এপ্রিল ০১, ২০২১ ০০:১০ Asia/Dhaka

পার্সিয়ান উপসাগরের মুক্তো হিসেবে পরিচিত "কিশ দ্বীপ" একটি প্রবাল দ্বীপ। পারস্য উপসাগরের অন্যতম আকর্ষণীয় দ্বীপ এটি। এখানকার প্রশান্ত সমুদ্র সৈকত, প্রবাল, ঝিকমিকে বালুকণা, স্বচ্ছ জল এবং নীলাভ সবুজ রঙের স্বচ্ছ সমুদ্রসহ বিচিত্র রঙিন আলংকারিক মাছ দেখে রসিক মনের সৌন্দর্য পিয়াসি চেতনা মেটানো যাবে সহজেই।

বাণিজ্যিক কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক মানের বাজার বা শপিং সেন্টার, পর্যটক সেবার যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা মানে থাকার ব্যবস্থার জন্য রয়েছে পাঁচতারা হোটেল, মোটেল এবং আধুনিক ও উন্নত মানের ভিলা ইত্যাদি। পর্যটন আকর্ষণীয় সুন্দর সুন্দর স্থান এবং নীল সাগরের সুন্দর দৃশ্যের কারণে কিশ দ্বীপ দক্ষিণ ইরানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এই কিশকে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার চতুর্থ পর্যটন কেন্দ্রের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে পর্যটন সংস্থা।

প্রশ্ন বা কৌতূহল জাগতে পারে যে এই দ্বীপে এতো বেশি পর্যটকের আনাগোণা কেন? জবাবটা আমরা আগেও খানিকটা দিয়েছি। আজো দিচ্ছি কারণ এই তথ্যটি অনেকেরই কাজে লাগতে পারে। সেটা হলো সকল বিদেশি নাগরিকের জন্য এই দ্বীপে প্রবেশ ভিসা নেওয়ার দরকার করে না। সুন্দর এই কিশ দ্বীপ ভ্রমণে তেমন কোনো জটিলতাও ভোগ করতে হয় না পর্যটকদের। যারা ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন তাদের জন্য এই তথ্যটিও কাজে লাগতে পারে। এখান থেকে ইরানের বিখ্যাত বন্দর আব্বাসের দূরত্ব তিন শ কিলোমিটার আর কেশম দ্বীপের দূরত্ব দুই শ পঁচিশ কিলোমিটার। সুতরাং যারা ব্যবসায়িক উদ্দেশে কীশে যেতে চায় তাদের জন্য এই দুটি বাণিজ্যিক বন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিশের এক বিস্ময় হলো এখানকার অসম্ভব সুন্দর সমুদ্র সৈকত। কিশের বালুকাময় সমুদ্র সৈকতের ঝিকমিকে আঁচল যেন প্রবাল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বালুকার রেণুতে রোদের রৌপ্যময় ঝলক এমন এক বিস্ময়কর দৃশ্যের অবতারণা করে যে এককথায় এ এক অনন্য সৌন্দর্য। এখানকার পরিষ্কার নীল জলের স্বচ্ছতার কারণে সমুদ্রের কয়েক মিটার গভীরের দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। যার কারণে কিশের সমুদ্রকে প্রাকৃতিক অ্যাকোয়ারিয়ামের মতো মনে হয়। পরিবেশবিদরা এই বৈশিষ্ট্যের জন্য বলে থাকেন যে দ্বীপের চারপাশে বিদ্যমান প্রবালের উপস্থিতির কারণেই এখানকার সৈকতের পানি এতোটা স্বচ্ছ। পরিবেশবিদদের বিশ্বাস প্রবালগুলো প্রাকৃতিকভাবে জলকে বিশুদ্ধ করে। যার ফলে এই দ্বীপের তীর মানে উপকূল এতোটা সুন্দর।

কিশ দ্বীপ নিয়ে কথা হচ্ছিলো। আয়তনের দিক থেকে এই দ্বীপটি বিশ্বের বিস্তৃত সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে একটি। ভ্রমণকারীরা সৈকতের ভিড়, কোলাহল থেকে দূরে নীল সমুদ্রের এই বিস্তীর্ণ সৈকতে প্রশান্তির নিশ্বাস নিতে পারেন। সৈকতের রাস্তা এবং মহাসড়কগুলোও খুব সুন্দরভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তার দু'পাশে সুশোভিত খেজুর গাছের সারি আর বিচিত্র বর্ণিল ফুল  দ্বীপটির সৌন্দর্য ও  আকর্ষণ ব্যাপক বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে বলাটা বোধ হয় অসমীচীন হবে না যে এই কীশ দ্বীপটি পারস্য উপসাগরীয় উপকূলের সবচেয়ে সবুজ এলাকা। গত দুই দশকে কীশ দ্বীপের উপকূলে দশ হাজার হেক্টরেরও বেশি জায়গাজুড়ে বিচিত্র গাছ লাগিয়ে বনাঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে।

কিশের উপকূলীয় এই বনাঞ্চলে যেসব প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে তার মধ্যে প্রধানত রয়েছে লোর মানে বুনো ডুমুরের মতো গাছ, তবে গাছের নীচের অংশ কিছু অশ্বত্থ গাছের মতো। এছাড়াও রয়েছে কুনার, পার্সিয়ান এবং পাকিস্তানি কহুর গাছ। এই গাছটির ইংরেজি নাম জান্দ আর বৈজ্ঞানিক পরিচয় হলো প্রসোপিস সিনেরারিয়া, রয়েছে বাবলা গাছ, ইউক্যালিপটাস গাছ এবং খেজুর গাছসহ আরও বহু প্রজাতির গাছ। তবে লোর মানে বুনো ডুমুরের মতো প্রজাতির গাছই এখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং প্রসিদ্ধ। অশ্বত্থ গাছের মতো এই গাছের ঝুলে থাকা শেকড়, গাছের পুরোণো বাকল, এই গাছের পাতা ইত্যাদি অন্যান্য গাছ থেকে লোর গাছকে আলাদা মর্যাদা ও দৃষ্টি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

লোর গাছের অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কথা বলছিলাম বিরতির আগে। মজার ব্যাপার হলো এই গাছের শেকড় এমনভাবে বৃদ্ধি পায় যে মাটির ওপর ছাতার মতো এগুলো ছায়া বিস্তার করে। লোর গাছ দীর্ঘায়ু হয়। কয়েক শ বছর বেঁচে থাকে এই গাছ। কীশে বহু প্রজাতির জীব-জন্তুর নিরাপদ বসবাসও লক্ষ্যণীয়। সবচেয়ে বেশি যে প্রাণীটি এখানে চোখে পড়বে তা হলো ইরানি হরিণ। কিশ দ্বীপের আশেপাশের জলে বিভিন্ন ধরণের খাবারের মাছ এবং সুন্দর এবং বিচিত্র বর্ণময় অ্যাকুরিয়ামের মাছ, প্রবাল, ঝিনুক, ডলফিন, কচ্ছপ ইত্যাদি পাওয়া যায়। দ্বীপের এইসব স্মৃতি সৌন্দর্য একদিকে যেমন অনন্য প্রাকৃতিক আকর্ষণ তেমনি পর্যটকরাও এগুলো দেখে আনন্দ বোধ করেন। পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো আরও বহু বিষয় রয়েছে এই দ্বীপে। সময়ের অভাবে সেসব সম্পর্কে আজ আর বলা গেল না।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ৩১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ