আগস্ট ১৪, ২০২১ ১৫:৫১ Asia/Dhaka

জাতিসংঘ ২০১৮ সালে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার কোটি মানুষ দরিদ্র।

চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ। অবশ্য জাতিসংঘের এই পরিসংখ্যানের বিষয়ে মার্কিন সরকার তখনি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।  ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই পরিসংখ্যানকে অতিরঞ্জিত বলে দাবি করে বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রে চরম দারিদ্র্যের শিকার মানুষের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। সে সময় জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ছিলেন নিকি হিলি। তিনি জাতিসংঘের এই পরিসংখ্যানে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, এটি সম্পূর্ণ হাস্যকর বিষয় যে যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্যের বিষয়টি জাতিসংঘ পর্যালোচনা করতে চায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দুই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বহু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা এসব রিপোর্টকে সত্য ধরে নিয়েই এক বিশেষ প্রতিবেদনে লিখেছে, আমেরিকার জনগণ ভাবতে চায় যে, কর্মসংস্থানই দারিদ্র্যের সমাধান, আসলে এই ভাবনা সঠিক নয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেকারত্ব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে এবং কিছু কাজের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য এমন কিছু কাজেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যেগুলো করার লোক আমেরিকায় নেই। যাইহোক স্বল্পশিক্ষিত মার্কিন নাগরিকদের পক্ষ থেকে যে প্রশ্নটি বারবারই উঠছে তাহলো যেসব চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে কি সুন্দরভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব? দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ইউএসএ টুডের মতো অনেক দৈনিক পত্রিকা, টাইমের মতো নানা সাময়িকী এবং বিখ্যাত ওয়েবসাইটগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান দারিদ্র্য নিয়ে নানা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য অনেকের মধ্যে এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্য, অন্যান্য দেশের দারিদ্র্যের চেয়ে আলাদা। তারা এও মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার মান বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উন্নত। কাজেই আমেরিকার দরিদ্র লোকেরা অন্য দেশের পরিস্থিতিতে দরিদ্র হিসেবে বিবেচিত হবে না। আসলে এই ধারণাটি ভুল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন তাদের ওয়েবসাইটে সেদেশে শিশু দারিদ্র্য সম্পর্কিত এক পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেছে যা এই বাস্তবতাকেই তুলে ধরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সাত শিশুর মধ্যে একটি দারিদ্রের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করে। সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, আপনি মনে করতে পারেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ধনী দেশ, কাজেই সেদেশের দরিদ্ররা আমেরিকায় বিদ্যমান উন্নত জীবনমানের সঙ্গে তুলনা করার কারণে দরিদ্র। অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে তারা দরিদ্র হিসেবে গণ্য হবে না। কিন্তু সংস্থাটি বলছে এই ধারনা সঠিক নয়। আমেরিকাতেও চরম দারিদ্র্যের শিকার অনেক মানুষ রয়েছেন। আরেকটি বাস্তবতা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি। মার্কিন জনগণনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সেদেশে এক কোটি ৫৫ লাখ শিশু দারিদ্র্যের শিকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশু দারিদ্র্য সম্পর্কিত অন্যান্য পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার ৪০ শতাংশ শিশু ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কমপক্ষে এক বছর দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করে।

অনেকেই ইউরোপের দেশগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই পৃথিবীর স্বর্গ বলে মনে করে। তবে সেখানকার বিদ্যমান পরিসংখ্যান এবং জীবনযাত্রার মান ভিন্ন কথা বলে। সামাজিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ইউরোপের ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে। এক দশক আগে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২০ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা দুই কোটি কমাতে দারিদ্র্য হ্রাসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। তবে সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তারা মাত্র ৫০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের ঝুঁকি থেকে মুক্ত করতে পেরেছে। ২০১৮ সালে মার্কিন টিভি চ্যানেল সিএনএন জানিয়েছে, ব্রিটেনে উচ্ছিষ্ট খাবারের প্রথম মার্কেট চালু হয়েছে। ডাস্টবিন থেকে সংগ্রহ করা খাবারই সেখানে পরিবেশন করা হয়। অর্থশালী ব্রিটিশদের মধ্যে খাবার অপচয়ের প্রবণতা অনেক বেশি বলে বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্টে বারবারই উল্লেখ করা হয়েছে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা সমস্যা কেবল ব্রিটেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ব্রিটেনে উচ্ছিষ্ট খাদ্যের মার্কেট চালুর পর এই প্রজেক্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ফ্রান্স ও জার্মানিসহ আরও কয়েকটি দেশে একই প্রকল্প চালু করেছে। ইউরোপের প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্সও ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সংকটে ভুগছে।  

২০১৭ সালের শেষ দিকে ইউরোপের মানুষ যখন ক্রিসমাস এবং নতুন বছর উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন টুইটারে প্রকাশিত একটি ছবি গোটা ফ্রান্সকে নাড়া দেয়। এই ছবিতে দেখা যায়, কয়েকটি শিশু ডিসেম্বর মাসের প্রচণ্ড শীত থেকে বাঁচতে প্যারিসের একটি লন্ড্রির দোকানে আশ্রয় নিয়েছে এবং বড় ওয়াশিং মেশিনের ভেতরে ঘুমাচ্ছে। এরপর প্যারিসের পুলিশ প্রধান মিশেল দেলপোশ ওয়াশিং মেশিনে ঘুমিয়ে থাকা শিশুর সংখ্যা ২৫ বলে দাবি করেছিলেন। তার দাবি ছিল, এরা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরার্ড কলম্বাস দাবি করেছিলেন, এসব শিশু সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোনিউজ জানিয়েছে, গোটা ইউরোপেই দারিদ্র্য ও ক্ষুধার সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ইউরোপের প্রতি চার নাগরিকের মধ্যে একজন দারিদ্রের হুমকিতে রয়েছে। নারী এবং শিশুদের মধ্যে এই দারিদ্রের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চালু হওয়া বেবি উইন্ডো বা বেবি বাকেট এমন পরিস্থিতিরই একটি বাস্তব উদাহরণ।

যেসব মা দারিদ্র বা অন্য কারণে নিজের সন্তানের ভরণপোষণ করতে সক্ষম নন তারা বেবি উইন্ডো বা বেবি বাকেট তাদের শিশুকে রেখে যেতে পারেন। সুইজারল্যান্ডে শিশু শিশু রেখে যাওয়ার এমন পাত্র বা স্থান চালু হয় ২০১১ সালে জুরিখ শহরের কেন্দ্রস্থলের কাছে। সেখানে একদিন বয়সী থেকে ছয় সপ্তাহ বয়সী শিশুদের রাখতে বলা হয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই এ ধরণের শিশু রাখার কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই সুইডেনের বিভিন্ন হাসপাতালের কাছে এ ধরণের শিশু রাখার কেন্দ্র স্থাপনের খবর প্রকাশিত হয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো,সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরের হাসপাতালের পাশেও শিশু জমা দেওয়ার এ ধরণের কেন্দ্র রয়েছে। যদিও এটি এমন এক শহর যেখানে প্রতিবছর বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের আয়োজন করা হয়।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ