ঈদ-উল ফিতরের বিশেষ অনুষ্ঠান : আনন্দধারা
https://parstoday.ir/bn/radio/world-i58996-ঈদ_উল_ফিতরের_বিশেষ_অনুষ্ঠান_আনন্দধারা
ক) ঈদ মানে আনন্দ। তাই ঈদ এলেই আমরা খুশি হই, আনন্দিত হই। যারা রোজা রেখেছেন তাঁরা তিনটি পর্যায় অতিক্রম করেছেন। রহমত পর্ব, মাগফিরাত পর্ব এবং নাজাত বা মুক্তি পর্ব। শেষ পর্বে জাহান্নামের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পাশাপাশি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ও পুণ্যময় একটি রাত পেয়েছিলেন রোজাদারগণ। ঈদ সেজন্যই আনন্দের, প্রাপ্তির আনন্দ, মুক্তির আনন্দ।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
জুন ১৪, ২০১৮ ১৮:৩৫ Asia/Dhaka

ক) ঈদ মানে আনন্দ। তাই ঈদ এলেই আমরা খুশি হই, আনন্দিত হই। যারা রোজা রেখেছেন তাঁরা তিনটি পর্যায় অতিক্রম করেছেন। রহমত পর্ব, মাগফিরাত পর্ব এবং নাজাত বা মুক্তি পর্ব। শেষ পর্বে জাহান্নামের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পাশাপাশি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ও পুণ্যময় একটি রাত পেয়েছিলেন রোজাদারগণ। ঈদ সেজন্যই আনন্দের, প্রাপ্তির আনন্দ, মুক্তির আনন্দ।

খ) আচ্ছা, যারা রোজা রাখে নি, তাদের আনন্দ নেই?

গ) অবশ্যই আছে। তাদেরকে আর চুরি করে বা লুকিয়ে লুকিয়ে খেতে হবে না। সেই আনন্দে তারা ভীষণ খুশি...

ক) অবশ্য ঈদের আনন্দ সবার জন্য। ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার জন্যই সমানভাবে আনন্দ নিয়ে হাজির হয় ঈদ। কবি নজরুল যথার্থই বলেছেন ঈদের গানে:

খ) ভালো কথা মনে করেছেন।

ক) কী কথা...

খ) ঈদের গানের কথা...

গ) তাই তো... নাহ, কোনো কথা নয়। আগে ঈদের গান শুনবো।

খ) আহা হা ... ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে...

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

গ) এই গানটা না.. আসলেই অন্যরকম। একেবারে প্রাণ জুড়ানো গান। গানের প্রতিটি কথাই ধ্রুব সত্য এবং বাস্তব...

খ ) ঠিক বলেছেন। কিন্তু কতোটা বাস্তব সেটা বোঝা যাবে এখনি.....

গ) মানে...?

ক) মানেটা খুব সোজা! ফেতরা দেয়া হয়েছে?

গ) আজকে সবাই ফেতরা দিয়েছে....

খ) এই সবার মাঝে আপনি আছেন তো....?

গ) (একটু আমতা আমতা করে ) দেখুন...আমার এখনো হিসাব-নিকাশ শেষ হয় নি..তাই...  

খ) এবার দেখলেন বাস্তবতার অবস্থা...ঈদ শেষ হয়ে গেছে,এখনো ওনার হিশাব-নিকাশ শেষ হয় নি,আরে ফেতরা দিতে হয় ঈদের নামাযে যাবার আগেভাগে। হিশাব-নিকাশের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই,

ক) তাই তো! ফেতরা দেওয়ার জন্য আবার হিসাব! হিসাব করে তো যাকাত দিতে হয়, তাই না!

খ) হ্যাঁ! ঠিক তাই,আসলে এসব কথা যারা বলে,তারা হলো.....

ক) ক-ঋ-কার-প-মূর্ধন্য-ণ  'কৃপণ'

খ) আসলে ফিতরার বিষয়টি নিয়ে অবহেলা করা ঠিক না। কেননা যাদেরকে ফিতরা দেয়া হয় তারাও তো ঈদ করবে। আমরা যেমন ঈদের কেনাকাটা আগেভাগেই করে ফেলি, তাদেরকেও সেই সুযোগ দিতে হবে।

গ) হুমমম বুঝতে পেরেছি। অন্তত রোজা শেষ হবার দু'চারদিন আগেই ফিতরা দিয়ে দিলে ভালো হয়। তাহলে তারাও কেনাকাটা করে আনন্দ ভাগ করে নিতে পারবে।

ক) আমার মনের পর্দায় ভাসছে কিছু নিরানন্দ মুখ।

খ) কাদের মুখ..?

ক) মিয়ানমারের শরণার্থী রোহিঙ্গা মুসলমানদের মুখ। তাদের শিশুদের ম্লান মুখ। সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়েমেনের নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের মুখ।

গ) ঈদের আনন্দটাই মাটি করে দিলেন আপনি…

খ) কী বলেন আপনি! আমাদের ভাই না ওরা! ওদের কথা ভুলে গিয়ে আমরা আনন্দ করে বেড়াবো?

গ) না ঠিক তা নয়। আমার মনে ছিল না তো! এখন মনে পড়াতে মনটা ওদের জন্য কেঁদে উঠেছে…

ক) আমাদের সবার উচিত তাদের জন্য দোয়া করা। সাধ্যমতো তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা।

খ) আচ্ছা একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন?

গ) কী..

খ) এই যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতন হচ্ছে, বিশ্বের বড় বড় মিডিয়াগুলোতে কিন্ত সেসব খবর ঠিকমতো আসছে না।

ক) শুধু আসছে না বললে ভুল হবে, বরং যেটুকু আসছে সেটুকুও বিকৃত এবং ভুল খবর আসছে …

খ) ভুল?

গ) ইয়েলো জার্নালিজম? মানে হলুদ সাংবাদিকতা ?

ক) ঠিক তাই..

খ) সেটা আবার কী জিনিস …

ক) কী জিনিস? চলুন আমরা বরং কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর কাছ থেকেই শুনি…

-ওই ভাতিজা এদিক আসো।

-- কী কাক্কু ডাকতেআছো কেন?

- আরে শুইনা যাও একটা মজার কাহিনি।

-- মজার কাহিনি? কী রকম কন দেহি।

- ওই যে জয়নাল আইছে না এমেরিকাত্থে ওর কাছে হুনছি।

-- কী কইছে, কন না।

- এমেরিকার রাস্তায় বলে একবার একটা কুত্তা বারইছে। মনে কর যে, পাগলা কুত্তা, যারে পায় হেরেই কামড় দেয়।

-- সবাই রে?

- হ। এখন একটা পিচ্চি মাইয়া রাস্তার মধ্যে খারাই রইছে এই সময় কুত্তাডা গেছে ওই মাইয়াডারে কামড় দিবার। কুত্তাডা যখন কামড় দিবো এমন সময় একটা যুবক পোলা লাঠি লইয়া আইয়্যা কুত্তাডারে এমনভাবে বারি দিছে কুত্তাডা গেছে মইরা।

-- এক্কেবারে মইরা গেছে?

- হ। তো পোলাডা ভালো কাজ করায় সেখানে উপস্থিত সবাই তার প্রশংসা করতে লাগল। এ সময় সেখানে কয়েকজন সাংবাদিক এসে হাজির। তার ওই পোলার ইন্টারভিউ নেয় পত্রিকায় ছাপার জন্য। পরেরদিন পত্রিকায় ছাপার আগ মুহূর্তে জানা গেলে যে, ওই পোলাডা একটা মুসলমান। তখন খবর উল্টা গেল।

-- ক্যা?

- আরে তারা শয়তান না। তারা কী খবর দিল জানো?

-- কী দিছে?

-- কইছে যে, 'মুসলমানদের হাতে নীরিহ পশুরাও রেহাই পাচ্ছে না'! দিনদুপুরে ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় এক মুসলমান যুবকের হাতে একটি নীরিহ কুকুর নির্মমভাবে নিহত!'  

গ) হায়রে সাংবাদিকতা... ছিহ, ছিঃ ছিঃ ছিঃ

খ) এবার বুঝলাম কেন মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের খবরাখবর বিশ্ববাসী জানতে পারে না।

ক) এই জুলুম নির্যাতন থেকে সাম্রাজ্যবাদ কিংবা তাদের দোসরদের বিরত রাখা যাবে না। তারা করবেই। তবে একটা কাজ যদি মুসলমানরা করতে পারে তাহলে সম্ভব।

খ) কী কাজ?

গ) মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। তাহলে আর সাম্রাজ্যবাদীরা সাহস পাবে না মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করার। নজরুলের গানের ভেতর সেই কথাটাও রয়েছে।

আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমণ, হাত মেলাও হাতে,

তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী
সেই গরিব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।
ঢাল হৃদয়ের তশতরীতে শিরনি তৌহিদের,
তোর দাওয়াত কবুল করবেন হজরত হয় মনে উম্মীদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
তোরে মারল' ছুঁড়ে জীবন জুড়ে ইট পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তোলরে গড়ে প্রেমেরই মসজিদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।

ক) আজ ভুলে যা তোর দোস্ত দুশমন হাত মেলাও হাতে। হুমম এভাবে যদি হাতে হাতে মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায় তাহলে আর থাকবে না মুসলমানদের দুর্বলতা।

খ) বিশ্বকে জয় করতে পারবে আবার। পশ্চিমা আধিপত্যবাদের হাতে আর আগ্রাসনের শিকার হতে হবে না।

গ) ঈদ আমাদের সেই শিক্ষা দিক।

ক) মহাকবি কায়কোবাদও কিন্তু একই ধরনের ঐক্যের কথা বলেছেন এই ঈদের দিন প্রসঙ্গে লেখা তাঁর 'ঈদ আবাহন'কবিতায়।

আজি এ ঈদের দিনে হয়ে সব এক মনঃপ্রাণ,

জাগায়ে মোশ্লেম সবে গাহ আজি মিলনের গান।

ডুবিবে না তবে আর ঈদের এ জ্যোতিস্মান রবি,

জীবন সার্থক হবে,ধন্য হইবে এ দরিদ্র কবি।

খ) আচ্ছা কবিতার প্রসঙ্গ যেহেতু এসেই গেলো, তখন একটা আবৃত্তি শুনলে কেমন হয়?

গ) বাহ বাহ! কী চমৎকার প্রস্তাব। হয়ে যাক আবৃত্তি।

খ) জি, হয়ে যাক নাসির ভাই ...

ক) হুমম আপনাদের অনুরোধ তো রক্ষা না করে উপায় নেই। কিন্তু কোন কবিতাটা যে পড়ি…

গ) ওই যে কবি গোলাম মোস্তফার 'ঈদ উৎসব'আছে না.., ওটাই হোক না …

ক) হ্যাঁ!‍ হ্যা!ঠিকই বলেছেন …. ভাই! …. ভাইও নিশ্চয়ই আপত্তি করবেন না…

খ ) প্রশ্নই আসে না … শুরু করেন প্লিজ।

গ) বাহ! কি চমৎকার দোয়া-শুভ যা জেগে থাক, অশুভ দূরে যাক, খোদার শুভাশিস পর্শে। পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য এবারের ঈদে এই দোয়াই থাকলো।

খ) জি.. রেডিও তেহরানের পক্ষ থেকে এই দোয়াই থাকুক সবার জন্য।

ক) তো শ্রোতাবন্ধুরা! আপনারা পৃথিবীর যে প্রান্তেই অবস্থান করুন না কেন, যাঁরা আমাদের এই ঈদ ম্যাগাজিন শুনছেন সবাইকে আবারও জানাচ্ছি ঈদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এবার বিদায় নেবার পালা। কাজী নজরুল ইসলামের 'মুনাজাত' সঙ্গীতটি শুনতে শুনতে বিদায় নেয়া যাক।পরিবেশন করছেন বিখ্যাত নজরুল শিল্পী খালিদ হোসেন।

খ) সঙ্গ দেয়ার জন্য আপনাদের আবারও জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

গ) ঈদ মোবারক….

শোনো শোনো ইয়া এলাহী

আমার মুনাজাত।

তোমারি নাম জপে যেন

হৃদয় দিবস- রাত।।

যেন শুনি কানে সদা

তোমারি কালাম, হে খোদা,

চোখে শুধু দেখি যেন

কোরানের আয়াত।।

মুখে যেন জপি আমি

কলমা তোমার দিবস-যামী,

(তোমার) মসজিদেরই ঝাড়ু- বর্দার

হোক আমার এ হাত।।

সুখে তুমি, দুখে তুমি,

চোখে তুমি, বুকে তুমি,

এই পিয়াসী প্রানের খোদা

তুমিই আবে- হায়াত।।

 

- কাজী নজরুল ইসলাম-

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/আশরাফুর রহমান/১৪