ভেনেজুয়েলায় কি ‘বে অব পিগস’-এর ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i153370-ভেনেজুয়েলায়_কি_বে_অব_পিগস’_এর_ইতিহাস_পুনরাবৃত্তি_হতে_চলেছে
পার্সটুডে: ভেনেজুয়েলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নটি জোরালোভাবে উঠছে যে, 'বে অব পিগস' বা পিগস উপসাগরীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি?
(last modified 2025-10-26T04:16:24+00:00 )
অক্টোবর ২৫, ২০২৫ ১৫:৫৫ Asia/Dhaka
  • ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ
    ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ

পার্সটুডে: ভেনেজুয়েলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নটি জোরালোভাবে উঠছে যে, 'বে অব পিগস' বা পিগস উপসাগরীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি?

পার্সটুডে জানিয়েছে, তথাকথিত 'নার্কো-সন্ত্রাসবাদ' বিরোধী লড়াইয়ের একটি উল্লেখযোগ্য বড় পদক্ষেপ হিসেবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী, 'ইউএসএস জেরাল্ড আর. ফোর্ড'-কে ক্যারিবিয় অঞ্চলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এই আক্রমণাত্মক যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন ভেনেজুয়েলায় বিমান হামলার সূচনার ইঙ্গিত হতে পারে। শুক্রবারের সামরিক তৎপরতা ইঙ্গিত দেয় যে, একটি বড় ধরনের সামরিক উত্তেজনা শুরু হতে যাচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ নির্দেশ দিয়েছেন যে, ইউরোপে অবস্থানরত সর্বাধুনিক নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী গোষ্ঠীটি ক্যারিবিয় অঞ্চলে মোতায়েন করা হবে।

ট্রাম্প একই সঙ্গে সিআইএ–কে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন দাবি করেছে, ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে কোকেন উৎপাদন কেন্দ্র ও পাচার রুটগুলোতে হামলার সম্ভাবনা বিবেচনা করছে, যদিও এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

এদিকে, মার্কিন সরকার নিকোলাস মাদুরো সরকারের সঙ্গে আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছে এবং মাদুরোকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন মাদক কার্টেলের বিরুদ্ধে অভিযানের অজুহাতে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার উপকূলে ১০টিরও বেশি নৌযান ধ্বংস করেছে।

ভেনেজুয়েলার প্রতিক্রিয়া:

প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রকে 'যুদ্ধ উসকে দেওয়ার' অভিযোগে অভিযুক্ত করে বলেছেন, এটি লাতিন আমেরিকায় এক উসকানিমূলক পদক্ষেপ। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে এবং তথাকথিত মাদকবিরোধী অভিযানের অজুহাতে ওয়াশিংটন পশ্চিম গোলার্ধে আরও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

'বে অব পিগস'–এর পুনরাবৃত্তি কি সম্ভব?

১৯৬১ সালের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্র কিউবায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত ফিদেল কাস্ত্রোর সমাজতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে একটি ব্যর্থ সামরিক অভিযান চালায়, যা ইতিহাসে 'বে অব পিগস অভিযান' নামে পরিচিত। সিআইএ এই অভিযানের পরিকল্পনা করেছিল এবং এতে প্রায় ১,৫০০ আমেরিকায় প্রশিক্ষিত কিউবান নির্বাসিত সৈন্য অংশ নেয়। তারা কিউবার দক্ষিণ উপকূলে অবতরণ করলেও কাস্ত্রোর নেতৃত্বে বাহিনী ও জনগণের প্রতিরোধে তারা মাত্র তিন দিনের মধ্যেই পরাজিত হয়। ১,২০০ জনেরও বেশি বন্দি হয় এবং ১১৮ জন নিহত হয়।

এই ব্যর্থতা তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির সরকারের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক আঘাত ছিল এবং আন্তর্জাতিক স্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়।

বিপরীতে, কাস্ত্রোর অবস্থান মজবুত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর হয়, যা পরিণামে ১৯৬২ সালে কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সৃষ্টি করে। আজও কিউবায় ১৯ এপ্রিলকে 'বিজয়ের দিন' হিসেবে উদযাপন করা হয়।

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে তুলনা

যদিও সম্ভাব্য মার্কিন আক্রমণ ও 'বে অব পিগস'–এর মধ্যে কিছু মিল রয়েছে, তবে একেবারে একই রকম পুনরাবৃত্তি হওয়া সম্ভাবনা কম।

১. আক্রমণের প্রকৃতি ভিন্ন: “বে অব পিগস” অভিযান ছিল পরোক্ষ, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেয়নি; কিন্তু ভেনেজুয়েলায় আক্রমণ হলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ। ফলে এর পরিসর ও মাত্রা তুলনাহীন।

২. জনগণের প্রতিরোধ: যেভাবে কিউবার জনগণ কাস্ত্রোর পাশে দাঁড়িয়েছিল, তেমনি আজও বহিরাগত চাপ ও পশ্চিমা প্রচারণা সত্ত্বেও অনেক ভেনেজুয়েলান মাদুরো সরকারের সমর্থক। সাম্প্রতিক সামরিক মহড়া ও গণর‍্যালি জনগণ ও সেনাবাহিনীর ঐক্যের প্রমাণ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ সতর্ক করে বলেছেন, সিআইএ–এর যেকোনো গোপন মিশন অতীতের মতোই ব্যর্থ হবে, কারণ সেনা ও জনগণ প্রস্তুত।

৩. আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: বর্তমান বিশ্ব ও বিশেষত লাতিন আমেরিকার জনমত এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অনেক বেশি সংবেদনশীল। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এবং ব্রাজিল সরকার ইতোমধ্যে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে যে, ভেনেজুয়েলায় মার্কিন আগ্রাসন সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকাকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। অর্থাৎ, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় লাতিন আমেরিকা বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনোভাবেই ওয়াশিংটনের পুরোনো ধাঁচের হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না- এমনকি যদি তা 'মাদকবিরোধী লড়াই'-এর নামেও হয়।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলাকে টার্গেট করে রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়াচ্ছে, বাস্তবতা হলো— ১৯৬১ সালের 'বে অব পিগস'-এর মতোই, এই অঞ্চল আবারও প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। যদি মার্কিন আক্রমণ ঘটে, তবে তা আমেরিকার জন্য আরেকটি ব্যর্থতা ও আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার কারণ হতে পারে।#

পার্সটুডে/এমএআর/২৫