‘বিশ্ব মানবের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন জেনারেল সোলাইমানি’
আমেরিকা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে থেকে শান্তিকামীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আর এর কারণ হচ্ছে সারা দুনিয়ার উপর তাদের শোষণমূলক আধিপত্যকে তারা বহাল রাখতে চায়। তারা মধ্যপ্রাচ্যে দায়েশসহ বিভিন্ন সংস্ত্রাসী সংগঠন সৃষ্টি করে বিশ্ব শান্তির বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। জেনারেল সোলাইমানির প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্য অনুবাদক, লেখক ও সাংবাদিক প্রমিত হোসেন।
তিনি আরও বলেন,সাম্রাজ্যবাদী চক্র পরিকল্পিতভাবে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করেছে। শান্তির দূতকে হত্যা করেছে।
সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ
রেডিও তেহরান: জনাব,প্রমিত হোসেন। ইরানের কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানির শাহাদাতের প্রথম বার্ষিকী পালিত হলো ৩ জানুয়ারি। জেনারেল সোলাইমানিকে শাহাদাতের পর আপনি তাঁকে নিয়ে 'জীবন্ত শহীদ' হত্যার নেপথ্য কাহিনী নামে একটি বই লিখেছিলেন। তো জেনারেল সোলাইমানি হত্যার এই বার্ষিকীতে আপনি কি বলবেন?

প্রমিত হোসেন: আমি জেনারেল সোলাইমানির শাহাদাত বার্ষিকীতে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আমার বিবেচনায় তিনি কেবল শুধু ইরানেরই ছিলেন না; তিনি ছিলেন সারা বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের একজন সংগ্রামী নেতা এবং মানবতার মূর্তপ্রতীক। তাঁর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা জানাই। তিনি আজ এক বছর আমাদের মাঝে নেই। তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন বিশ্বমানবের জন্য; সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জন্য। তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন যেভাবে সেকথা স্মরণ করলে আমরা যেমন ব্যথিত হই, সাম্রাজ্যবাদী চক্র পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেছে। একথা ভেবে আমরা যেমন ব্যথিত হই অন্যদিকে তাঁর জীবন উৎসর্গ করায় আমার গর্বিতও হই।
রেডিও তেহরান: জ্বি জনাব প্রমিত হোসেন, আপনি যেকথাটি বলছিলেন যে জেনারেল সোলাইমানি শান্তির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। জেনারেল সোলাইমানিকে নিয়ে লেখা বইয়ে আপনি বলেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেনারেল সোলাইমানিকে নয় বরং শান্তিকে হত্যা করেছেন। তার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে এসে সে সম্পর্কে আপনি কি বলবেন?
প্রমিত হোসেন: সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা লালিত পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম জেনারেল সোলাইমানিকে নানাভাবে চিহ্নিত করেছে। যুদ্ধবাজ কিংবা সহিসংতাবাদী হিসেবে ঐসব গণমাধ্যম তাঁকে চিহ্নিত করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে।
কিন্তু আসল সত্যটা হচ্ছে জেনারেল সোলাইমানি অপশক্তির বিরুদ্ধে, মানবতার শুত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন মানবতাকে রক্ষার জন্য। আর তাদের জন্য তিনি জীবন পর্যন্ত দিয়ে গেছেন সেটা প্রমাণিত সত্য।

তাঁকে নিয়ে শান্তির কথা আমার বইয়ে উল্লেখ করেছি এই জন্য পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যম সূত্রের তথ্যমতে আমরা জানতে পেরেছি এবং আমাদের সেই জানাটা অসত্য ছিল না যে, জেনারেল সোলাইমানি ইরাকে গিয়েছিলেন একটি শান্তির বার্তা নিয়ে। বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে কিভাবে শান্তি স্থাপন করা সেই বার্তা নিয়েই তিনি ইরাকে গিয়েছিলেন। সুতরাং নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের পক্ষে তিনি যেমন যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করেছেন ঠিক তেমনি শান্তির জন্যও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছিলেন। তাঁর শহীদ হওয়ার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাঁকে শান্তির দূত হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেজন্যই আমি আমার বইয়ে তাঁকে উল্লেখ করেছি ওভাবে- তাঁকে হত্যা নয় শান্তিকে হত্যা করা হয়েছে।
রেডিও তেহরান:জ্বি আপনার বইয়ে তাঁকে শান্তির দূত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাঁকে হত্যার মাধ্যমে শান্তিকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করলেন। আমেরিকা যে উদ্দেশ্যে ঐ বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল তাতে তারা কি সফল হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
প্রমিত হোসেন: তারা সফল হয়েছে বলে আমি মেন করি না। তাদের একটা আশঙ্কা ছিল মধ্যপ্রাচ্যে যদি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে সেখানে তাদের আধিপত্য ক্ষুন্ন হবে। আর তাদের সেই আধিপত্যকামী মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্যই সেখানে যারা শান্তি নিয়ে কাজ করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান তাদেরকে তারা হত্যা করেছে। শুধু জেনারেল সোলাইমানিকে নয়; আমরা ফিলিস্তিনি অনেক নেতা কর্মী এবং সংগ্রামীদের এভাবে হত্যা করতে দেখেছি। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্নস্থানে আরও অনেককে তারা হত্যা করেছে। আসলে সাম্রাজ্যবাদী চক্র মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে দিতে চায় না।
রেডিও তেহরান: তারা আসলে বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় না। আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে যে- তারা মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আসলে তাদের অবস্থানটা কি? একজন শান্তির দূতকে হত্যা করল অথচ তারা দাবি যে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই যে বক্তব্য- তারা নিজেরা কী সন্ত্রাসবাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো না?

প্রমিত হোসেন: তাদের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিশ্ব মানবের চোখে ধুলো দেয়ার একটা অপচেষ্টা। তারা তাদের প্রচারমাধ্যমে এবং সব রকমের মেশিনারিজে সবসময় এটাই প্রচার করছে যে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আসলে আমরা মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যেই যদি দেখি- সেখানে ‘দায়েশ’ নামে সন্ত্রাসী সংগঠনটির দিকে তাকাই তাহলে দেখব-আমেরিকা এবং সাম্রাজ্যবাদীরা এটাকে তৈরি করেছে লালন পালন করেছে এবং লেলিয়ে দিয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী এবং তাদের দোসররা এর পেছনে রয়েছে। আমরা সেখানে আরও কতগুলো সন্ত্রাসী বিগ্রেডের নাম জানি। সেসব তৈরি করেছে আমেরিকা এবং তাদের দোসররা।
সিআইএ সম্পর্কে আমরা জানি তারা শুধু মধ্যপ্রাচ্য বলে কথা নয় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তৈরি করে তাদেরকে লালন পালন করে এবং অস্ত্র জোগান দেয় এবং তারপর কোনো একটি দেশে কিংবা অঞ্চলে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। এটাও প্রমাণিত সত্য। তারা কোনোভাবেই এই সত্যটাকে চেপে রাখতে পারে নি। সুতরাং তাদের বক্তব্য ভূতের মুখে রাম নামের মতো। তারা বলে যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে আসলে তারা সন্ত্রাসবাদের পক্ষে থেকে শান্তিকামীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আর এর কারণ হচ্ছে সারা দুনিয়ার উপর তাদের শোষণমূলক যে আধিপত্য সেটাকে তারা বহাল রাখতে চায়।
রেডিও তেহরান:জনাব প্রমিত হোসেন আমরা সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে চলে এসেছি। সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাইব, ইরান এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ হিসেবে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল এবং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে বিনা শাস্তিতে পার পেতে দেবে না বলে ঘোষণা করেছে। ইরানের ঘোষণাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
প্রমিত হোসেন: দেখুন, ইরানের এই ঘোষণা খুবই স্বাভাবিক এবং এটা শুধু ইরানের ঘোষণা বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি এটা বিশ্বের প্রতিটি ন্যায়নিষ্ঠ মানুষের দাবি। ইরানের কাছ থেকে হয়তো সেটা ঘোষণা হিসেবে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের সমস্ত শান্তিকামী ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ ইরানের এই ঘোসণাকে সমর্থন করে। আর এটা শুধু প্রতিশোধের ব্যাপার না। এটা হচ্ছে একটি অপশক্তির বিরুদ্ধে মানবজাতিকে রক্ষার লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে এই মুহূর্তে ইরান সবচেয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আর এ কারণে বিশেষ করে আমাদের এ অঞ্চলে বাংলাদেশের অনেকেই এ বিষয়টি জানে এবং সামগ্রিকভাবে ইরানের কর্মকাণ্ডের সমর্থন জানাচ্ছে। আর শুধু যে অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই সেটাই শুধু নয় সবরকমের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক যে নীতি নিয়ে ইরান এগোচ্ছে তার প্রতি আমাদের অঞ্চলের সমস্ত মানুষ সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখছে এবং নিজেরাও প্রেরণা অনুভব করছে।

রেডিও তেহরান: তো জনাব প্রমিত হোসেন আপনি চমৎকার করে বললেন অপশক্তির বিরুদ্ধে মানবজাতিকে রক্ষার লড়াই শুধুমাত্র প্রতিশোধের লড়াই নয়-জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার পর আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক দিকসহ বিভিন্ন দিকে মানুষের মুক্তির জন্য ইরানের যে অবস্থানকে আপনারা সশ্রদ্ধচিত্তে সমর্থন জানালেন। তো রেডিও তেহরানকে জেনারেল সোলাইমানির শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রমিত হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ এবং সেইসঙ্গে রেডিও তেহরানের বাংলা বিভিাগের সবাইকে সালাম এবং ধন্যবাদ।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৪
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।