জুন ২০, ২০২১ ১৭:২৯ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠক! ২০ জুন রোববারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:

  • হেফাজতের ঘাঁটিতে দলীয় সাংসদ না থাকায় আওয়ামী লীগে হতাশা-প্রথম আলো
  • জুলাইয়েও খুলছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,এবারও হচ্ছে না প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা -ইত্তেফাক
  • দলের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না: কাদের -কালের কণ্ঠ
  • ক্ষমতায় থাকা মানে মানুষের সেবা করার সুযোগ-প্রধানমন্ত্রী-যুগান্তর
  • ওষুধ একটাই–মানবজমিন\
  • আরেক’হুমকির ‘মোকাবেল করতে যাচ্ছে বিশ্ব-আসছে ভয়াবহ মহামারি খরা-বাংলাদেশ প্রতিদিন

এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:

  • রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি রাজ্যের, সোমবার হাইকোর্টে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার শুনানি-আনন্দবাজার
  • আইএসএফ’র  সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয় নি, মোদিবিরোধী মুখ মমতাই, মত অধীরের -আজকাল
  • করোনায় মৃতের সংখ্যা চাপার চেষ্টা করছে একাধিক রাজ্য! কেন্দ্রর হুঁশিয়ারির মুখে ডাক্তাররা-সংবাদ প্রতিদিন

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু’টি বিষয়ের বিশ্লেষণে যাব। 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. ঢাকার মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে ১১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার জমি বেহাত- এটি দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের একটি শিরোনাম। কীভাবে এত জমি বেদখল হলো? এখানে সরকারের করণীয় কী?

২. ইরানের ত্রয়োদশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাইয়্যেদ ইবরাহিম রায়িসি বিজয়ী হয়েছেন। কীভাবে দেখছেন তার বিজয়কে?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ খুলব খুলব করেও খোলা হয়নি চলতি বছরে প্রথমার্ধ পর্যন্ত। এরইমধ্যে কয়েকবার খোলার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত আজকের খবর জুলাইয়েও খুলছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,এবারও হচ্ছে না প্রাথমিক সমপনী পরীক্ষা। সরকারি বিধিনিষেধ ও ঈদুল আজহার সঙ্গে মিলে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরও এক মাস বাড়তে পারে। সে হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী জুলাইয়েও খুলেছে না।

আজ রবিবার (২০ জুন) সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মাঝে করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো। হঠাৎ সংক্রমণ ও মৃত্যুর দুটিই বাড়ছে। করোনা সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না।’আর করোনার থাবায় খুলনা বিভাগে একদিনে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এবার ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবার পেল স্থায়ী ঠিকানা- কালের কণ্ঠসহ কয়েকটি দৈনিকের খবরে লেখা হয়েছে।

কালের কণ্ঠের রাজনৈতিক খবর- সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। দলের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের কোনো অবস্থাতেই দলে টানা যাবে না। ত্যাগীদের মূল্যায়ণ করতে হবে।'

রবিবার (২০ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

হেফাজত ইসলামের ঘাঁটি হাটহাজারীতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ নেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, এতে সেখানে নানা সাংগঠনিক দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। হেফাজত কিংবা অন্য বিরোধী শক্তিকে মোকাবিলা করার মতো কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগের নেই।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নেতারা তাঁদের হতাশার কথা জানান। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা হেফাজতে ইসলামকে ঠেকাতে দলের সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন।

ওষুধ একটাই-মানবজমিনের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম

বহুদিন হলো রাজনীতি নেই। বাঙালিদের জন্য এ দৃশ্য অভিনব। কারণ রাজনীতি খেয়ে, পান করে তারা বড় হয়েছেন। গ্রামে-গঞ্জে, চায়ের দোকানে, হাটে-বাজারে কত উজির-নাজির মারতেন তারা। আড্ডায় রাজনীতিই ছিল সবচেয়ে হট টপিক। চায়ের কাপে ঝড় তুলতেন হতদরিদ্র মানুষটিও। সে একটা সময় ছিল।

এখন করোনার কারণে রাজনীতি ঘরবন্দি। কিন্তু বাস্তবে রাজনীতি ছুটিতে গেছে আরও বহু আগে।

পরীমনি ইস্যু

তাই বলে বাংলাদেশে টপিকের যে অভাব তা নয়। একের পর এক ইস্যু আসছে। একটা ইস্যু নিয়ে ক’দিন চলে তুমুল মাতামাতি। এখন যার প্রায় পুরোটাই ফেসবুকে। কেউ কেউ একাধিক ফেসবুক আইডির মালিক। কেউ ভয়ে, কেউ নির্ভয়ে তাদের মতামত দেন। বিখ্যাত সাংবাদিক, ছড়াকার, বুদ্ধিজীবীরাও মত দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেক সময় হয়তো তারা চিন্তাও করেন না তার একটি মত কীভাবে অন্যের মনোজগতে আঘাত করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে দু’টি ইস্যু নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে। ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনির হেনস্তা এবং ধর্মীয় বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের হারিয়ে যাওয়া এবং ফিরে আসা ছিল আলোচনার শীর্ষে। যথারীতি এসব ইস্যুতে মানুষ কয়েকভাগে বিভক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে যার মতো মতামত দিয়েছেন। কিন্তু এই লেখকের মনে হয়েছে, আসল ইস্যুতে মানুষের মতামত পাওয়া গেছে কমই।

পরীমনির কথাই ধরা যাক। ঢাকাই সিনেমার এই শীর্ষ নায়িকাকে নিয়ে নানা আলোচনা। তবে এবার আলোচনার শীর্ষে আসেন তিনি একজন আবাসন ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ দিয়ে। তিনিও প্রথম এ অভিযোগ করেন, ফেসবুকের মাধ্যমে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান তিনি। পরে মামলা দায়ের করেন থানায়। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তদের। এ নিয়ে এখনো বাহাস চলছে ফেসবুকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ফলোয়ার এক কোটির কাছাকাছি। কিন্তু এদের সবাইকেই কি তার ভক্ত বলা যায়? এদের অনেকেই প্রায়শই অশ্লীল ভাষায় তাকে নিয়ে মন্তব্য করেন। এবারও তাকে নিয়ে যেসব মতামত পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে-  ১. তাকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টায় জড়িত প্রভাবশালীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ২. পরীমনি এতো রাতে  কেন ক্লাবে গিয়েছেন। তার পোশাক ভালো নয়। ৩. পরীমনিকে নিয়ে মিডিয়া বেশি প্রচারণা চালাচ্ছে।

ধর্মীয় বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিয়ে আলোচিত আবু ত্ব-হাকে নিয়েও বিস্তর চর্চা চলেছে। যদিও এটা স্বস্তিদায়ক যে তিনি ও তার সঙ্গীরা পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব মত দেখা যাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. তার বিষয়ে মিডিয়া নীরব ২. তাকে গুম করা হয়েছে। এতে বিদেশি কোনো সংস্থাও জড়িত থাকতে পারে। ৩. তিনি নাটক করেছেন।

দু’টি ঘটনাতেই একটি বড় অংশ মিডিয়াকে দোষারোপ করেছেন। এটা সত্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। কিন্তু সমালোচকদের এটা মনে রাখা প্রয়োজন- মিডিয়ার অবস্থা বহুলাংশে নির্ভর করে কোনো রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির ওপর। তারচেয়ে এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত দু’টি ঘটনার সঙ্গেই মিডিয়ার ভূমিকা মুখ্য নয়। এসব ঘটনায় প্রধান বিষয় হচ্ছে আইনের শাসন। আর এরসঙ্গে মুখ্য সংশ্লিষ্ট হচ্ছে, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের ভূমিকা। আরও খোলাসা করে বললে, দুটি ঘটনারই তদন্তের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও বিচারের দায়িত্ব বিচার বিভাগের।

পবিত্র কোরআনে যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ইনসাফ। ইনসাফ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে সমাজে এমন দুর্ঘটনা কমে আসবে। আর বিচার নিয়েও কাউকে চিন্তা করতে হবে না। আসল ওষুধের দিকেই মনোযোগ দেয়া উচিত সবার।

ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি রাজ্যের, সোমবার হাইকোর্টে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার শুনানি-আনন্দবাজার পত্রিকার এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে,ভোট পরবর্তী  হিংসা নিয়ে হাইকোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে রাজ্য গতকাল। সোমবার শুনানী হবে।বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় অশান্তির অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে গতমাসে হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা হয়।এ বিষয়ে হাইকোর্ট একটি কমিটি গঠন করে এবং তিন হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজ্যের কড়া সমালোচনা করে।অথচ রাজ্য প্রথম থেকে তা স্বীকারই করেনি।

অধীর রঞ্জন চৌধুরী

আইএসএফ’র  সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয় নি, মোদিবিরোধী মুখ মমতাই, মত অধীরের –আজকালের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে,একুশের ভোটে আইএসএফ এর সঙ্গে কংগ্রেসের মতবিরোধ ছিল। আসন সমঝোতা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। ভোটের পর ফলাফলে দেখা গেল আইএসএফ মাত্র একটি আসন পেয়েছে।আর ভোটে বিপর্যয়ের জন্য আইএসএফকেই দোষারোপ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।গতকাল ভোটে পরবর্তী বিশ্লেষণে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন মোদিবিরোধী মুখ হিসেবে মানুষ মমতা ব্যানার্জীকেই বেছে নিয়েছেন।তিনি আরো বলেন মানুষ বিশ্বাস করেছেন যে মোদিকে ঠেকাতে পারে একমাত্র মমতাই।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২০ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ