আগস্ট ১৪, ২০২১ ১৭:২৪ Asia/Dhaka

রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি যে যেখানে আছো ভালো ও সুস্থ আছো। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবারো হাজির হয়েছে শোক ও ত্যাগের মাস মহররম। ‌এটি হিজরী সনের প্রথম মাস। এ মাসের ১০ তারিখে অর্থাৎ ৬১ হিজরীর পবিত্র আশুরার দিন ইরাকের কারবালার ময়দানে সংঘটিত হয়েছিল এক অসম যুদ্ধ।

ঐতিহাসিক এ যুদ্ধে রাসূল (সা.)-এর নাতি ইমাম হুসেইন (আ.) অবৈধ উমাইয়া শাসক ইয়াজিদের বিশাল বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে শহীদ হন। সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, এ যুদ্ধে মাত্র ১৩ বছর বয়সী কিশোর কাসিম এবং দুধের শিশু আলী আসগরও শহীদ হন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন- 

কুল মাখলুক কাঁদিয়ে ওই এলো মহররম

হায় হোসেন! হায় হোসেন! উঠলো রে মাতম

সারা জাহান কেঁদে বিভোর আসমান-জমিন

দজলা কাঁদে ফোরাত কাঁদে কাঁদে মুসলিমিন

কাতরা পানি পায়নি হায়রে পিয়াসে কাতর

তির খেয়ে যে মরলো কচি শিশু সে আসগর।

বন্ধুরা, শিশু আসগরসহ ৭২ জন শহীদের আত্মত্যাগের মাস মহররম উপলক্ষে আমরা একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের দুই ছোট্টবন্ধু। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটিও তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান। আর উপস্থাপনায় রয়েছি আমি গাজী আবদুর রশিদ এবং আমি আকতার জাহান।

তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, ঐতিহাসিক কারবালা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ইমাম হুসেইন (আ.) ও মহাপাপিষ্ঠ ইয়াজিদের মধ্যে। ইমাম হুসেইন ছিলেন আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী ও উম্মুল মোমেনীন হযরত ফাতিমা (সা. আ.)'র পুত্র। রাসূল (সা.) ইমাম হুসেইনকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, 'হুসেইন আমা হতে আর আমি আমি হুসেইন হতে।'

রাসূলেখোদা আরও বলেছেন, 'হুসাইন আমার সন্তান, আমার বংশ ও মানবজাতির মধ্যে তাঁর ভাই হাসানের পর শ্রেষ্ঠ। সে মুসলমানদের ইমাম, মুমিনদের অভিভাবক, জগতগুলোর রবের প্রতিনিধি বা খলিফা, ... সে আল্লাহর হুজ্জাত, বেহেশতের যুবকদের সর্দার এবং উম্মতের মুক্তির দরজা। তার আদেশ হল আমার আদেশ। তার আনুগত্য করা হল আমারই আনুগত্য করা। যে-ই তাকে অনুসরণ করে সে আমার সাথে যুক্ত হয় এবং যে তার অবাধ্য হয় সে আমার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।'

প্রিয়নবী ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে, 'যখন আবু সুফিয়ানের পুত্র মুয়াবিয়া এবং মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ ইসলামকে ধ্বংস এবং এর নাম নিশানা মুছে দিতে চাইবে তখন ইমাম হুসেইনের মাধ্যমে ইসলাম পুনরুজ্জীবিত হবে।'

শিল্পীর তুলিতে কারবালা যুদ্ধ

বন্ধুরা, ইমাম হুসাইন সম্পর্কে তাঁর নানা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর  কয়েকজটি বাণী শুনলে। এবার আমরা ইমাম হুসাইন সম্পর্কে একটি কবিতা শুনব ইরানের কোম প্রবাসী বাংলাদেশি বন্ধু যাহরা ফাতেমি সাকিনার কাছ থেকে। কবিতাটি লিখেছেন যাহরার বাবা মুহাম্মদ আশিকুর রহমান। 

যাহরার চমৎকার উচ্চারণে কবিতাটি শুনলে। বন্ধুরা, বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসেইনের পর এবার আমরা কারবালা যুদ্ধের খলনায়ক, পাপিষ্ঠ ইয়াজিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরছি।

আগেই বলেছি যে, ইয়াজিদ ছিল আমীরে মুয়াবিয়ার পুত্র। সে ছিল মদ পানকারী, অত্যাচারী, অন্যের সম্পদ লুণ্ঠনকারী ও ভোগবিলাসী একজন যুবক। মানব চরিত্রের এমন কোনো বদগুণ নেই যা ইয়াজিদের মধ্যে ছিল না। ইয়াজিদ তার পিতার মৃত্যুর পর জনগণের মতামতকে তোয়াক্কা না করে মুসলিম জাহানের শাসক হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করে। কিন্তু সে জানতো যে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে ইমাম হুসাইনের বায়াত বা আনুগত্য জরুরি। তাই সে ক্ষমতায় বসেই মদীনার গভর্ণর অলিদ ইবনে ওতবাকে হুকুম দেয় যে, ইমাম হুসেইন যেন ইয়াজিদের শাসন মেনে নেয়। আর অস্বীকার করলে যেন তাঁকে হত্যা করা হয়।

মদীনার গভর্ণর যখন ইমামকে এ কথা জানাল তখন ইমাম বললেন, 'নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাব।’ তিনি গভর্ণরকে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি আল্লাহর পরিবর্তে কখনো শয়তানের কাছে আত্মসমর্পন করবেন না।

ইমামের বলিষ্ঠ বক্তব্য শুনে ইয়াজিদ শক্তি প্রয়োগ করতে শুরু করল। এ অবস্থায় তিনি বাধ্য হয়ে মক্কায় চলে যান। কিন্তু মক্কাতেও ইয়াজিদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকল না। ইয়াজিদ কাবার পবিত্র প্রাচীরের মধ্যে গোপনে ইমামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল। এ সময় কুফা থেকে হাজার হাজার চিঠি আসে ইমামের কাছে। তারা ইমামকে কুফা যেতে আবেদন জানায় যেন তারা জালেম ইয়াজিদি শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারে। এ অবস্থায় কাবার পবিত্রতা রক্ষা এবং নিরাপত্তার খাতিরে ইমাম তাঁর সঙ্গী সাথীদের নিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

ইমাম সঙ্গী সাথীদের নিয়ে যখন তিনি কারবালায় পৌঁছান তখন হুর ইবনে ইয়াজিদ ইবনে রিয়াহির নেতৃত্বে ইয়াজিদের একটি অগ্রবর্তী বাহিনী তাঁকে থামিয়ে দেয়। এরপর এই বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় আরো হাজার হাজার সেনা।

ইয়াজিদের বিশাল বাহিনী কারবালার মরুভূমিতে ইমামের সঙ্গী-সাথীদেরকে ঘেরাও করে রাখে। তারা অত্যন্ত অমানবিকভাবে ফোরাত নদীর পানি বন্ধ করে দেয়। ইমামের তাঁবুতে পানির অভাবে হাহাকার পড়ে যায়। এ সময় ইয়াজিদ ফরমান জারি করে জানায়- ‘হয় তাকে শাসক হিসেবে নেতৃত্ব মেনে নিতে হবে অথবা ইমাম হুসেইনকে মৃত্যুবরণ করতে হবে।

কিন্তু ইমাম হুসেইন (আ.) ইয়াজিদের এই অন্যায় হুমকির তোয়াক্কা না করে হাতে যা ছিল তাই নিয়ে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নেন। ১০ মহররম ভোর বেলায় ইয়াজিদের হাজার হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন ঈমানের বলে বলীয়ান এক ক্ষুদ্রবাহিনী। সেদিনের সেই এই অসম লড়াইয়ে নবীজির নাতি ইমাম হোসেইনসহ তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শহীদ হন।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠান শেষে করার আগে তোমাদের উদ্দেশে বলতে চাই- ইমাম হুসাইন (আ.) জালিম ইয়াজিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়ে গেছেন যে, কোনো শাসক ইসলামের নীতিমালা থেকে দূরে সরে গেলে কিংবা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করলে তার বিরুদ্ধে নিজের সাধ্যনুযায়ী সংগ্রাম করতে হবে।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত ইসলামের পথে চলার তৌফিক দিন এ কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি রংধনুর আজকের আসর।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

 

ট্যাগ