মার্চ ১৯, ২০২১ ১৬:৫৬ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে বসে আমাদের অনুষ্ঠান শুনছো- সবাই ভালো ও সুস্থ আছো। আজকের আসরে তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি নাসির মাহমুদ এবং আমি আকতার জাহান।

আকতার জাহান: বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, আমাদের সমাজে ধনী ও বিত্তবান লোকের পাশাপাশি গরিব, এতিম, মিসকিন, আশ্রয়হীন ও অসহায় মানুষেরা বাস করে। গরীব-দুঃখীদের দুঃখ-কষ্ট মোচনে সাহায্য-সহযোগিতা করা, দান-খয়রাত এবং সেবা-যত্ন করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, “তোমরা যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয় বস্তু দান-খয়রাত করবে, সে পর্যন্ত কোনো সওয়াব  পাবে না।”

নাসির মাহমুদ: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেছেন, “যারা অঢেল ধন-সম্পদ-অর্থ সঞ্চয় করছে, তারা যেন দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার আগেই আল্লাহর নামে দান-খয়রাত করে যেতে থাকে।”

আকতার জাহান: অনেকেই আছে যারা সাহায্যপ্রার্থীকে সাহায্য না করে উল্টো ধমক দিয়ে বসে। এমনটি করা মোটেও ঠিক নয়। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, 'তোমরা দান প্রার্থীকে ধমক দিও না।' তিনি আরো বলেছেন, "হে ইমানদারগণ, তোমরা দান গ্রহীতাকে কোনো খোঁটা বা কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান-খয়রাত সাহায্য ও সেবাকে বরবাদ করে দিও না।"  

নাসির মাহমুদ: বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। তাঁদের কাছে কেউ কিছু চাইলে যা কিছু থাকত তাই দান করে দিতেন। নিজেরা অভুক্ত থেকেও গরিব, এতিম, মিসকিন, অসহায়-অভাবী মানুষদের আহার করাতেন।

আকতার জাহান: বন্ধুর, দানশীলতার গুরুত্ব নিয়ে এসব কথা বলার উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছো! হ্যাঁ, আজ আমরা নবী-নন্দিনী হযরত ফাতিমা (সা. আ.)-এর  দানশীলতা সম্পর্কে একটি সত্য ঘটনা শোনাব। আর সবশেষে থাকবে একটি গান। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান। 

নাসির মাহমুদ: মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) একদিন মসজিদে নববীতে বসে আছেন। এমন সময় এক বৃদ্ধ মুসাফির নবীজীর সামনে এসে দাঁড়াল। সে করজোড়ে ফরিয়াদ জানাল, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি খুব ক্ষুধার্ত, আমাকে খাবার দিন; আমার পরনের জামাটাও ছিড়ে গেছে, একটা জামা দিন; আমি একজন মুসাফির, আমার কোন বাহন নাই-আমাকে একটা বাহনের ব্যবস্থা করুন।”

আকতার জাহান: মহানবী খুব মনোযোগ দিয়ে লোকটির ফরিয়াদ শুনলেন। এরপর বললেন, “হে মুসাফির! আমার কাছে এখন তেমন কিছু নেই যে তোমাকে দেবো। তুমি আমার মেয়ে ফাতিমার কাছে যাও। সে হয়তো তোমাকে সাহায্য করতে পারবে।”

নাসির মাহমুদ: নবীজীর কথামতো মুসাফির হযরত ফাতিমার বাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ল। ভেতর থেকে হযরত ফাতিমা আগন্তকের পরিচয় জানতে চাইলেন। মুসাফির বলল, “মা আমি এক বৃদ্ধ মুসাফির। বড়ই ক্ষুধার্ত। আমার পরনের জামাটিও ছিঁড়ে গেছে। চলার মত কোন বাহনও নেই আমার। আমাকে কিছু সাহায্য করুন মা।”

আকতার জাহান: মুসাফির যখন তার ফরিয়াদ জানাচ্ছিল তখন হযরত ফাতিমার ঘরে কোনো খাবার ছিল না। দেয়ার মত কোন জামাও ছিল না। কিন্তু অসহায় একজন মুসাফিরকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে তাঁর মন চাইল না। তাই তিনি নিজের গলার হারটি বৃদ্ধ মুসাফিরকে দিয়ে বললেন, “এই হারটি ছাড়া দেয়ার মত আর কিছু নেই আমার। এটা নাও, বিক্রি করে যা পাবে তা দিয়ে তোমার অভাব পূরণ কর।”

নাসির মাহমুদ: হারটি পেয়ে মুসাফির খুশিতে আটখানা! সে আবার মসজিদে নববীতে গিয়ে হাজির হলো। নবীজীকে হারটি দেখিয়ে বলল, “হে রাসূল! আপনার মেয়ে ফাতিমা তাঁর গলার হারটি আমাকে দিয়ে দিয়েছেন বিক্রি করার জন্য।”

আকতার জাহান: এ কথা শুনে সাহাবীদের অনেকেই চমকে উঠলেন। হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের মনটা মায়ায় ভরে উঠল। এমন ত্যাগ দেখে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। এরপর বৃদ্ধ মুসাফিরকে বললেন, “কত পেলে তুমি ওই হারটি আমার কাছে বিক্রি করবে?”

নাসির মাহমুদ: মুসাফির জবাবে বলল, “পেট পুরে খাবার, পরনের একটি ভালো জামা আর বাড়ি ফেরার জন্য একটি বাহন পেলেই আমি খুশী।”

আকতার জাহান: আম্মার বললেন, “ঠিক আছে। তোমাকে যথেষ্ট খাবার, ভালো ইয়েমেনি কাপড় এবং বাড়ি ফেরার জন্য একটি মোটাতাজা উট দেবো। আর বাড়তি আটটি সোনার মোহর ও দুশ’ রুপার দিরহামও দেবো। তুমি হারটি আমার কাছে বিক্রি করে দাও।”

নাসির মাহমুদ: মুসাফির আম্মারকে হারটি দিতে রাজি হল। কথামত দাম পরিশোধ করলেন আম্মার। পেট পুরে খেয়ে দামী জামা গায়ে দিয়ে একটি মোটা তাজা উটের পিঠে চড়ে মুসাফির রওনা হল তার বাড়ির দিকে।

আকতার জাহান: হযরত আম্মার হারটির গায়ে আতর মাখলেন। তারপর ওটাকে একটি কাপড়ে মুড়ে তার গোলামের হাতে দিয়ে বললেন, “নবীজীর কাছে যাও। এই হার ওনাকে দেবে। আর তুমিও তাঁর কাছে থাকবে।”

নাসির মাহমুদ: গোলাম খুশি মনে হারটি নিয়ে মহানবীর কাছে গেল। তাঁকে সবকিছু খুলে বলল। মহানবী গোলামের কথা শুনে আম্মারকে ধন্যবাদ জানালেন। তারপর গোলামকে বললেন, “আম্মার তোমাকে আমার কাছে পাঠিয়েছে। আর আমি তোমাকে ফাতিমার জন্য দিয়ে দিলাম। এই হারটি নিয়ে তুমি ফাতিমার কাছে চলে যাও।”

আকতার জাহান: গোলাম মা ফাতিমার কাছে হারটি নিয়ে গেল এবং সব কিছু খুলে বলল। গোলামের কথা শুনে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালেন হযরত ফাতিমা। আম্মার ইবনে ইয়াসিরের জন্য দোয়া করলেন। তারপর গোলামকে বললেন, “তোমাকও আমি মুক্ত করে দিলাম। আজ থেকে তুমি স্বাধীন।”

নাসির মাহমুদ: গোলাম মা ফাতিমার কথা শুনে খুশি হয়ে বলল, “বাহ! কী দারুণ এক হার! এটি একজনকে পেট পুরে খাওয়াল, নতুন কাপড় পরাল, গরীবের জন্য টাকা ও বাহনের ব্যবস্থা করল, একজন ক্রীতদাসও মুক্তি পেল। আবার যাঁর হার তাঁর কাছেটা আবার ফিরে এলো! সত্যিই কী চমৎকার ব্যাপার!

আকতার জানান: বন্ধুরা, ঐতিহাসিক এ ঘটনাটি থেকে তোমরা নবীনন্দিনী হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর দানশীলতা সম্পর্কে জানলে। তোমরা সবাই সাধ্যমত গরীব ও অসহায় বন্ধুদের সাহায্য করবে এবং পিতা-মাতাকেও বলবে তাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য। তাহলেই সমাজে নেমে আসবে শান্তির সুবাতাস।

নাসির মাহমুদ: বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে রয়েছে একটি গান। গানের কথা ও সুর আমিনুল ইসলাম মামুনের। গেয়েছে কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য আমানিল্লাহ সিয়াম।

আকতার জাহান: তোমরা গানটি শুনতে থাকো আর আমরা বিদায় নিই রংধনুর আজকের আসর থেকে।

নাসির মাহমুদ: কথা হবে আবারো আগামী সপ্তাহে।

 

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ