ্য ও স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক অগ্নিমন্দির, মিউজিয়াম, বিশেষ করে কেরমান শিল্প মিউজিয়ামের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি।

আজকের আসরে যাবো কেরমানের প্রাকৃতিক কিছু নিদর্শন দেখতে। শুরুতেই আমরা এখানকার নামকরা 'শাহজাদা পার্কে'র দিকে যাবো। প্রাকৃতিক এই মনোমুগ্ধকর পার্কে কিছুটা সময় কাটাবো আমরা। তারপর সুযোগমতো অন্য কোনো দিকে যাবার ইচ্ছে রইলো।

কেরমান প্রদেশটি ইরানের বৃহত্তম প্রদেশ। এ কারণে তুর্কি, লোরি, লাক ও বালুচদের বিভিন্ন গোত্রের লোকজন বিশাল বিস্তৃত এই প্রদেশে অভিবাসী হয়ে আসে। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিচিত্র সংস্কৃতি ও সভ্যতার লোকজনের বসবাসের কারণে এখানে স্বাভাবিকভাবেই গড়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্রসহ ভাষাগত বিভিন্নতাও। তাই কেরমান প্রদেশের একেক এলাকায় দেখা যাবে একেক রকমের ভাষাভঙ্গি। এই বৈচিত্র্যের পাশাপাশি কেরমানে আবহাওয়াগত বৈচিত্র্যও রয়েছে। চার ঋতুর প্রদেশ কেরমান। ভৌগোলিক দিক থেকে ইরান অনেক বড় একটি দেশ। কিন্তু এমন কোনো প্রদেশ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেখানে চারটি ঋতুর চমৎকৃতি বিরাজমান। কিন্তু কেরমানে আপনি এই ঋতুবৈচিত্র্য বিস্ময়করভাবে উপভোগ করতে পারবেন।

ধরা যাক আপনি এ মুহূর্তে কেরমানের নয়নাভিরাম সুন্দর মরুভূমি এলাকায় আছেন। এখান থেকে সামান্য পথ অতিক্রম করেই আপনি পেয়ে যেতে পারেন ঠাণ্ডা, শীতল উপভোগ্য এলাকা। সাধারণত এতো অল্প দূরত্বে ভৌগোলিক উষ্ণতা মানে আবহাওয়াগত তারতম্য কোথাও পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু বিস্তৃত প্রদেশ কেরমানে এই তারতম্য সহজেই উপভোগ করার সুযোগ আছে যা এককথায় অবিশ্বাস্য। এতো বললাম মরু এলাকার কথা। সুন্দর এই মরু অঞ্চলের বাইরেও এই কেরমান প্রদেশে রয়েছে অসংখ্য বাগ-বাগিচা। এক ধরনের বেহেশতি আমেজ তৈরি হয়েছে এখানে। আজকের আসরের পরবর্তী অংশে আমরা বরং এখানকার নামকরা একটি বাগিচাতেই ঘুরে বেড়িয়ে আসি। এই বাগিচার নাম হলো 'শজদেহ মহন' বাগিচা।

আমরা শজদেহ মহন বাগিচার কথা বলছিলাম। বিশাল বিস্তীর্ণ বাগিচা হিসেবে শহজেহ মহন ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় আপন স্থান করে নিয়েছে। এই বাগিচায় যেতে হলে কেরমান-বাম মহাসড়ক ধরে আনুমানিক পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার অতিক্রম করলেই পড়বে মহন শহর। এই মহন শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরত্বে একেবারে মরুভূমির বুকের মাঝখানে বিশাল সবুজ নেগিনের মতো বসে আছে শহজদে মহন বাগিচা। শ্রোতাবন্ধুরা! নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন এই পার্কটির দুরকম নাম আছে: একটি শজদেহ অঅরেকটি শহজদে। অনেকে শাহজাদা পার্কও বলে থাকেন। এই পার্কটিকে সবুজ একটি মহাসমুদ্র নামেও ডাকা যেতে পারে যে সমুদ্রটি মরুভূমির মাঝখানে সুস্থিরভাবে বসে আছে। এর সৌন্দর্য আসলে বর্ণনা করে বোঝানো দুরূহ ব্যাপার। মরুর ভেতর কয়েক কিলোমিটার অতিক্রম করার পর মিলবে এই বাগিচাটির নাগাল।

প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং পরিবেশের সর্বোচ্চ সুন্দর বিন্যাসের একটা উদাহরণ হতে পারে এই শজদেহ মহন বাগিচাটি। বাগিচার দিকে কয়েক কদম পা ফেলতেই পানির কয়েকটি হাউজ বা চৌবাচ্চা চোখে পড়বে। চোখে পড়বে চমৎকার কয়েকটি প্রবাহও। পানির ওই প্রবাহ বাগিচার বৃক্ষরাজির পা ছুঁয়ে চলে যায়। যার ফলে বাগিচার সৌন্দর্য তথা সবুজ পরিবেশ সুরক্ষিত রয়েছে। সে কি গাছ এই বাগিচার, একেবারে আকাশচুম্বি একেকটা। বিশাল বিশাল গাছের ছায়া দিয়েছে প্রশান্তির অনন্য আমেজ। একদিকে সবুজের সমারোহ অপরদিকে ছায়াময় সুশান্ত পরিবেশে পানির বহমান ধারার শব্দ-সবমিলিয়ে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে এখানে। আরেকটু সামনে গেলে পড়বে চমৎকার একটি ইমারত মানে প্রাসাদ। য়োয়ারার পেছন দিকের সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় কৌতূহল সৃষ্টিকারী ওই প্রাসাদে। 

বিরতির পর আবারও স্বাগত আপনাদের ইরান ভ্রমণ অনুষ্ঠানে। বলছিলাম পার্কের ভেতরের প্রাসাদের কথা। ওই প্রাসাদের ভেতর পা রাখা মানে হলো এই বাগিচার সবচেয়ে সুন্দর অংশে প্রবেশ করলেন আপনি। ঐতিহাসিক এই প্রাসাদের ভেতরের ডিজাইন এবং ডেকোরেশন অসম্ভব সুন্দর এবং ইরানিদের শিল্প, সংস্কৃতি এবং জীবনাচারের সচিত্র প্রকাশ বললে ভুল হবে না। প্রধান ফটকসহ বালাখানা, নির্জন বাগিচা, জায়িম বশির বাড়ি, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ইত্যাদি রয়েছে বাগিচার ভেতরে। এই বাগিচার বৃক্ষরাজির গোড়ায় পানি দেওয়ার প্রয়োজনে সহযোগিতা নেওয়া হয় তিগারন নদীর পানি। ক্যানেল কেটে ওই নদীর পানি সরবরাহ করা হয় পুরো বাগিচাময়। গাছের গোড়ায় গোড়ায় পানি সরবরাহ করার জন্য যে ক্যানেল তৈরি করা হয়েছে তা এককথায় দক্ষ প্রকৌশলীর কাজ। বসন্ত এবং গ্রীষ্মের সময় পুরো বাগিচায় ফুলের সমারোহ ঘটে। সুতরাং এই সময়টাই হলো বাগিচা দেখার জন্য সবচেয়ে ভালো সময়।

ভ্রমণকারীদের জন্য এই বাগিচায় রয়েছে সব রকমের সুযোগ সুবিধা। হোটেল, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই রয়েছে হাতের নাগালে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ