ডিসেম্বর ১৩, ২০২০ ১৯:২০ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা মহানবীর (সা) প্রশংসায় লেখা ফরাসি খ্যাতিমান সাহিত্যিক ভিক্টর হুগোর কবিতা সম্পর্কে কথা বলেছি।

হুগো মহানবীর জীবন-সায়াহ্নের ঘটনাগুলোয় তাঁর প্রশংসা তুলে ধরতে গিয়ে লিখেছেন: 

 যখন নামাজের সময় হল

 তিনি মসজিদে যেতে চাইলেন

যদিও সে সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন

আলীর দেহের ওপর ভর করলেন,

লোকেরা অনুসরণ করছিল তাঁকে

পবিত্র পতাকা উড়ছিল বাতাসে

যখন মসজিদে পৌঁছলেন

দেহ তাঁর কাঁপছিল গায়ের রং যেন উধাও হয়েছিল

তিনি লোকদের দিকে ফিরলেন ও বললেন:

হে মানুষেরা! দিনের যেমন অবসান ঘটে রাতের আঁধারে

মানুষের জীবনও পৌঁছে যায় মৃত্যুর তীরে

আমরা সবাই নশ্বর মাটির ও অনুল্লেখযোগ্য

কেবল মহান আল্লাহই অবিনশ্বর এবং অদ্বিতীয় একজন

হে জনগণ! বস্তুত মানুষ আল্লাহর পথে চলা ছাড়া

অপদস্থ ও ঘৃণ্য প্রাণী

বড় মাপের একজন এ সময় অনুযোগ করে বললেন:

হে আল্লাহর রাসুল! প্রেরিত পুরুষ!

মানুষকে দাওয়াত দেয়া মাত্রই

সবাই আপনার আহ্বান শুনেছে পেতে হৃদয়ের কান

এবং আপনার বক্তব্যের সত্যতায় বিশ্বাস করেছে স্থাপন

যেদিন আপনি এসেছিলেন দুনিয়ায়

আকাশ শোভিত হয়েছিল একটি তারকায়

ইরান-সম্রাটের প্রাসাদের তিনটি মিনারের ঘটে পতন...

মহানবী নিরব থেকে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাসের শক্তি করে নেন নবায়ন

অতঃপর আবারও কথা  শুরু করে বলেন: 

এসব সত্ত্বেও সময় হয়েছে বিদায় নেয়ার।

জনতার মাঝে শুরু হল গুঞ্জন কলরব:

জীবনের শেষ দিনগুলোতে কারো কাছে দেনা থাকলে তা বুঝে নিতে ও কাউকে কথার মাধ্যমে বা কোনোভাবে শরীরে আঘাত দিয়ে থাকলে তার প্রতিশোধ নিতে মহানবী যে আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই ঘটনাও খুব সুন্দরভাবে কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন ভিক্টর হুগো। ওই একই কবিতায় হুগো এ প্রসঙ্গে লিখেছেন:  মহানবী (সা) বলে চললেন:

হে মানুষেরা শোনো পেতে কান!

যদি তোমাদের কাউকে কখনও বলে থাকি অবাঞ্ছিত কোনো কথন

আমি তোমাদের মাঝ থেকে যাবার আগেই দাঁড়াও এখন

সবার সামনে আমাকেও শুনিয়ে দেও তেমনই কথন!

যদি কাউকে দিয়ে থাকি অন্যায্য আঘাত

এসো এই লাঠি নিয়ে করো প্রত্যাঘাত!-মহানবীর (সা) প্রতি গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে ভিক্টর হুগো এই মহামানবের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো খুব কোমল ও বেদনাদায়কভাবে নিজ কবিতায় তুলে ধরেছেন। মহানবীর (সা) শেষ উপদেশ ও অসিয়তগুলো সম্পর্কে হুগো তার কবিতায় লিখেছেন:

হে জনগণ! করো মহান আল্লাহয় বিশ্বাস স্থাপন! /মহান আল্লাহর সমীপে মাথা কর অবনমন

মেহমানের নিও যতন! /ভয় করবে আল্লাহকে সর্বক্ষণ!

হয়ো ন্যায়পরায়ণ!/কখনও থেকো না এমন দেয়ালে

যা বেহেশতকে জাহান্নামের পতন-স্থল থেকে রাখে আড়ালে

ভুল থেকে কেউই নয় মুক্ত

তবুও সচেষ্ট থেকো যাতে না হও শাস্তির যোগ্য

এরপর মহানবী হলেন আবারও নিরব কিছুক্ষণ

ভাবনায় ডুবে গেলেন/মানুষের দয়ার্দ্র দৃষ্টি তখন তাঁর ওপর

যেন দৃষ্টি কবুতরের /এমন একজন প্রোজ্জ্বল মহামানবের দিকে তারা তাকাচ্ছিলেন

যিনি ছিলেন নির্ভরতার স্থল সারা জীবন। 

মহানবীর (সা) জীবনাবসানের চিত্র হুগোর কবিতায় ফুটে উঠেছে এভাবে:

তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছিল

মৃত্যুর ফেরেশতা এলো ঘরের দরজায়

চাইলো প্রবেশের অনুমতি

মহানবী দিলেন সম্মতি

খোদার কর্মী যখন ঘরে ঢুকলেন

সবাই দেখলেন

মহানবীর চোখে যেন খেলে গেলো

উজ্জ্বল এক বিস্ময়কর বিদ্যুতের চমক

ঠিক সেই নূরের মত যা জন্মদিনে তাঁর চোখে প্রোজ্জ্বল ছিল

এভাবে মুহাম্মাদের (সা) প্রাণ জীবন-স্রস্টার কাছে ফিরে গেল।

মহান আল্লাহ সুরা আলে ইমরানের ১৬৪ নম্বর আয়াতে মহানবী (সা) সম্পর্কে বলেছেন:

আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত তথা প্রজ্ঞা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।

মহানবীর নাম মুহাম্মাদ নামের অর্থই হল প্রশংসিত। নজিরবিহীন সব মানবীয় ও আধ্যাত্মিক গুণের অধিকারী এবং অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই মহামানব তাই যুগে যুগে সব মহলেই হয়েছেন ও হচ্ছেন এবং হতে থাকবেন প্রশংসিত। নূরনবীর অনন্য নূরে বিশ্ব-জগত হয়েছে আলোকিত। যুগে যুগে মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে বিশ্বের বহু মনীষী, কবি-সাহিত্যিক ও পণ্ডিতরা এই মহামানবের গুণ গেয়ে হয়েছেন ধন্য।   

অবশ্য সর্বকালের সেরা মহামানব, মানবজাতির গর্ব এবং শ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসুল মুহাম্মাদ (সা)-কে নিয়ে প্রতিশোধপরায়ন পরাজিত ইসলামের শত্রু ও হিংসুক কুচক্রী মহল অনেক অপবাদ প্রচার ও মিথ্যাচারেও লিপ্ত হয়েছে। আর এইসব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন অনেক বিবেকবান ও জ্ঞানী  পশ্চিমা মনীষী।  মহাসূর্যের মতই প্রদীপ্ত মহানবীর বিশ্বজনীন ব্যক্তিত্বের বাস্তবতাকে তাদের কাছে মিথ্যার মেঘ দিয়ে আড়াল করা সম্ভব হয়নি। পাশ্চাত্যের এমনই একজন মনীষী হলেন নোবেল-জয়ী  প্রখ্যাত আইরিশ সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ জর্জ বার্নার্ড ‘শ।  'প্রকৃত ইসলাম' বা দ্য জেনুয়িন ইসলাম শীর্ষক তার একটি বিখ্যাত বই ১৯৩৬ সনে প্রকাশ করা হয়েছিল। এ বইয়ে তিনি লিখেছেন:  মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সবসময়ই সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি, কারণ এর চমৎকার প্রাণবন্ততা। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সাথে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তাঁর (মুহাম্মদ) সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি- চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে।

বার্নার্ড 'শ আরো লিখেছেন: মুহাম্মাদ নবীদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ। ... মধ্যযুগের খ্রিস্টান পাদ্রিরা অজ্ঞতার কারণে অথবা বিদ্বেষের কারণে তাঁর সম্পর্কে অন্ধকার চিত্র তুলে ধরত। তারা হিংসা ও বিদ্বেষের কারণেই মুহাম্মাদকে খ্রিস্ট বিরোধী বলে মনে করত। আমার মতে তিনি তো খ্রিস্ট বিরোধী ননই বরং তাঁকে মানবতার মুক্তিদাতা বলা উচিত।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৩

 

 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ