‘জেনারেল সোলাইমানিকে গুপ্তহত্যা করেছে বিশ্ব সন্ত্রাসের মোড়ল নপুংসক ট্রাম্প’
জেনারেল সোলাইমানিকে আমেরিকা কাপুরুষোচিতভাবে গুপ্তহত্যা করেছে। আর পৃথিবীর কোনো আইনই গুপ্ত হত্যা কিংবা এই ধরনের হত্যাকে সমর্থন করে না। রেডিও তেহরানকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল আউয়াল ঠাকুর।
তিনি আরও বলেন,বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী হচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। আর বিশ্ব সন্ত্রাসের মোড়ল হচ্ছে ট্রাম্প।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
রেডিও তেহরান: জনাব, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, ইরানের কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলাইমানির শাহাদাতের প্রথম বার্ষিকী ৩ জানুয়ারি পালিত হয়েছে। জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দম্ভোক্তি করে সে সময় বলেছিলেন সে নিজেই তাঁকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। একজন শীর্ষ পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাকে এভাবে হত্যার জন্য কোনো আইন কি অনুমতি দেয়?
আবদুল আউয়াল ঠাকুর: দেখুন, যেকোনো হত্যাই বেআইন। যে বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলছি সেটিকে নিঃসন্দেহে বিচারবিহীন হত্যাকাণ্ড বলা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এধরনের হত্যাকাণ্ড মূলত কাপুরুষোচিত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। একজন বীরের সাথে বীরের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের পরিণতির বিষয়টি ভিন্ন বিষয় কিন্তু এখানে জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার বিষয়টি ছিল আমেরিকার কাপুরুষোচিত হামলা। এটি গুপ্তহত্যা। আর এই গুপ্তহত্যার প্রক্রিয়াই মূলত পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির মূল কারণ। এতে কেউ জানতে পারেন না কখন কো তাকে অনুসরণ করছে।
আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অথবা অভ্যন্তরীণ কোনো অপশক্তিকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক যে মহল নিজেদেরকে বীর বলে প্রমাণের চেষ্টা করছে তারা মূলত একটি নপুংসক শক্তিতে পরিণত হয়েছে বলেই এধরনের কাজ করতে পারে। পৃথিবীর কোনো আইনই গুপ্ত হত্যা কিংবা এই ধরনের হত্যাকে সমর্থন করে না। সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় হত্যা কোনো আইন দ্বারা সমর্থিত নয়।
রেডিও তেহরান: জেনারেল কাসেম সোলাইমানি সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সেক্ষেত্রে তাকে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আমেরিকা কী সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় নি?
আবদুল আউয়াল ঠাকুর: দেখুন, সন্ত্রাস শব্দটির ব্যাপ্তি এখন নানাভাবে ঘটছে। আজকে সন্ত্রাসী কারা? সারা দুনিয়াতে সন্ত্রাসের মদতদাতা হচ্ছে ইসরাইল, ইহুদি শক্তি। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছে তার মোড়ল। জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা মূলত যে সন্ত্রাসের বিরোধীতার কথা বলছে সেটি একটি ভুয়া আলোচনা। এই কারণে যে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসবাদী বলে উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে মূলত বিশ্ব শান্তিকে হুমকির মুখোমুখি করেছে।পৃথিবীর কোথাও মুসলমানরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে নি। মুসলমানরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলে। কথা বলে সাম্যের পক্ষে। মানুষের মাথা উঁচু করার কথা বলে; মানুষকে দাস বানানোর কথা কখনও মুসলিমরা বলে না। মানুষকে দাস বানানোর প্রক্রিয়া হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী মানসিকতা। আমরা সবাই জানি যে আফ্রিকার স্বাধীন মানুষগুলোকে কারা গলায় রশি দিয়ে কৃতদাসে পরিণত করেছিল। সেই যে সন্ত্রাস সেটাকেই আজ সারা বিশ্বজুড়ে অন্যভাবে তারা ছড়িয়ে দিয়েছে। সুতরাং জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত সন্ত্রাসবাদকে আরও উসকে দেয়ার শামিল।
রেডিও তেহরান: আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে- তারা মধ্যপ্রাচ্যে উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর আমেরিকার এই দাবির কী কোনো যৌক্তিক ভিত্তি থাকে?

আবদুল আউয়াল ঠাকুর: দেখুন, মধ্যপ্রাচ্যে উগ্রবাদী কারা? মধ্যপ্রাচ্যে উগ্রবাদ কারা সৃষ্টি করছে। মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিকরা কি উগ্রবাদ সৃষ্টি করছে। নাকি সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে ইসরাইলিরা। ইসরাইলের কারণে শুধু মধ্যপ্রাচ্যে নয়; সারা দুনিয়ায় আজ সন্ত্রাসবাদ চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি তাদেরকে দমন করছে; নাকি তাদেরকে লালন করছে? নাকি তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা করতে হলে, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা পৃথিবীর অন্য যেকোনো জায়গার সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে গেলে সন্ত্রাসের নাটের গুরু, মোড়ল এবং তাদের ইন্ধনদাতা মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদি শক্তির অবসান প্রয়োজন। মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি শক্তিকে লালন করে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করার যে প্রবণতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে তাতে আসলে প্রমাণ করে তারা সন্ত্রাসবাদকে উসকে দিচ্ছে এবং বিশ্বে অশান্তির মূল কারণে পরিণত হয়েছে।
সেক্ষেত্রে বলা যায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানি, ইরান বা মুসলিম শক্তিগুলো মূলতপক্ষে ইসরাইলের বিরোধিতা করছে। আর যারা ইসরাইলের বিরোধীতা করছে মার্কিনিরা তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিচ্ছে। আর এসব বিবেচনা থেকে নিশ্চিন্তভাবে বলা যায় তারা যাকে মানবতা কিংবা মানবাধিকার বলছে মূলত সেটাই হচ্ছে সন্ত্রাস। অন্যদিকে যারা শান্তির পক্ষে কাজ করছে তাদেরকে নিরস্ত্র করে হত্যা করার মধ্য দিয়ে বিশ্ব শান্তিকে এবং বিশ্বের ভারসাম্যকে অগ্রহণযোগ্য করে তুলছে।
রেডিও তেহরান: ইরান এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ হিসেবে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল এবং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে বিনা শাস্তিতে পার পেতে দেবে না বলে ঘোষণা করেছে। ইরানের ঘোষণাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
আবদুল আউয়াল ঠাকুর: দেখুন, একজন সৈনিক যখন দেশপ্রেমকে তার ব্রতী হিসেবে গ্রহণ করে তখন মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গনের আকাঙ্খা তিনি পোষণ করেন। আর সেই মৃত্যু যখন বীরের হয় তখন তা হয় স্মরণীয়। জেনারেল কাসেম সোলাইমানি সেই স্মরণীয় বরণীয় এবং গ্রহণীয়। আর প্রতিটি বীরের মুত্যুর কিছু বাণী থাকে। একজন বীর যুদ্ধ করেন তাঁর দেশের জন্য, মানুষের জন্য। তিনি শহীদ হলেও তার দেশপ্রেমের যে পতাকা রেখে যান তা বহন করার দায়িত্ব সেই জাতির, সেই রাষ্ট্রের এবং সেই দেশের সরকারের। জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ইরানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁর মহান মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তিনি তার দেশের জন্য বার্তা রেখে গেছেন। ইরানের জনগণ এবং দেশটি সেই বার্তাই গ্রহণ করেছে যে তার হত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে। অর্থাৎ তাঁর হত্যার যদি সঠিক ও ন্যায় বিচার যদি করা না যায় তাহলে আরেকজন বীরের জন্ম হবে না। জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইরানি জাতির সাহসিকতার বিকাশ ঘটেছে। তঁকে হত্যা করে যে অন্যায় করা হয়েছে তার যথার্থ বিচারের মধ্য দিয়ে ন্যায় সংঘটিত হতে পারে। তাঁর মৃত্যুর বদলা হতে পারে। ট্রাম্পের ঐ অন্যায় সিদ্ধান্তের তেমন কোনো প্রতিবাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তখন করে নি যদিও সম্প্রতি নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার বিষয়টি মার্কিন জনগণ গ্রহণ করে নি। আর ইরানের জনগণের গ্রহণ করার তো প্রশ্নই ওঠে না। আর বিষয়টি বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্য নয়। আবারও বলব কোনো হত্যাই যেমন গ্রহণযোগ্য নয় তেমনি হত্যার বিচারটিও অগ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
রেডিও তেহরান:জনাব আবদুল আউয়াল ঠাকুর ইরানের কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানির শাহাদাতের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আবদুল আউয়াল ঠাকুর: আপনার মাধ্যমে রেডিও তেহরানের শ্রোতাদেরকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ।
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৫
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।