মে ২০, ২০২১ ২২:০১ Asia/Dhaka

আমরা ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ঐতিহাসিক প্রদেশগুলো সফর গত কয়েক কয়েক সপ্তা আমরা বুশেহর প্রদেশের বুশেহর শহর এবং তার আশপাশের পারস্য উপসাগরীয় নীল জলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়ায় দীপ্ত আরও বহু নিদর্শনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি।

হরমুজগান প্রদেশ থেকে পারস্য উপসাগরের উপকূলীয় পথ ধরে এগিয়ে যেতেই বুশেহর প্রদেশ মায়াবি হাতছানি দিয়ে ডেকেছে আমাদের। বু শেহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই প্রদেশের মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

তার পাশাপাশি এখানকার তেলের খনি এবং তেল শোধনাগারও শহরটির গুরুত্ব আগের তুলনায় অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া এখন তো বিশ্ববাসী খুব ভালোভাবেই জানে যে এই বু শেহরেই রয়েছে ইরানের পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনা। তেলের খনির সুবাদে এখানে গড়ে উঠেছে তেল, গ্যাস ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও। গত আসরে আমরা বলেছিলাম বু-শেহরে অসংখ্য ইমারত রয়েছে ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয়। এগুলো প্রাচীনত্বের দিক থেকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি নির্মাণ শৈলীগত দিক থেকেও। বু-শেহরের তেমনি একটি ইমারতের নাম হলো ‘কোলা ফারাঙ্গি’। কাজার শাসনামলের এই স্থাপনাটি এখন পারস্য উপসাগরের মেরিটাইম যাদুঘর হিসেবে পরিচিত। এই যাদুঘর নিয়ে গত আসরে আমরা কথা বলেছিলাম।

গত আসরেই আমরা বলেছিলাম যে আজকের আসরের শুরুতে এ এলাকার হস্তশিল্প সামগ্রী নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে আসরের সূচনা করার চেষ্টা করবো।  প্রথমেই গাব্বেহর সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক। গাব্বেহ হ'ল এক ধরণের হাতে বোণা কার্পেট। বুশেহর প্রদেশের অন্যতম প্রধান হস্তশিল্প এই গাব্বেহ। যা সাধারণত গেনাভেহ এবং দাশ্তেস্তান নামের গ্রামীণ অঞ্চলে বোণা হয়। গাব্বেহ এই বু-শেহর প্রদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য। গাব্বেহ দুই ধরণের আছে। একটা হলো রঙীন গাব্বেহ আরেক ধরনের গাব্বেহ হলো নিজস্ব মানে প্রাকৃতিক যে রঙ সেই রঙের গাব্বেহ-এই দুই ধরনের গাব্বেহ বোনা হয় এখানে। রঙিন গাব্বেহ বুণতে ভেড়ার পশম দিয়ে হাতে তৈরি করা সূতা ব্যবহার করা হয়। এই সূতোকে পরে প্রাকৃতিক উদ্ভিদ থেকে আহরণ করা রঙ দিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে রঙীন করা হয়।

বু-শেহরের গাব্বেহগুলোতে ব্যবহৃত নকশায় সৃজনশীলতা, রুচি, এবং চারপাশের জীবন, পরিবেশ ও প্রকৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলার একটা ঐতিহ্য রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিনের জীবন বোধ ও অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এখানকার স্থানীয় শিল্পীদেরই চিন্তার ফসল। নিজস্ব রঙের গাব্বেহর জমিনে ভেড়ার পশমের যে রঙ ঠিক সেরকম রঙেরই প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা হয়। বুশেহরের বিখ্যাত গাব্বেহগুলোর মধ্যে কয়েকটির নাম হলো: ইটের ডিজাইনের নকশাযুক্ত, গাছ-গাছালির নকশা, দুধেল সাদা এবং চার ঋতুর বিভিন্ন প্রাকৃতিক ডিজাইনে তৈরি গাব্বেহ ইত্যাদি।

হস্তশিল্প সামগ্রী গাব্বেহ কার্পেট নিয়ে কথা বলছিলাম। এবারে আবা কিংবা আবায়া প্রসঙ্গে যাওয়া যাক।  "আবা" হ'ল এক ধরণের নরম এবং টেকসই উলের কাপড় যা উটের পশম দিয়ে তৈরি করা হয়। বুশেহরের গ্রামাঞ্চলে বোনা বিশেষ এই পোশাকটি ইরানের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্রের অন্যতম। আবা’কে উচ্চারণভেদে আবায়া-ও বলা হয়। এই আবার চাদর বুনতে পশম তোলার পর  চুল থেকে এগুলোকে আলাদা করা হয় এবং ফ্যাব্রিকের জন্য খুব সূক্ষ্ম সুতো কাটা হয়। আবার কাপড়ের বুনন কাজগুলো সাধারণতই পুরুষরাই ঘরোয়াভাবে করে। বুশেহরের আবা তৈরির একমাত্র জায়গা হলো দাশতি উপশহরের নিকটবর্তী কার্দোভান গ্রাম।

আবার পশমি কাপড়ের রঙে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। কফির রঙ, বাদামি, মেহদি রঙ, কালো এবং সাদা ইত্যাদি রঙের আবা রয়েছে। এই অঞ্চলে উত্পাদিত আবাগুলো বুশেহরের অন্যতম বিখ্যাত হস্তশিল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এসব আবা আরব দেশগুলোতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। এর ফলে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির অনেক গ্রাহক রয়েছে বু-শেহরের আবা’র। গেলিম বোণা বু-শেহরের অপর একটি নামকরা হস্তশিল্প সামগ্রী। গেলিম হ'ল এক ধরণের আন্ডারলেমেন্ট মানে ফ্লোরে বিছানোর মতো একটা সামগ্রী। ছাগলের চুল বা ভেড়ার পশম কিংবা অন্যান্য চতুষ্পদ প্রাণীর পশম দিয়ে বোনা হয় গেলিম। গেলিমের ব্যবহার সাধারণত ফ্লোর ঢাকা, দেয়াল বা বিছানায় কিংবা বোঝা টানা প্রাণীর পিঠেও ব্যবহার করা হতো। আজকাল অবশ্য শহরের বাসাবাড়িতেও এই পণ্যগুলি আধুনিক কভার বা আন্ডারলেমেন্ট হিসাবে ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়।

বু-শেহরে বোনা গেলিমগুলিতে খুব সুন্দর এবং অনন্য সাধারণ ডিজাইন করা হয়। এ কারণে বুশেহরের গেলিম ইরানের অন্যতম সুন্দর গেলিম হিসাবে বিখ্যাত। জেনে রাখা ভাল যে পারস্য উপসাগরের উপকূলবর্তী প্রদেশ হবার কারণে এই প্রদেশে সমুদ্র-সংক্রান্ত বহু হস্তশিল্পের বিকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে পারস্য উপসাগরের ঝিনুক ব্যবহার করে সুন্দর সুন্দর গহনার বাক্স, খেলনা, পুতুল, অলঙ্কারাদি ইত্যাদির মতো পণ্য উত্পাদিত হয় এখানে। বুশেহরের এসব সামগ্রী দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি সহজেই আকর্ষণ করে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ