ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১ ১৭:৩০ Asia/Dhaka

বিশাল একটি দেশ ইরান। এ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য,পুরাতত্ত্ব আর সংস্কৃতির বিচিত্র সমৃদ্ধ উপাদান। গত আসরে আমরা ইরানের ঐতিহাসিক প্রদেশ কেরমান সফর করেছি। আশা করি আপনাদের মন্দ লাগে নি।

আগেই বলেছি  ইরান একটি রূপবৈচিত্রময় প্রকৃতির দেশ। এর একেকটি প্রদেশ একেক রকম বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। গত পর্বে আমরা ঐতিহাসিক কেরমান প্রদেশ সফর শেষ করেছি। আশা করি ইরানের এই বৃহত্তম প্রদেশের বিভিন্ন শহর আপনাদের ভালো লেগেছে।

আজ আমরা যাবো কেরমান প্রদেশ ছেড়ে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বন্দর আব্বাসের দিকে। অতিথিপরায়নতার জন্য নামকরা দর্শনীয় এই শহরটি ইরানের একটি বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক শহর। হরমুজগান প্রদেশের কেন্দ্রীয় শহর হলো বান্দর আব্বাস। এটি ইরানের বৃহত্তম বন্দর এবং ইরানের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। পারস্য উপসাগরের উপকূলে এই শহরের অবস্থান। এ কারণে বরাবরই ব্যবসায়ী এবং বণিকদের জন্য একটি চমৎকার নৌ-পথ তৈরি হয়েছে বন্দরআব্বাসের সঙ্গে। এ কারণেই বন্দরআব্বাস শহর এবং বন্দর পৃথিবীব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছে দ্রুত।

বন্দরআব্বাস কেন ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর-সেটি নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করবে। কৌতূহল আমরা মিটিয়ে দিচ্ছি। ইরানের যত পণ্য আছে প্রাকৃতিক, কল-কারখানায় উৎপাদিত কিংবা খনিজ অথবা হাতে তৈরি-যাই হোক না কেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সেইসব পণ্য সেইসব মালামাল রপ্তানি ও সরবরাহ করার বৃহৎ মাধ্যম হলো এই বন্দরআব্বাস। ইরানে বিশেষ করে এই বন্দরআব্বাসে যে অসংখ্য বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলোর অস্তিত্বের জন্য এই বন্দরআব্বাসের রয়েছে বিশাল অবদান। বন্দরআব্বাসে রয়েছে দুটি সমুদ্রবন্দর- শহিদ রাজায়ি বন্দর এবং শহিদ বহোনার বন্দর কমপ্লেক্স। ইরানের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তির বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে এইসব বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

শহীদ রাজায়ি বন্দর এবং শহীদ বহোনার বন্দর ইরানসহ এ অঞ্চলের বাণিজ্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক তৎপরতার মধ্য দিয়ে বন্দর আব্বাসকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত করেছে। বন্দরআব্বাস অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা হলো মাছ শিকার করা এবং কৃষিকাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্য। বন্দর আব্বাস শহরের অধিবাসীরা খুবই অতিথিপরায়ণ এবং সহৃদয়। তাছাড়া এখানে রয়েছে সুন্দর এবং নয়নাভিরাম কয়েকটি দ্বীপ। এই দ্বীপগুলোর সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে সহজেই। যে-ই এইসব দ্বীপাঞ্চল ভ্রমণে যায় তাদের কাছে ওই সফর স্মরণীয় হয়ে থাকে। এসব কারণে বন্দরআব্বাস ভ্রমণের জন্য পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে।

বিশেষত শীত এবং বসন্ত ঋতুতে এই বন্দরআব্বাস শহর এবং এখানকার দ্বীপগুলো সবসময়ই ইরানের বিভিন্ন এলাকার ভ্রমণ পিপাসূদের তো বটেই এমনকি ইরানের বাইরেরও বহু অতিথিকে স্বাগত জানায়। সুতরাং বন্দরআব্বাস কেবল একটি বাণিজ্যিক শহরই নয় বরং এটি ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সামুদ্রিক পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে একটি। বন্দরআব্বাস শহরের আবহাওয়া গরম এবং আর্দ্র। সাধারণত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বন্দরআব্বাসের আবহাওয়া থাকে উপভোগ্য ও মনোরম। সবচেয়ে গরম দিনগুলোতে বন্দর আব্বাসের তাপমাত্রা থাকে বায়ান্ন ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং সবচেয়ে ঠাণ্ডা দিনগুলোতে এখানকার আবহাওয়া থাকে দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মতো।

বন্দর আব্বাসের মানুষের ভাষা বন্দরি। প্রাচীন ফারসি ভাষার বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করেই এই বন্দরি ভাষাটি ফারসি ভাষার অন্যতম একটি উপভাষা হিসেবে গড়ে উঠেছে। জেনে রাখা ভালো যে বন্দর আব্বাস থেকে ইরানের রাজধানী শহর তেহরানের দূরত্ব হলো বারো শ সাতাশি কিলোমিটার এবং করমানের দূরত্ব চার শ একানব্বুই কিলোমিটার। বন্দর আব্বাসের বেশ কয়েকটি নাম ছিল। এর পূর্বের একটি নাম হলো বন্দর গামব্রোন। ষোলো শ বাইশ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন ইরানের শাসক শাহ আব্বাসের সৈন্যরা ইরানের সেনাপতি ইমাম কুলি খানের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইরানের এই বন্দরআব্বাস এলাকায় পর্তুগিজদের পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছিল। এই বিজয়ের সম্মানে এবং তাকে ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় করে তোলার স্বার্থে বন্দর গামব্রোনের নাম পরিবর্তন করে বান্দর আব্বাস নামকরণ করা হয়।

ভ্রমণের একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ হলো যে শহরে বেড়াতে যাওয়া হয় সেই শহরের নতুন পুরাতন বাজারের সঙ্গে পরিচিত হওয়া। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শহরের বা ওই এলাকার স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, সেখানকার মানুষের মাঝে প্রচলিত রীতি-আচার, প্রবণতা ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হওয়া। বিশেষ করে সেই এলাকার বিশেষ কোনো উপহার থাকলে তার সাথেও পরিচিত হবার চেষ্টা করা ভ্রমণকারীদের কৌতূহলের অংশ। সুতরাং আমরাও বন্দর আব্বাসের ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলো ঘুরে দেখার চেষ্টা করবো। বন্দরআব্বাস শহরের যে-কোনো বাজারে গেলে প্রথমে চোখে পড়বে ওই এলাকার নারীদের পরণের বিচিত্র রঙীন পোশাক আশাক। স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নারীদের এই ব্যতিক্রমধর্মী চলাফেরা যে-কোনো ভ্রমণরসিককেই আকৃষ্ট করে।

এসব পোশাকে অ্যামব্রয়ডারির কারুকাজ, মাদুর বুনন, শুচিকর্মের কাজ ইত্যাদি বেশ আকর্ষণীয়। এছাড়াও এখানে রয়েছে বিচিত্র সী-ফুড। রয়েছে বিভিন্ন রকমের খাবার দাবার। বন্দরআব্বাসের হস্তশিল্প সামগ্রীও চোখে পড়ার মতো। বন্দর আব্বাস ফিশ মার্কেটকে বলা হয় ইরানের বৃহত্তম মাছের বাজার। এই দর্শনীয় বাজার ঘুরে ফিরে দেখার পর বাজারের সামান্য উপরের রেস্তোঁরাগুলোর উপস্থিতিও চোখে পড়বে। শহরের কেন্দ্রেও রয়েছে অনেকগুলো আধুনিক শপিংমল। এইসব মল ভ্রমণকারীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ