স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: ঢাকায় মোদিকে লাল গালিচা সংবর্ধনা, মোদিবিরোধী সংঘর্ষে নিহত ৪
প্রিয় পাঠক/শ্রোতা! ২৬ মার্চ শুক্রবারের কথাবার্তার আসরে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতেই ঢাকা ও কোলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রধান প্রধান বাংলা দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিরোনাম তুলে ধরছি।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:
- ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু-ইত্তেফাক
- স্বাধীনতার ঘোষক একজনই, তিনি বঙ্গবন্ধু-ওবায়দুল কাদের
- প্রচারে তোপ: ‘বিজেপি বাংলা জানে না, বলে সুনার বাংলা, ওরা সোনার বাংলা গড়বে?’: মমতা মোদিবিরোধী বিক্ষোভ: বায়তুল মোকাররম রণক্ষেত্র, আহত অর্ধশতাধিক
- ‘জনগণকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে সরকার’-ফখরুল -মানবজমিন
- রাজশাহীতে বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের পর আগুন, নিহত ১৭ -প্রথম আলো
- মোদির সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ, ৩০ জন রিমান্ডে -কালের কণ্ঠ
- এ সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে-বাংলায় টুইট মোদির-বাংলাদেশ প্রতিদিন
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:
- প্রচারে বিজেপিকে তোপ-মমতার : ‘বিজেপি বাংলা জানে না, বলে -ওরা সোনার বাংলা গড়বে?’: মমতা -আনন্দবাজার পত্রিকা
- মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় মোদি, মহাসমারোহে স্বাগত জানালেন হাসিনা-সংবাদ প্রতিদিন
- নন্দীগ্রামে গুন্ডাদের আশ্রয় দিচ্ছেন শুভেন্দু, হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছে, প্রমাণ সহ কমিশনে তৃণমূল-আজকাল
শ্রোতাবন্ধুরা! এবারে চলুন বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। প্রথমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর।
ইত্তেফাকসহ প্রায় সব জাতীয় দৈনিকের প্রধান খবরে লেখা হয়েছে, ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় আজ। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে আজ ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকায় এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতার পর, নরেন্দ্র মোদি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদি-১৪ দল ও জাপার সঙ্গে বৈঠক করেছেন-সে বৈঠকে তিস্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে সাকিব মাশরাফিদের সাক্ষাৎ হয়েছে- হয়েছে আড্ডা।
ঢাকা সফরের আগে এক বার্তায় নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ কোটি মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার বলে জানিয়েছিলেন। এদিকে ভারতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
হাটহাজারীতে পুলিশ-হেফাজত সংঘর্ষ, নিহত ৪-মানবজমিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে হাটহাজারীতে পুলিশের গুলিতে ৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শিলব্রত বড়ুয়া চার জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হাটহাজারী থেকে ৪ জন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে চমেক হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মোদিবিরোধী বিক্ষোভ-বায়তুল মোকাররম রণক্ষেত্র, আহত অর্ধশতাধিক-যুগান্তর
মোদিবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে মুসল্লি, পথচারী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় ৬টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, শুক্রবার জুমার নামাজের মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের একাংশ মোদিবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করলে এ সংঘর্ষ বাধে। মুসল্লিরা মোদিবিরোধী স্লোগান দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মসজিদের উত্তর পাশের ফটকে মিছিলকারীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে তারা মিছিলকারীদের মারধর করেন। এতে বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়ে। কিছু সময় পর বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে পুলিশ মসজিদের দিকে টিয়ার গ্যাস ও পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। বর্তমানে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দৈনিকটির অপর একটি খবরে লেখা হয়েছে, মতিঝিলে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ: নুরকে বাদ রেখে ৫১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
‘জনগণকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে সরকার’-ফখরুল-দৈনিক মানবজমিনের
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের এই দিনে বাংলাদেশ তথা পুরো ঢাকা শহরের যে অবস্থা সেটা কারো কাছে প্রত্যাশিত নয়। সারা শহর একটা অঘোষিত কারফিউর মতো রয়েছে। জনগণের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জনগণকে বাদ দিয়ে দিনটি সরকার আজ উদযাপন করছে। বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য যে কমিটি ছিল সে কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের অনেক কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সেটা আমরা পালন করতে পারেনি। আমরা আজকে স্মৃতিসৌধেও যেতে পারিনি। শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারোটায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনার কারণে আমাদের বাইরের যে কর্মসূচিগুলো ছিল ওইগুলো আমরা বাতিল করেছি।
স্বাধীনতা ঘোষক একজনই, তিনি বঙ্গবন্ধু: কাদের-সমকাল
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণার পাঠক অনেকেই হতে পারে, কিন্তু ঘোষক একজনই। তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে দলীয় নেতাবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণার বৈধতা পেয়েছিলেন। কাজেই স্বাধীনতার ঘোষণার পাঠক অনেকেই হতে পারে কিন্তু ঘোষক একজনই, তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দৈনিক মানবজমিনের কয়েকটি খবর: বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল্স (বিইউপি) ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন তাঁর মতামত কলামে লিখেছেন,সুবর্ণ জয়ন্তী কতটুকু সুবর্ণ। তিনি লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২-এর ভাষণ থেকে। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে, যার ভিত্তি কোনো ধর্মীয়ভিত্তিক হবে না।
বাংলাদেশের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ পরে যোগ হয়েছিল জাতীয়তাবাদ। ফলে সংবিধানে (৪ঠা নভেম্বর ১৯৭২) চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি নির্দেশ করা হয়। সংবিধান অনুমোদনের দিন গণপরিষদে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমাদের আদর্শ ঠিক হয়ে গেছে। এই আদর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ চলবে।’ বঙ্গবন্ধু আদর্শ বলতে চার মূলনীতি ভিত্তিক আদর্শের কথা বলেছিলেন। এখন প্রশ্ন দুটো হলো: বাংলাদেশ কতটুকু আদর্শ রাষ্ট্র হলো? এবং চার মূলনীতির আদর্শ কতটুকু প্রতিফলিত হলো?
হিসাব মেলানোর প্রেক্ষাপট পেলাম; এখন মোটা দাগে বিগত ৫০ বছরের খতিয়ান নেয়া যেতে পারে।
স্বাধীনতা বাঙালিকে আত্মমর্যাদা দিয়েছে, ইতিহাসে বাঙালি এই প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছে, পেয়েছে আত্মপরিচয়। পতাকা আর সার্বভৌমত্ব; সবুজ পাসপোর্ট এসব কিছুর প্রতীক। জন্মলগ্নে অবশ্য আমাদের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। হেনরী কিসিঞ্জারের অভিসস্পাত ছিল, আমরা তলাবিহীন ঝুড়ি হবো। দুজন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফায়াল্যান্ড এবং জে. আর. পার্কিনসন বলেছিলেন আরো কিছু নেতিবাচক কথা। এক, বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বের কঠিনতম সমস্যার একটি। দুই, বাংলাদেশের উন্নয়ন হলে সব দেশেরই উন্নয়ন সম্ভব হবে। তিন, বাংলাদেশের উন্নয়ন যদিও হয়, তাহলে অন্তত দু’শ’ বছর লাগবে।
দুর্মূখের অভিসম্পাত ও আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য। বর্তমান সরকার প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। মাঝে ’৭৫ থেকে ’৯০, ’৯০ থেকে ’৯৬; এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ ছিল নষ্ট সময়, যখন বাংলাদেশ ছিল বেপথু। ২০১৬-তে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোলমডেল’ হিসেবে তকমা দেয়। এখন তো স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের তকমা পাওয়া গেছে। আর্থসামাজিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ যে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে, সে কথা তো অমর্ত্য সেন তার Uncertain Glory বইতে বলেছেন। দু’শ’ বছরেও যে রাষ্ট্রের উন্নয়ন হওয়ার কথা নয়, সে রাষ্ট্র ৫০ বছরেই যা অর্জন করেছে তাতে সারাবিশ্ব এখন বলছে ‘সাবাস বাংলাদেশ/ অবাক পৃথিবী তাকিয়ে রয়।’ আমরা গর্বিত। আমাদের আত্মশ্লাঘা বোধে বুক আজ স্ফীত। পদ্মা সেতু আমাদের অহঙ্কার। বিশ্বব্যাংকের গালে চপেটাঘাত করে আমাদের জনগণের টাকায় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্তে এ সেতু সর্বৈব আমাদের। জনগণই তো সব করবে; সরকার নিমিত্ত মাত্র। কারণ সংবিধানের ৭(১) ধারা জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা দিয়েছে। কাজেই জনগণের টাকায় জনগণের সম্পদ এ সেতু; কোনো দল ও গোষ্ঠীর নয়।
কিন্তু আমাদের glory তো অণুপুঙ্খ বিচারে uncertain। বাংলাদেশ যা অর্জন করেছে তা প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন নয়। কারণ উন্নয়ন মানে সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির ফসল বৈষম্যহীন ভাবে বন্টিত হলে উন্নয়ন নিশ্চিত হবে; আর এ কাজটি বাংলাদেশে এখনো করা হয়নি। বৈষম্য ক্রমবর্ধমান; গত দেড় দশকে ৬০-৭০ ভাগ বৈষম্য বেড়েছে।
ধর্ম নিরপেক্ষতা সমাজতন্ত্রের মতো কাজির গরু; সংবিধানে আছে, মুখে আছে, কিন্তু বাস্তবে নেই। কারণ ১৫তম সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধানে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ফিরিয়ে আনা হয়েছে; যার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু একই সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম সহাবস্থান করে কী করে? তেলে-জলে কি মেলে? সরকার মেলাতে চাইলেও তা অবাস্তব। ফলে সংবিধান এখন গোঁজামিলের দলিল।
দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারি ঐকান্তিকতা ও পারঙ্গমতা দৃশ্যমান নয়। যাদের ঘামে-শ্রমে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সেই কৃষক ধানের দাম পান না। অথচ শামসুর রাহমানের পঙ্ক্তি আছে, ‘স্বাধীনতা মানে ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।’ আমাদের কৃষক কি এখন হাসে? শাসনে আমলতান্ত্রিক প্রাবল্য দৃশ্যমান। সুশাসন তো পরের কথা, শাসনই প্রশ্নবিদ্ধ। প্রশ্নবিদ্ধ বিচার ব্যবস্থা। সাগর-রুনি হত্যার প্রতিবেদন ৭৯ বার পিছিয়েছে; ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র আজও দেয়া হয়নি।
একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, আমাদের অর্থনীতি সচল, কিছু কিন্তু সত্ত্বেও আগুয়ান; বিপরীতে রাজনীতি প্রতিদিনই অনুন্নয়নের দিকে পিছিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি ওপরে ওঠে; রাজনীতি নিচে নামে। রাজনীতি-অর্থনীতির বৈপরীত্য অশনিসংকেত।
আমরা বিগত পঞ্চাশ বছরে পেয়েছি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, যাতে শুভঙ্করের ফাঁক আছে; কিন্তু হারিয়েছি গণতন্ত্র। গণতন্ত্র হারিয়ে পাওয়া, পেয়ে হারানের গল্প। আর চার মূলনীতি তো এখন হারানো দিনের হারানো সুর। সুতরাং পঞ্চাশ বছরের অর্জন নিয়ে আমাদের এখনো যেতে হবে বহুদূর।
আর সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, গণতন্ত্রহীন উন্নয়নের পরিণতি অশুভ। তিনি তার বক্তব্যে বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরেছেন। তার মূল কথায় উঠে এসেছে, আজ আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের দ্বারপ্রান্তে। এরইমধ্যে আমরা আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালন করেছি। আজকের এ মহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আমার মনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছে: বঙ্গবন্ধু যদি জানতেন তার স্বপ্নের বাংলাদেশে, তার নিজের হাতে গড়া আওয়ামী লীগের শাসন আমলে, একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণীত হবে মানুষের কতগুলো মৌলিক মানবাধিকার হরণ করে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য, যার বলি হবে লেখক মোশতাক এবং জেলে যাবে কার্টুনিস্ট কিশোর এবং আরো অনেকে, তাহলে কি তিনি আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন? তিনি যদি জানতেন যে বিএনপি’র আমলে শুরু হওয়া বিচার বহির্ভূত হত্যা আওয়ামী লীগের আমলেও অব্যাহত থাকবে এবং দেশে একটি গুমের সংস্কৃতির প্রচলন হবে, তাহলে কি তিনি বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতেন? আর আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যদি জানতেন যে স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হবে, যে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা অকাতরে জীবন দিয়েছিলেন, তাহলে কি তারা পকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেন? ভবিষ্যতে বাংলাদেশে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন ও লুটপাটের একটি স্বর্গরাজ্যে এবং উগ্রবাদের সূতিকাগারে পরিণত হবে এমন জানলে আমাদের মা-বোনরা কি তাদের ইজ্জতকে বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে জড়িত হতেন?
এটি সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার আজ চরমভাবে লঙ্ঘিত। আইনের শাসন নগ্নভাবে পদদলিত। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা বহুলাংশে তিরোহিত। লুণ্ঠন ও বঞ্চনা সর্বত্র। ভোটাধিকার অপহৃত। এক কথায়, গণতন্ত্রহীনতার এক নির্লজ্জ উল্লাস যেন আজ চারদিকে। কিন্তু কীভাবে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো হারিয়ে গেল?
একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য মোটাদাগে তিনটি জিনিস প্রয়োজন: গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। ক্ষমতা রদবদলের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হলো নির্বাচন। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সর্বস্তরে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। যার মাধ্যমে জনগণের সম্মতির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীনদের ‘ডাউনওয়ার্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি’ বা নিম্নমুখী দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে জনগণের স্বার্থে ও কল্যাণে। আমাদের দেশে এক তরফা নির্বাচনসহ মধ্যরাতের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে।
আমাদের ক্ষমতাসীনরা উন্নয়নের যে একটি বিকৃত সংজ্ঞা ব্যবহার করছে তা নোবেল বিজয়ী উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের লেখা থেকেই সুস্পষ্ট। তিনি তার Development as Freedom গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে উন্নয়নের জন্য ব্যক্তি সত্তার স্বীকৃতির পাশাপাশি তার সামর্থ্যের বিকাশ আবশ্যক, আর তার এ সামর্থ্যের বিকাশ বহুলাংশে নির্ভর করে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং যেসব স্বাধীনতা সে ভোগ করে তার ওপর। অমর্ত্য সেনের মতে, মানুষের স্বাধীনতার ক্ষেত্রসমূহের বিস্তৃতি উন্নয়নের একদিকে যেমন লক্ষ্য এবং একই সঙ্গে মাধ্যমও। তাই শুধু আয় ও সম্পদই নয়, ভোগ করা নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাও মানুষের জীবনমানের অপরিহার্য পরিমাপক।
এবার ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে পাল্টাপাল্টা বক্তব্য বিশেষ গুরুত্বসহ পরিবেশিত হয়েছে বিভিন্ন দৈনিকে।
দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, মোদিকে তোপ মমতার-বাংলা জানে না-সোনার ওরা বাংলা গড়বে।আর সংবাদ প্রতিদিনে লেখা হয়েছে, উনি রাক্ষস,বাংলাকে গিলতে এসেছেন। নাম না করে অমিত শাহকে নজিরবিহীন আক্রমণ মমতার। নির্বাচনের আগে বহিরাগতরা রাজ্যে অশান্তির চেষ্টা করছে আর তা চলছে বিজেপির মদতে। বিভিন্ন জনসভা থেকে আজ এ অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর মমতার আশঙ্কা-ভিনরাজ্যের পুলিশ খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে পারে।
নন্দীগ্রামে গুন্ডাদের আশ্রয় দিচ্ছেন শুভেন্দু, হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছে, প্রমাণ সহ কমিশনে তৃণমূল-আজকালের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, বঙ্গভোটের অন্যতম ‘নজরকাড়া’ কেন্দ্র নন্দীগ্রামে ‘বহিরাগত গুন্ডা’দের আশ্রয় দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। কার বাড়িতে গুন্ডাদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে, নাম–ঠিকানা উল্লেখ করে কমিশনে নালিশ জানাল তৃণমূল। শুধু তাই নয়, কাঁথি (উত্তর এবং দক্ষিণ), ভগবানপুর, খেজুরি, এগরা, রামনগর, পটাশপুরে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর দাবিও জানায় ঘাসফুল শিবির।
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে তৃণমূলের দাবি, কাঁথি (উত্তর এবং দক্ষিণ), ভগবানপুর, খেজুরি, এগরা সহ একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনের সময়ে হিংসা ছড়ানোর ছক কষেছে বিজেপি। ওই সব এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা কম থাকায় পর্যাপ্ত নজরদারি চলছে না। অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানোর পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে যাতে আরও সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ করার আবেদন জানান রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়ানের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল।
নন্দীগ্রামে ‘বহিরাগত গুন্ডা’দের আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে মোট ৯টি জায়গার নাম উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
ভোটের আগেই বিধানসভায় বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা ৬ গুণ বেড়ে ৩৬, সৌজন্যে দলবদল-আনন্দবাজার পত্রিকা
ভোট শুরুর আগেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপি-র বিধায়ক সদস্য সংখ্যা ৬ গুণ বেড়ে গেল। ২০১৯-এ বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৬। এই মুহূর্তে তা বেড়ে হয়েছে ৩৬। সৌজন্যে একাধিক বিধায়কের দলবদল।
২০১৬-য় রাজ্যে ১৬তম বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র মাত্র ৩ জন বিধায়ক জয়ী হয়েছিলেন। খড়্গপুর সদর আসন থেকে জিতে বিধানসভায় এসেছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মাদারিহাট থেকে এসেছিলেন মনোজ টিগ্গা। একই সঙ্গে বৈষ্ণবনগর থেকে জিতে বিধানসভায় এসেছিলেন স্বাধীন সরকার। পরে ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনের সময় রাজ্যে যে উপনির্বাচন হয়, তাতে বিজেপি ৪টি আসন পায় (দার্জিলিং, কৃষ্ণগঞ্জ, ভাটপাড়া ও হবিবপুর)। ফলে বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭। কিন্তু ওই নির্বাচনেই মেদিনীপুর আসন থেকে সাংসদ হন দিলীপ। ফলে তিনি খড়্গপুর সদর আসন থেকে বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন। সেই থেকে পদ্ম-প্রতীকে জেতা বিধায়কের সংখ্যা ৬। কিন্তু ১৭তম বিধানসভা নির্বাচন যখন দোরগোড়ায়, তখন বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা পৌঁছে গেল ৩৬-এ।
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।