লেবাননে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল-আমেরিকা; অপেক্ষা করছে তৃতীয় পরাজয়
-
আতওয়ান
পার্সটুডে- বিশিষ্ট আরব বিশ্লেষক আব্দুল বারি আতওয়ান এক নিবন্ধে লিখেছেন, এমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে যা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইসরায়েল লেবাননের বিরুদ্ধে একটি বড় আকারের সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এই যুদ্ধ ইসরায়েলের জন্য ২০০৬ সালের যুদ্ধের পরাজয়ের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর হবে। অন্যদিকে, হিজবুল্লাহও এমন উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অস্ত্র তৈরি করছে যা পুরো অঞ্চলের ভারসাম্য পাল্টে দিতে পারে।
রাই আল-ইয়াওম পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল বারি আতওয়ান তার কলামে আরও লিখেছেন, অনেক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে যাতে এটা স্পষ্ট দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করতে পারে। তার মতে, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় চালানো হবে এবং এর ফল ইসরায়েলের জন্য ২০০৬ সালের জুলাই যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ হবে।
পার্সটুডে জানিয়েছে- তিনি পাঁচটি মূল আলামত তুলে ধরেছেন।
প্রথম ইঙ্গিত হলো লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালামের বক্তব্য, যিনি জাতিসংঘের যুদ্ধবিরতি তদারকি কমিটির প্রধান জেনারেল জোসেফ ক্লারফিল্ড–এর সঙ্গে অপ্রত্যাশিত সাক্ষাতের পর বলেন- লেবানন বছরের শেষ নাগাদ লিতানি নদীর দক্ষিণাঞ্চলের নিরস্ত্রীকরণ সম্পন্ন করবে।
দ্বিতীয় ইঙ্গিত হিসেবে আতওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া ও লেবাননবিষয়ক বিশেষ দূত থমাস বারাকের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, “লেবাননের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের সময় এসে গেছে"। তিনি বলেন, যদি লেবানন সরকার হিজবুল্লাহ নিরস্ত্রীকরণে দেরি করে, ইসরায়েল একতরফা পদক্ষেপ নিতে পারে।
তৃতীয় ইঙ্গিত হলো— দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যাপক মহড়া, যেখানে স্থল, নৌ ও আকাশপথে লেবাননে হামলার অনুশীলন চালানো হয়েছে।
চতুর্থ ইঙ্গিত, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চল “দাহিয়া” থেকে বাসিন্দাদের ক্রমবর্ধমান হারে উত্তরে বা উত্তর-পূর্বে নিরাপদ অঞ্চলে সরে যাওয়া।
পঞ্চম ইঙ্গিত, লেবাননের আকাশে দিনরাত অবিরাম ইসরায়েলি গোয়েন্দা ড্রোনের উড্ডয়ন এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হচ্ছে— ইসরায়েল বৈরুত বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পানি সরবরাহ নেটওয়ার্কসহ লেবাননের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে নিশানা করতে পারে।
আতওয়ান লিখেছেন, এসব হুমকি ও চাপের পাশাপাশি ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হচ্ছে, হিজবুল্লাহ খুব দ্রুত তাদের সামরিক ও সাংগঠনিক সক্ষমতা পুনর্গঠন করেছে। তারা এখন এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম যা আগের যুদ্ধের তুলনায় অনেক বেশি নির্ভুল ও ধ্বংসাত্মক।
লেবাননি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি খিলেছেন, “পরবর্তী বড় চমক” হতে পারে হিজবুল্লাহর হাইপারসনিক (অতিদ্রুত) ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইয়েমেনের তুলনায় ভারী ক্লাস্টার ওয়ারহেড। হিজবুল্লাহর মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম সাম্প্রতিক ভাষণে জোর দিয়ে বলেছেন, প্রতিরোধের অস্ত্র ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য নয়। এই অস্ত্র লেবাননের জাতীয় শক্তির অংশ এবং নিরস্ত্রীকরণ দেশের সমস্যার সমাধান করবে এমন ধারণা ভুল।
আতওয়ান আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ঘন ঘন ইসরায়েল সফরের উদ্দেশ্য আসলে গাজায় যুদ্ধ থামানো বা যুদ্ধবিরতি রক্ষা নয়; বরং ইরান, লেবানন ও ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যৌথ ইসরায়েলি-মার্কিন হামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা।
তার বিশ্লেষণে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ইসরায়েল লেবাননে দুইবার “লজ্জাজনকভাবে” পরাজিত হয়েছে— প্রথমবার ২০০০ সালে দক্ষিণ লেবানন থেকে একতরফা ভাবে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়বার ২০০৬ সালের যুদ্ধে। আতওয়ানের মতে, তৃতীয় পরাজয়ও আসন্ন, কারণ যারা দুই বছর ধরে গাজায় যুদ্ধ করেও লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, তারা লেবাননেও জিততে পারবে না।
তিনি বলেন, “লেবানন ও ইরান একা থাকবে না; ধৈর্য ও সংযমের যুগ শেষ হয়ে গেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ির সাম্প্রতিক বক্তব্যও এই বাস্তবতাকে নিশ্চিত করছে। আগত দিনগুলোই সবকিছুর উত্তর দেবে।”#
পার্সটুডে/এসএ/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।