মুশতাকের মৃত্যু: মন্ত্রী বললেন স্বাভাবিক, অভিযোগ রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড
শ্রোতা/পাঠক!২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:
- রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য নয় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী-ইত্তেফাক
- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-আশঙ্কা এখন দুঃসহ বাস্তবতা–প্রথম আলো
- কেউ মুশতাককে পিটিয়ে মারেনি তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে-মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী-কালের কণ্ঠ
- লেখক মুশতাক রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার.-যুগান্তর
- সব চলে সব হয়, পরীক্ষা নিতে কিসের ভয়-যুগান্তর
- জিয়ার অবদান যারা অস্বীকার করছেন তারা স্বাধীনতাকে অস্বীকার করছেন -ফখরুল– মানবজমিন
- অবরুদ্ধ খুলনায় নৌপথেও পারাপার বন্ধ, ভোগান্তি-বাংলাদেশ প্রতিদিন
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:
- কার সুবিধার জন্য ৮ দফায় ভোট? হারিয়ে ভূত করে দেব: কঠোর মমতা-বার্তা কেন্দ্রকে -আনন্দবাজার পত্রিকা
- আর্থিক মন্দা কাটিয়ে দেশের জিডিপি বাড়ল ০.৪ শতাংশ -আজকাল
- ‘বাংলা তার মেয়েকেই চায়, পিসিকে নয়’, তৃণমূলের স্লোগানের পালটা খোঁচা বিজেপির -সংবাদ প্রতিদিন
শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু’টি বিষয়ের বিশ্লেষণে যাব।
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. লেখক মুশতাকের মৃত্যুর দায় রাষ্ট্র, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এ মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
২. সৌদি আরবের প্রখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান- এমন তথ্য উঠে এসেছে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে। কীভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর
কারবন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে নানামুখী খবর বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর একটি খবরের শিরোনাম-ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-আশঙ্কা এখন দুঃসহ বাস্তবতা। আরও কয়েকটি শিরোনাম এরকম-মুশতাকের মৃত্যুর দায় কার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শিকার। লেখক মুশতাককে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল ছাত্র ফেডারেশন। এদিকে ইত্তেফাকের খবরে লেখা হয়েছে, মুশতাকের মৃত্যুতে পশ্চিমা কূটনীতিকদের উদ্বেগ। লেখক মুশতাকের মৃত্যু- দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ।
‘লেখক মুশতাক রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার’-যুগান্তর
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করেছেন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তারা এই মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। মিছিলটি শাহবাগ ও পরীবাগ মোড় ঘুরে ফের শাহবাগে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে শুরু করেন। দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা্।
শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভে বক্তৃতায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন অভিযোগ করেন, গত বছরের এপ্রিলে লেখনীর মাধ্যমে দুর্নীতি-লুটপাটের প্রতিবাদ করেছিলেন লেখক মুশতাক।
‘তার অপরাধ ছিল, তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে, অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। তাই কারাগারে আটকে রেখে তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ছয়বার জামিনের আবেদন করলেও তা নির্বিকারভাবে নাকচ করা হয়েছে। এটি নির্মম রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, লেখক মুশতাক ৯ মাস ধরে কারারুদ্ধ ছিলেন। মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করার জায়গায় চলে গেছে বর্তমান সরকার।
বিক্ষোভে আরও বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রাজেন্দ্র চাকমা প্রমুখ।পরে নেতারা আজ সন্ধ্যা ৬টায় মশাল মিছিল এবং ১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয়।
প্রসঙ্গত লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩) বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন।
'কেউ মুশতাককে পিটিয়ে মারেনি তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে'-কালের কণ্ঠ
মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে চলমান আলোচনা আর বিতর্কের মাঝেই আইনটি পর্যালোচনা করার সুযোগ রয়েছে। আলোচনা করে আইনের অনাকাঙ্ক্ষিত ধারাগুলো সংশোধন করা সম্ভব।
আজ শনিবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ নিয়ে আয়োজিত ভার্চুয়াল সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।শ ম রেজাউল করিম বলেন, কোনো আইনই সম্পূর্ণ নয়, নয় বিতর্কের উর্ধ্বে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমনি আছে তেমনি আছে অপ্রয়োগ। আর তাই প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সংস্কার করা যেতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, মুশতাকের মৃত্যুর পর ডিজিটাল আইন নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছে, আমি বলতে চাই কেউ মুশতাককে পিটিয়ে মারেনি, তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আমিও তার মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছি।
সেমিনারে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক আইনটির অধিকাংশ ধারায় জামিন অযোগ্যতা, পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশের তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা থাকাকে এ আইনের দুর্বলতা হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, জনগণের মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষায় সরকাররে দ্রুত আইনের ২১, ২৫, ২৮ ও ৩৫ এ চারটি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে।
ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
কার সুবিধার জন্য ৮ দফায় ভোট? হারিয়ে ভূত করে দেব: কঠোর মমতা-বার্তা কেন্দ্রকে-আনন্দবাজার পত্রিকা
বিহারে ২৩৪ আসনে যদি ৩ দফায় ভোট হয়, তাহলে বাংলার ২৯৪ আসনে ৮ দফায় ভোট কেন? নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শুক্রবার এমনই প্রশ্ন তুলে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনের সিদ্ধান্তকে যদিও ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন ‘অভিনন্দন’ও। কিন্তু পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘আমি শক্ড!’’ এর পিছনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলেও সরাসরি অভিযোগ করেছেন তিনি। ‘বিশেষ’ কাউকে বাংলায় সুবিধা পাইয়ে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা। ভোটের আগে এজেন্সির ‘অপব্যবহার’-এর অভিযোগ তুলে মমতা বলেছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনকে বলছি, টাকার খেলা বন্ধ করুন! আমরা কিন্তু সব বুঝতে পারছি।’’
পক্ষান্তরে, কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও বলেছেন, ‘‘আমরা চাই, বাংলার মানুষ যাকেই ভোট দিন, শান্তিতে ভোট দিন। ভোট ঘিরে যেন কোনও হিংসাত্মক ঘটনা না ঘটে।’’ কংগ্রেসের বিধায়ক তথা নেতা মনোজ চক্রবর্তীর আবার মন্তব্য, ‘‘যে ভাবে অতীতে এ রাজ্যে নির্বাচন হয়েছেন, তাতে ৮ নয়, ১২ দফায় ভোট করানো উচিত ছিল কমিশনের।’’
‘বাংলা তার মেয়েকেই চায়, পিসিকে নয়’, তৃণমূলের স্লোগানের পালটা খোঁচা বিজেপির-সংবাদ প্রতিদিন
রাজ্যে এখন পুরোদস্তুর ভোটের উত্তাপ। স্লোগান-পালটা স্লোগানে রীতিমতো সরগরম রাজনৈতিক আবহ। এই পরিস্থিতিতে কয়েকদিন আগেই শোনা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) নয়া স্লোগান ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। আগেই বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে ‘বহিরাগত’ তাস খেলেছে তৃণমূল। বিজেপি জিতলে রাজ্যে যাঁরাই ক্ষমতায় থাকুন না কেন, বকলমে রাজ্য চালাবে নাগপুরই। তৃণমূলের এমন খোঁচা নতুন নয়। অমিত শাহ, জেপি নাড্ডাদের রাজ্যে বারবার প্রচারে আসাকে কটাক্ষ করেও গেরুয়া শিবিরকে বিঁধতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে। তারই সম্প্রসারণ এই নয়া স্লোগান।
আর্থিক মন্দা কাটিয়ে দেশের জিডিপি বাড়ল ০.৪ শতাংশ-আজকাল
করোনা অতিমারির মধ্যেই এবার ভারতের জিডিপি ০.৪ শতাংশ অর্থাৎ খুব সামান্যই বাড়ল। দেশজুড়ে বেড়ে চলা আর্থিক মন্দার মধ্যে এই সামান্য জিডিপি বৃদ্ধির ঘটনায় আরতের অর্থনৈতিক মন্দা কেটে গেছে বলেই ধারণা অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। ন্যাশানাল স্ট্যাটিসটিক অফিসের তরফে ২০২০–২১ অর্থবর্ষের ত্রৈমাসিক জিডিপি সম্পর্কে যে রিপোর্ট পেশ করা হয় তাতে দেখা যাচ্ছে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মোট জাতীয় উৎপাদনের হার ০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০–২১ আর্থিক বছরের প্রথম দুটি ত্রৈমাসিকে ভারতীয় অর্থনীতিতে মন্দা প্রকট হয়ে উঠেছিল। ২০২০–এর জুন মাসে কোভিডকালে পেশ হওয়া রিপোর্টে ২৩.৯ শতাংশ হারে কমে গিয়েছিল জিডিপির হার। সেপ্টেম্বরে পেশ হওয়া ত্রৈমাসিক রিপোর্টে ৭.৫ শতাংশ হারে জিডিপি কমে গিয়েছিল। ক্রমাগত জিডিপি কমে যাওয়ার ফলে খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল ভারতীয় অর্থনীতি। ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস ও প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন মন্ত্রকের তরফে বলা হচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতি জিডিপি বৃদ্ধির সামান্য হারের মধ্যে দিয়ে এইভাবেই আস্তে আস্তে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে। দেশের কৃষিক্ষেত্রে এই জিডিপি বৃদ্ধির হার ৩.৯ শতাংশ, নির্মাণ শিল্পে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ, উৎপাদন শিল্পে জিডিপি বৃদ্ধির হার ১.৬ শতাংশ। জিডিপির সামান্য বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপ কিছুটা কমবে বলেই আশা অর্থনীতিবিদদের।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।