জুলাই ২৮, ২০২১ ১৭:৫৪ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার অন্তর্ভুক্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল মুক্বিত- مُقِیت ।

এ নামের অর্থ হল সংরক্ষক, সাক্ষী, রিজিকদাতা ইত্যাদি। এ নামের উৎসবাচক শব্দটি হল কুউয়্যাত তথা খাদ্য বা শক্তি যা মানুষের জীবন বাঁচায়। মহান আল্লাহর মুক্বিত নাম সমগ্র অস্তিত্ব-জগতের জন্য সাক্ষ্য- এই অর্থও প্রকাশ করে। মহান আল্লাহর কাছে কোনো কিছুই গোপন নেই। তবে মহান আল্লাহর এই নামের বিশেষ অর্থটি হল বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক রুজি ও রিজিক-দাতা।  যিনি রিজিকদাতা তিনি অবশ্যই রিজিক-গ্রহীতাদের ওপর তথা সব কিছুর ওপর কর্তৃত্ব রাখেন।  পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহর এই নামের উল্লেখ রয়েছে। এই আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্যে সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুত: আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। -

মহান আল্লাহ মুক্বিত হিসেবে সবার খাদ্য বা রিজিকের যোগান দেন। মানুষের আত্মিক ও বস্তুগত খাদ্য উভয়ই দরকার হয়। শরীরের জন দরকার হয় বস্তুগত খাদ্য ও মনের জন্য দরকার হয় আত্মিক খাদ্য। জ্ঞান ও বিদ্যা -এসব হচ্ছে আধ্যাত্মিক খাদ্য যা মহান আল্লাহ তার বিশেষ প্রিয় বান্দাদের দান করে থাকেন। মহিউদ্দিন বিন আরাবির মতে মুক্বিত অর্থ অনেকটা রাজ্জাকের মত। মহান আল্লাহ সবার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় রিজিক দিয়ে থাকেন। যেমন, সুরা ফুসিলাতের নয় ও দশ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থির কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা।

তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার ঋতুর মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-যাতে রিজিক-প্রত্যাশীরা তা যথাযথ মাত্রায় পায়। মুক্বিত অর্থ শক্তি-দাতাও হয়। আর মানুষের জীবন রক্ষাকারী অর্থে হাফিজও হয়। মহান আল্লাহ আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সব কিছুর সংরক্ষক।  তিনিই গ্রহ ও তারকারাজিকে তাদের কক্ষপথগুলোতে রক্ষা করেন এবং পাখিগুলোকে আকাশে রক্ষা করেন ও মাছগুলোকে রক্ষা করেন গভীর সমুদ্র ও জলাশয়ে। তিনিই বায়ু প্রবাহিত করেন নির্দিষ্ট দিকগুলোয় এবং উদ্ভিদের নানা গুণ ও সূর্যের তাপমাত্রার ভারসাম্যপূর্ণ নানা তারতম্য রক্ষা করেন যাতে জীবনগুলো রক্ষা পায়। মহান আল্লাহই মুক্বিত হিসেবে সৃষ্টিকুলের নানা বিষয়ে প্রতিপালন করেন ও তাদের অনুগ্রহ করেন। এসব বিষয়গুলোকে তিনি এক মুহূর্তের জন্যও সেসবের নিজস্ব অবস্থার ওপর ছেড়ে দিয়ে রাখেন না। যদি এক মুহূর্তের জন্যও সৃষ্টিকুলের প্রতিপালনকে তাদের ওপরই ছেড়ে দিতেন তাহলে তারা ধ্বংস হয়ে যেত। তাই কেবলই যিনি মুক্বিত সেই মহান আল্লাহ'র সহায়তা ও সুরক্ষার ওপর ভরসা করা উচিত। 

মুক্বিত অন্যের কাছে শক্তি পৌঁছাতে সক্ষম বলে এই নামের অন্য একটি অর্থ হল মুক্তাদির। মহান আল্লাহর ক্ষমতা ও শক্তির সাধ্যাতীত কিছু নেই। সবই তার শক্তির কাছে নতজানু।  মহান আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা করার মত কিছুই নেই। প্রজ্ঞা ও জ্ঞান তাঁরই ক্ষমতার আওতাধীন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের মতে মহান আল্লাহর মুক্বিত নামের অর্থ হল ক্ষমতাবান বা মুক্তাদির। মহান আল্লাহ প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের আলোকে ক্ষমতা ব্যবহার করেন।

মুক্বিত-এর আরেক অর্থ সাক্ষী। মহান আল্লাহ আমাদের কাজকর্মের সাক্ষী। অস্তিত্ব জগতের কোনো কিছুই মহান আল্লাহর কাছে গোপন নেই। সুরা ইউনুসের ৬১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

হে নবী!বস্তুত: যে কোন অবস্থাতেই তুমি থাক এবং কোরআনের যে কোন অংশ থেকেই পাঠ করা কিংবা যে কোন কাজই তোমরা কর অথচ আমি তোমাদের নিকটে উপস্থিত থাকি যখন তোমরা তাতে আত্ননিয়োগ কর। আর তোমার পরওয়ারদেগার থেকে গোপন থাকে না একটি কণাও, না জমিনের এবং না আসমানের। না এর চেয়ে ক্ষুদ্র কোন কিছু আছে, না বড় যা এই সুস্পষ্ট  কিতাবে সংরক্ষিত নেই। -

সুরা আম্বিয়ার ৭৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

এবং স্মরণ করুন দাউদ ও সুলায়মানকে, যখন তাঁরা শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে বিচার করেছিলেন। তাতে রাত্রিকালে কিছু লোকের মেষ ঢুকে পড়েছিল। তাদের বিচার আমার সম্মুখে ছিল।-

মহান আল্লাহর মহান নাম মুক্বিত-এর প্রতি স্মরণ মানুষকে সুপথে ও আলোর পথে রাখে। মুমিন কেবল মুক্বিত-এর কাছেই সাহায্য ও রিজিক চায়। রিজিক এর জন্য হয়ত মাধ্যম দরকার হয় কিন্তু মুমিন কেবল আল্লাহকেই রিজিকদাতা বা মুক্বিত বলে জানেন। মহান আল্লাহর এ নামের স্মরণকারী পবিত্র ও হালাল রুজি অর্জনে সচেষ্ট হয় এবং অন্যদের অধিকার নষ্ট করে না।

মহানবী (সা) বলেছেন, তোমরা সব কিছু কেবল তোমাদের প্রতিপালকের কাছেই চাইবে, এমনকি লবণ ও জুতার ফিতাও নষ্ট হয়ে গেলে তা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। 

-অন্য কথায় মুমিন বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক সব কিছু কেবল মহান আল্লাহর কাছেই চায়। মুক্বিত- নামের রঙে রঙিন ব্যক্তিরা সাহায্যপ্রার্থীকে তার চাহিদা অনুযায়ী দান করে থাকে, তাকে বেশিও দেন না কমও দেন না। তারা কখনও বস্তুগত কিছু দান করেন ও কখনও জ্ঞান-বিজ্ঞানের মত অবস্তুগত বা আধ্যাত্মিক বিষয়ও দান করেন। আধ্যাত্মিক বিষয়ও প্রার্থীর যোগ্যতা বা ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী দান করেন। মহানবী (সা) বলেছেন: মহান আল্লাহ নবী-রাসুলগণকে বলেছেন তারা যেন জনগণের বুদ্ধি ও উপলব্ধির মাত্রা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে কথা বলেন।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।