মহানবীর পবিত্র বংশধারার ১১ তম নক্ষত্র
(last modified Tue, 24 Nov 2020 08:20:00 GMT )
নভেম্বর ২৪, ২০২০ ১৪:২০ Asia/Dhaka

হিজরি আটই রবিউসসানি ইসলামের ইতিহাসের মহাখুশির একটি দিন। ২৩২ হিজরির এই দিনে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য ইমাম হাসান আসকারি (আ.) জন্ম নিয়েছিলেন পবিত্র মদিনায়। তিনি ছিলেন হযরত ইমাম মাহদি (আ.)'র পিতা।

এই মহাখুশির দিন উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি সালাম ও অজস্র শুভেচ্ছা এবং বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানেও পেশ করছি অশেষ সালাম আর দরুদ। 
ইমাম হাসান আসকারি (আ.) ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)'র রেখে যাওয়া আহলেবাইতভুক্ত ১২ জন ইমামের মধ্যে একাদশ ইমাম। তাঁর পিতা হলেন দশম ইমাম হযরত হাদী (আ.) ও মাতা ছিলেন মহীয়সী নারী হুদাইসা (সালামুল্লাহি আলাইহা)।
শাসকদের চাপের মুখে ইমাম আসকারি (আ.) ও তাঁর পিতা ইমাম হাদী (আ.) প্রিয় মাতৃভূমি মদিনা শহর ছেড়ে আব্বাসীয়দের তৎকালীন শাসনকেন্দ্র সামেরায় আসতে বাধ্য হন। 
ইমাম হাসান আসকারি (আ.) আব্বাসীয় শাসকদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক চাপ ও দমনপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। সামেরায় ততকালীন শাসকদের সামরিক কেন্দ্র তথা 'আসকার' অঞ্চলে কঠোর নজরদারির মধ্যে ইমাম আসকারি (আ.)কে বসবাস করতে হয়েছিল বলে তিনি আসকারি নামেও পরিচিত ছিলেন।

কঠোর প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইমাম হাসান আসকারি (আ.) অশেষ ধৈর্য নিয়ে তাঁর অনুসারীদেরকে জ্ঞানগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকসহ সব ক্ষেত্রেই পথনির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।  পিতা ইমাম আলী নাকী তথা হাদী (আ.)'র শাহাদতের পর ইমাম হাসান আসকারি (আ.) ২২ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ৬ বছর ধরে ইসলামী জাহানের পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৮ বছর বয়সে ২৬০ হিজরিতে শাহাদত বরণ করেন।
ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র যুগে জালিম আব্বাসীয় শাসকরা সব ক্ষেত্রেই ন্যায় নীতি থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছিল। কিন্তু জনগণ একথা শুনেছিল যে, ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র সন্তান ইমাম মাহদির (আ.) মাধ্যমে গোটা বিশ্ব জুলুম আর অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পাবে। শাসক গোষ্ঠীও এই খবরের কথা জানতো। তাই তারা ইমাম ও জনগণের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির চেষ্টা জোরদার করে এবং ইমামের যেন কোনো সন্তান জন্ম নিতে না পারে সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু এতসব বাধা সত্ত্বেও ইমাম হাসান আসকারির (আ.)'র সন্তান তথা মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদি (আ.) জন্ম গ্রহণ করেন মহান আল্লাহর বিশেষ ইচ্ছায় ঠিক যেভাবে ফেরাউনের বাধা সত্ত্বেও মুসা (আ.)'র জন্মগ্রহণকে ঠেকানো সম্ভব হয়নি। 

ইমাম মাহদি (আ.)'র জন্মের পর ইমাম হাসান আসকারি (আ.) মুসলিম সমাজকে ভবিষ্যত নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলার জন্য দিক-নির্দেশনা দেন। এ ছাড়াও ইমাম নানা কুপ্রথা ও ভুল চিন্তাধারা সম্পর্কে মুসলমানদের সন্দেহ দূর করেন এবং খাঁটি মুহাম্মাদি ইসলামের চিন্তাধারা তুলে ধরেন। ইমাম জ্ঞান-পিপাসুদেরকে জ্ঞানের স্বচ্ছ ও বাস্তব ঝর্ণাধারায় পরিতৃপ্ত করতেন। জ্ঞানগত বিতর্কে তাঁর যুক্তি ছিল অকাট্য ও মোক্ষম যে ইয়াকুব বিন ইসহাক কিন্দির মত প্রখ্যাত বস্তুবাদী দার্শনিক এই মহান ইমামের সঙ্গে বিতর্কের পর বাস্তবতা বুঝতে সক্ষম হন এবং ধর্মীয় কোনো কোনো বিষয়ের সমালোচনা করে যে  বই তিনি লিখেছিলেন তা নিজেই পুড়ে ফেলেন। 
আব্বাসীয়দের মন্ত্রী আহমাদ বিন খাক্বান ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র যোগ্যতা, গুণ ও কারামত সম্পর্কে বলেছেন: ' বিনম্রতা, চারিত্রিক ও নৈতিক পবিত্রতা এবং মহানুভবতার মত ক্ষেত্রগুলোতে মানুষের মধ্যে তাঁর মত আর কাউকে দেখিনি। তিনি এত উচ্চ সম্মানের অধিকারী যে শত্রু ও বন্ধু সবাই তাঁর প্রশংসা করতেন।'
ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র নামাজের উচ্চ পর্যায়ের কোয়ালিটি অন্যদেরকে আল্লাহর ইবাদতে আকৃষ্ট করত। দেখা গেছে কারাগারের জল্লাদরা তাঁর নামাজ ও রোজায় প্রভাবিত হয়ে পাকা নামাজি হয়ে গিয়েছিল।

ইমাম হাসান আসকারি (আ.) এর চারিত্রিক পবিত্রতা ও ব্যক্তিত্বের মাধুর্য তাঁর অনুসারীদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করতো। অন্যদিকে মুনাফিক এবং বিচ্যুতরা বিকর্ষিত হত। এ মহান ইমামের দিক-নির্দেশনার কারণে সে যুগে মহানবীর আহলেবাইতপন্থীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ও ইমামের বার্তা পাঠানোর অনেক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল ও জোরদার হয়েছিল।
ইমাম হাসান আসকারি (আ.) ইমামতির ছয় বছরে আব্বাসীয় শাসকদের তিনজনকে পেয়েছিলেন। এরা ছিল মোতায, মোহতাদি এবং মোতামেদ। ইমাম এদের স্বেচ্ছাচারিতা চুপ করে সহ্য  করেননি, ফলে তারা ইমামের ওপর রুষ্ট হয়ে পড়ে। তাই তাঁকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও ইমাম বলদর্পি শাসকদের কাছে মাথা নত করেননি। অবশেষে জালিম মোতামেদ ইমামকে গোপনে বিষ প্রয়োগ করে। ফলে ইমাম ২৬০ হিজরির ৮ ই রবিউল আউয়াল শাহাদত বরণ করেন । মোতামেদ এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিল যাতে গণ-বিদ্রোহ দেখা না দেয়। 

এবারে ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র একটি মু'জেজা তুলে ধরব। একবার এক নাসেবি তথা বিশ্বনবী (সা,)'র আহলে বাইতের বিদ্বেষী নবীবংশের এই মহান ইমামকে পরীক্ষা করার জন্য কতগুলো প্রশ্ন কাগজে লিখেছিল কালিবিহীন কলমে। একই কলমে আরো কয়েকজন কিছু বিষয় লেখে একই উদ্দেশ্যে। সেগুলো ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র কাছে পাঠানো হলে ইমাম সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লিখে পাঠান এবং নাসেবির কাগজের ওপর তার নাম, তার বাবার ও মায়ের নামও লিখে পাঠান। নাসেবি তা দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাঁর হুঁশ ফিরে আসার পর সে ইমামের প্রতি বিশ্বাস এন তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী হয়ে যায়। 

ইমাম হাসান আসকারী (আ) এর মূল্যবান একটি বাণী শুনিয়ে শেষ করবো আজকের এই আলোচনা। তিনি বলেছেন : আল্লাহর অত্যধিক প্রশংসা করবে ও আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে। মৃত্যুর কথাও বেশি বেশি স্মরণ করবে ও তা ভুলবে না; বেশি বেশি কুরআন পাঠ করবে এবং রাসূল (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের উদ্দেশে বেশি বেশি দরুদ পাঠাবে, কারণ, তাঁদের শানে দরুদ পাঠানোতে রয়েছে দশটি নেকি ও কল্যাণকর প্রভাব।
সবাইকে আরো একবার মুবারকবাদ জানিয়ে শেষ করছি আজকের আলোচনা। অসংখ্য দরুদ ও রহমত বর্ষিত হোক ইমাম হাসান আসকারি (আ.)'র ওপর।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ