ডিসেম্বর ১৯, ২০২০ ১৫:২৭ Asia/Dhaka
  • প্রাচ্যবিদদের চোখে মহানবী (সা) পর্ব-৩৫

মহানবী (সা) ও ইসলাম সম্পর্কে পাশ্চাত্যের যেসব মনীষী আকর্ষণীয় মন্তব্য করে খ্যাতিমান হয়েছেন তাদের মধ্যে উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াট অন্যতম।

তিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম সম্পর্কে সবচেয়ে বড় অমুসলিম ভাষ্যকার হিসেবে খ্যাত। প্রাচ্য বিষয়ে তিনি ত্রিশটিরও বেশি বই লিখেছেন।

প্রথম জীবনে মন্টগোমারি ওয়াট কিছুটা ইসলাম-বিদ্বেষী ছিলেন। তবে যতই তার বয়স ও জানার পরিধি বাড়তে থাকে ততই ইসলাম সম্পর্কে ও মহানবী (সা) সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ ও প্রশংসাসূচক হয়ে উঠতে থাকে। যেমন, কোনো কোনো প্রাচ্যবিদ মহানবীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অস্বাভাবিক বলে তুলে ধরেছেন এবং আত্মিক ও মানসিক অস্থিরতার কারণেই তিনি অদৃশ্যের সঙ্গে যোগাযোগে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন বলে তারা প্রচার করেছেন। কিন্তু মন্টগোমারি এর বিরোধিতা করে বলেছেন, মহানবী যে আত্মিক ও মানসিকভাবে স্বাভাবিক বা সুস্থ ছিলেন সে সম্পর্কিত বর্ণনা এবং সাক্ষ্য-প্রমাণগুলোকে কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানসিক উত্তেজনার শিকার কোনো ব্যক্তি সামরিক অভিযান চালাতে পারেন কিংবা দূরদর্শিতা নিয়ে একটি নগর-রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেন তা অবিশ্বাস্য!

মন্টগোমারি ওয়াট আারও লিখেছেন,  মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে মধ্যযুগীয় মনোভাবগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি আন্তরিকভাবে ও সৎ নিয়ত নিয়ে এবং সঠিক বিশ্বাস নিয়ে মহান আল্লাহর নানা বাণী প্রচার করতেন।

মহানবীর চিন্তাধারার উৎস যে ছিলেন মহান আল্লাহ বিভিন্ন ব্যক্তির সেই মতের দিকে ইঙ্গিত করে মন্টগোমারি বলেছেন, এটা বলা যেতে পারে যে এইসব চিন্তাধারা এমন সব ব্যক্তিদের জীবনের অর্জন যারা নিজ যুগের চেয়ে বড়।

তিনি আরও বলেছেন, মুহাম্মাদের ব্যক্তিত্ব ছিল এমনই যে তা মানুষের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অর্জন করেছিল। ধর্মীয় সাধনার পাশাপাশি তাঁর চরিত্রে ছিল দৃঢ়তার সঙ্গে দয়ার মিশ্রণ, সাহসিকতা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতার মত নানা উপযুক্ত গুণ। মন্টগোমারি বলেছেন, মহানবীর স্বভাব ও আচার-আচরণ এমনই পছন্দনীয় ছিল যে সবাই তাঁর বন্ধু হয়ে পড়তেন ও তাঁকে ভালবাসতেন এবং সবাই তাঁর জন্য ত্যাগ- স্বীকারে প্রস্তুত থাকত স্বেচ্ছায়। সামাজিক অসন্তোষ এবং ইরানি ও রোমান সাম্রাজ্যের অবক্ষয়ের কারণে ইসলামের বিস্তার ঘটেছে এমন ধারণা ঠিক নয়, আসলে এ ধর্মের প্রসার মহানবীর নানা গুণ, বৈশিষ্ট্য ও যোগ্যতা ছাড়া সম্ভব হত না।

মন্টগোমারি মহানবীর কাছে ওহি বা খোদায়ি প্রত্যাদেশ নাজিল হওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, মুহাম্মাদ তাঁর নবুওত ও রিসালাত যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তা প্রথম থেকেই বিশ্বাস করতেন। এই মিশন বাস্তবায়নে তিনি দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ ছিলেন। এই বিশ্বাসের কারণেই তিনি সব ধরনের বিরোধিতা, উপহাস-ঠাট্টা, অপবাদ ও হয়রানি এবং নির্যাতনের মোকাবেলায় নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছেন। তিনি যখন সাফল্য ও বিজয় অর্জন করেন তখনও তাঁর চিন্তাধারায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, বরং এই বিশ্বাস তাঁর মধ্যে জোরালো হয়েছ যে আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে ডেকেছেন তিনি সব সময়ই তাঁর সহায়।

মন্টগোমারি ওয়াটের বাড়িতে একজন মুসলমান বসবাস করতেন। তার মাধ্যমে তিনি ইসলাম সম্পর্কে এমন অনেক কিছু জানতে পারেন যা আগে জানতেন না। ওয়াট এটা জানতেন যে ইসলাম অতীতের খ্রিষ্ট ও ইহুদি ধর্মকেও একত্ববাদী বলে মনে করে এবং কুরআনে তা উল্লেখ করা হয়েছে।

ওয়াট ১৯০৬ সালে ৯৭ বছর বয়সে মারা যান। এর আগের দুই দশকে ইসলামের প্রতি মানুষের ব্যাপক আকর্ষণ লক্ষ্য করেছিলেন এই অধ্যাপক। ইসলামের পুনর্জাগরণ এবং সুদ, মদ ও পশ্চিমা পোশাকের প্রতি 'না' বলাটা এ দুই যুগের লক্ষণীয় দিক। এ বিষয়কে পশ্চিমা বিরোধী কিছু মনে করা উচিত নয় বলে ওয়াট মনে করতেন। তার মতে বরং এ প্রবণতা হল ইসলামী বিশ্বাস ও জীবন যাপনের অনুসরণ। ওয়াট মনে করেন খ্রিস্টানদের সঙ্গে ও পশ্চিমাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয় ইসলামী পুনর্জাগরণবাদীরা হয়ত সে রকম কিছু চায় পশ্চিমা সমাজের কাছে। কিন্তু খ্রিস্টানরা অন্য ধর্মগুলোর চেয়ে নিজ ধর্মকে উন্নত মনে করে বলে তা সম্ভব নয় বলে ওয়াট উল্লেখ করেছেন। মন্টগোমারি ওয়াটের দুটি বিখ্যাত বইয়ের নাম হল ‘মক্কায় মুহাম্মাদ’ ও ‘মদিনায় মুহাম্মাদ (সা)’। প্রথমটি তিনি ১৯৫৩ সালে ও দ্বিতীয়টি তিনি ১৯৫৬ সালে লিখেছেন। এরপর তিনি এ দুইটি বইকে মুহাম্মাদ: নবী ও রাজনীতিবিদ নামক বইয়ে সংক্ষিপ্ত করেছেন। শেষোক্ত এ বইয়ে ওয়াট কুরআনকে আসমানি কিতাব ও মহানবীর বড় মু’জিজা বলে উল্লেখ করেছেন।

মনীষী ওয়াট লিখেছেন: আমি গত চল্লিশ বছর থেকে আমার নানা লেখায় বলে এসেছি যে কুরআন মুহাম্মাদের রচনা নয় বরং তা ঊর্ধ্ব জগত থেকে তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে বলে মুহাম্মাদ যে দাবি করতেন তা আমি সঠিক বলে মনে করি। আমি ১৯৫৩ সালে যখন মক্কায় মুহাম্মাদ শীর্ষক বইটি লিখেছিলাম সেই থেকে সব সময়ই এটা বিশ্বাস করতাম যে কুরআন আল্লাহর বাণী।

বার্নার্ড শ'র ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইউরোপ ও আমেরিকায় ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তাই ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা দেখা যায় পাশ্চাত্যে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি এবডো'র পক্ষ থেকে মহানবী (সা) সম্পর্কে কার্টুন প্রকাশ ও অন্য একটি ইউরোপীয় দেশে কুরআন অবমাননার ঘটনাও লক্ষণীয়। #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ