শহীদ-সম্রাটের চেহলামে অশ্রুসিক্ত জনসমুদ্র ও কান্নার অনন্য শক্তি!!
(last modified Mon, 29 Oct 2018 11:15:58 GMT )
অক্টোবর ২৯, ২০১৮ ১৭:১৫ Asia/Dhaka

শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন (আ) এমন এক বিশাল ব্যক্তিত্ব যে কোনো নির্দিষ্ট স্থান, কাল ও পাত্রের সাধ্য নেই তাঁকে ধারণ করার। তাই তাঁর প্রতি বিশ্ববাসীর ভালবাসা ক্রমেই বাড়ছে। পবিত্র বিশে সফর তথা হযরত ইমাম হুসাইন (আ)'র শাহাদাতের চল্লিশা বা চেহলাম বার্ষিকী উপলক্ষে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি সবাইকে এবং এই মহামানব, তাঁর পবিত্র বংশধর ও কারবালায় শহীদ তাঁর ৭২ সঙ্গীর প্রতি জানাচ্ছি অশেষ সালাম ও দরুদ।

শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন (আ) এমনই এক মহা-প্রদীপ যার নুর  ক্রমেই বাড়ছে এবং বাড়ছে তাঁর বহুমুখী চৌম্বকীয় আকর্ষণ।  বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের বাধা,সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের ঘটনা,নতুন করে প্রাণহানির আশঙ্কা ও নানা ধরনের বিরতিহীন বিরূপ প্রচারণা সত্ত্বেও ইমাম হুসাইনের চেহলাম অনুষ্ঠানে বহু দেশের সর্বস্তরের কোটি কোটি মানুষের কারবালা আগমন এবং বিশ্বের নানা অঞ্চল থেকে  কারবালাগামী দীর্ঘতম পদযাত্রা ও শোক-সমাবেশই এর বড় প্রমাণ। মহা-বিস্ময়ের ব্যাপার হল  বিনামূল্যে জিয়ারতকারীদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন স্থানীয় জনগণ! আর এটাও ইমাম হুসাইনের এক বড় মু’জিজা!

যদিও সাম্রাজ্যবাদ-নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের অনেক বড় বড় সংবাদ-মাধ্যম ও  মিডিয়া এমন একটি অবিস্মরণীয় মহৎ ঘটনা সংক্রান্ত খবরগুলোকে এড়িয়ে চলছে বা খুব কম গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে তা সত্ত্বেও প্রকৃত ইসলামের এই অনির্বাণ  আলো ধীরে ধীরে বিশ্ব-জনমত আর বিশ্ব-বিবেকের কাছে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য ও মানব-সভ্যতার জাগরণ তথা উন্নয়নের এক ভীষণ সম্ভাবনাময় মাধ্যম হয়ে দেখা দিয়েছে। শিয়া ও সুন্নি নির্বিশেষে সব মাজহাবের মুসলমান এবং এমনকি অনেক অমুসলমানের কাছে আজও ইমাম হুসাইন (আ) মানবজাতির জন্য মুক্তির আশা-জাগানো এক অনন্য সংগ্রামী আদর্শের প্রতীক।

অন্য সবার আগে ইমাম হুসাইনের (আ) বীরত্বপূর্ণ শাহাদতই একমাত্র ঘটনা যার স্মরণে চেহলাম বা ৪০ তম দিবসের শোক-পালনের প্রথা চালু রয়েছে। কিন্তু কেনো এই মহা-সম্মান তাঁর প্রাপ্য এবং এই চেহলাম পালন কি ইসলাম-সম্মত?

ইমাম হুসাইনের শাহাদতের চেহলাম পালনের প্রথা পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ এবং এ জন্যই বিশ্বনবীর (সা) আহলে বাইতের নির্দেশনায় এই প্রথা চালু হয়েছে মুসলমানদের মধ্যে।  ইমাম হুসাইনের জন্য শোক প্রকাশের স্থায়ীত্ব প্রসঙ্গে বিশ্বনবী (সা) বলেছেন,নিশ্চয়ই প্রত্যেক মু'মিনের হৃদয়ে হুসাইনের শাহাদতের ব্যাপারে এমন ভালবাসা আছে যে তার উত্তাপ কখনো প্রশমিত হবে না। তিনি আরও বলেছেন,'নিশ্চয়ই সমস্ত চোখ কিয়ামতের দিন কাঁদতে থাকবে, কেবল সেই চোখ ছাড়া যা হুসাইনের বিয়োগান্ত ঘটনায় কাঁদবে,ঐ চোখ সেদিন হাসতে থাকবে এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ ও বিপুল নেয়ামত দান করা হবে।'

 ইসলামে ৪০ সংখ্যাটির রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। যেমন,মহানবী (সা) ৪০ বছর বয়সে নবুওতি তৎপরতা শুরু করেন আনুষ্ঠানিকভাবে। হযরত মুসা নবী আল্লাহর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাতে যান ৪০ দিনের জন্য।

ইসলামের শত্রুরা মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতকে ও তাঁদের পবিত্র নামকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল চিরতরে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে এর উল্টো। কারণ, মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর ধর্মের নুরকে রক্ষার এবং তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কুরআনে তা কাফির-মুশরিকদের কাছে তা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন।

তাই দেখা যায় ইমাম হুসাইনের জন্য যুগ যুগ ধরে মানুষ যত অশ্রুপাত করেছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত করবে তা জমা করা হলে হয়ত একটি সাগরের রূপ নেবে। আজ বিশ্বের কোটি কোটি শোকার্ত মানুষ ইমাম হুসাইনের চেহলাম-বার্ষিকীতে জড়ো হচ্ছেন পবিত্র কারবালায়। বিশ্বের নানা অঞ্চলে কোটি কোটি মানুষ পালন করছেন ইমাম হুসাইন (আ)’র চেহলাম বার্ষিকী তথা আরবাঈন। আর ইমাম হুসাইন (আ)’র এমন নজিরবিহীন ও গৌরবময় অনন্য সম্মানের কারণ হল,তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা, বীরত্ব ও  শাহাদাতের ধরণও ছিল নজিরবিহীন। পরিবার-পরিজনসহ যে কষ্ট তিনি হাসিমুখে সহ্য করেছিলেন ইসলামকে রক্ষার জন্য তা অন্য কোনো মহামানবের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।

কারবালার ঘটনা-প্রবাহে ও তার পর কুফা থেকে দামেস্ক পর্যন্ত নিয়ে-যাওয়া বন্দী নবী-পরিবারের ওপর যেসব নৃশংস নির্যাতন করা হয়েছিল সেসবও ছিল নজিরবিহীন। এমনকি ইমাম হুসাইনের সঙ্গী ও পরিবার-পরিজনের বীরত্ব, আনুগত্য এবং ত্যাগ-তিতিক্ষাও ছিল নজিরবিহীন। ইমাম হুসাইন (আ) শাহাদাতের  যে আদর্শ রেখে গেছেন তা না থাকলে ইসলাম চিরতরে বিদায় নিত এবং ইসলাম যে সব ধরনের অন্যায়,জুলুম ও মোনাফিকির বিরুদ্ধে সংগ্রামের ধর্ম মানুষ তা ভুলে যেত। তিনি ইসলামকে এভাবে রক্ষা করবেন বলেই বিশ্বনবী (সা) বলেছিলেন, হুসাইন আমা থেকে ও আমি হুসাইন থেকে।

ইমাম হুসাইনের আদর্শকে টিকিয়ে রাখার একটি বড় পন্থা হল শোককে শক্তিতে রূপান্তর করা এবং সে জন্যই ইমামের শাহাদাতের চেহলামসহ আশুরার শোকের সংস্কৃতি এত বেশি বিস্তৃত হয়েছে ও গুরুত্ব পেয়েছে। বলা হয় সত্যের সংগ্রামীদের জন্য প্রতিটি দিনই আশুরা ও প্রতিটি ময়দানই কারবালা।

ইমাম জাফর আস সাদিক (আ) বলেছেন,'আমাদের ওপর তথা মহানবীর আহলে বাইতের ওপর যে জুলুম করা হয়েছে তার কারণে যে শোকার্ত তার দীর্ঘশ্বাস হল তাসবিহ এবং আমাদের বিষয়ে তার দুশ্চিন্তা হল ইবাদত এবং  নিশ্চয়ই এ হাদিসটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা উচিত।

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সপরিবারে শাহাদাত বরণের জন্য শোক ও মাতম করার মূল প্রোথিত রয়েছে ইতিহাসের গভীরে। মহান আম্বিয়ায়ে কেরাম,এমনকি আসমানের ফেরেশতাকুলও নিজ নিজ পন্থায় এ শহীদ ইমামের জন্যে আযাদারী করেছেন। আশুরার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরে চারদিকে আঁধার নেমে আসে এবং কারবালার আকাশ কালো ধুলোয় ভরে যায়। আর সেখানকার নুড়ি পাথরগুলো, এমনকি পানির মাছগুলো চল্লিশ দিন ধরে ইমামের শোকে ক্রন্দন করতে থাকে।

তারিখে ইবনে আসিরের তৃতীয় খণ্ডের ২৮৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,‘ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মুসিবতে আকাশ চল্লিশ দিন ধরে ক্রন্দন করে।’

ইমাম হুসাইন (আ) সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা) বলেছেন,হুসাইন আমার সন্তান,আমার বংশ ও মানবজাতির মধ্যে তাঁর ভাই হাসানের পর সে-ই শ্রেষ্ঠ। সে মুসলমানদের ইমাম,মুমিনদের অভিভাবক,জগতগুলোর রবের প্রতিনিধি বা খলিফা, ... সে আল্লাহর হুজ্জাত বা প্রমাণ পুরো সৃষ্টির ওপর,সে বেহেশতের যুবকদের সর্দার, উম্মতের মুক্তির দরজা। তাঁর  আদেশ হল আমার আদেশ। তাঁর আনুগত্য মানে আমারই আনুগত্য করা। যে-ই তাঁকে অনুসরণ করে সে আমার সাথে যুক্ত হয় এবং যে তাঁর অবাধ্য হয় সে আমার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। ....

মহানবী (সা) আরও বলেছেন,নিশ্চয়ই হুসাইন বিন আলীর মূল্য আকাশগুলো ও জমিনগুলোর চেয়ে বেশি এবং নিশ্চয়ই তাঁর বিষয়ে আল্লাহর আরশের ডান দিকে লেখা আছে :হেদায়াতের আলো,নাজাতের নৌকা,একজন ইমাম,দুর্বল নন, মর্যাদা ও গৌরবের উৎস,এক সুউচ্চ বাতিঘর এবং মহামূল্যবান সম্পদ। (মিজান আল হিকমাহ নামক হাদিস গ্রন্থ)

ইমাম হুসাইন (আ)'র জন্মের পর এই নবজাতক শিশু সম্পর্কে বিশ্বনবী বলেছিলেন, 'নিশ্চয়ই সে একজন ইমাম ও ইমামের সন্তান এবং নয়জন ইমামের পিতা। তাঁদের  নবম জন হবেন আল-কায়েম তথা মাহদি।'

ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্য শোক পালন একটি প্রাচীন রীতি এবং আল্লাহ্ ও রাসূল (সা.)-এর পক্ষ থেকে প্রবর্তিত বিষয়। যেমন,রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইমাম হুসাইনের ঠোঁটে এবং গলায় চুম্বন দিতেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলতেন :  ‘আমি তলোয়ারের জায়গাগুলোতে চুম্বন করছি।’ইমাম হুসাইনের জন্য আগাম কান্নায় অশ্রুসিক্ত হয়েছেন পিতা আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী ও মা খাতুনে জান্নাত ফাতিমা।

ইমাম হুসাইন (আ) নিজেও একাধিকবার কারবালার পথ অতিক্রম করার সময় মহা বিপদ সম্পর্কিত তাঁর প্রিয় নানা ও পিতার ভবিষ্যদ্বাণীর আলামতগুলো দেখে কেঁদেছিলেন। আর আশুরার রাতে সঙ্গী-সাথী ও পরিবারবর্গের মাঝে কান্নাকাটি বা আযাদারী অনুষ্ঠান করেন,সন্তানদের থেকে বিদায় গ্রহণ করেন এবং এক বর্ণনা অনুযায়ী তিনি বনি হাশিমের একেক জন যুবকের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলেন এবং ক্রন্দন করছিলেন। তিনি পবিরারবর্গকেও বলেন তাঁর জন্য কাঁদতে। বিশেষ করে বোন যাইনাব ও প্রাণপ্রিয় পুত্র যাইনুল আবেদীন (আ.)-কে নির্দেশ দেন তাঁর শাহাদাতের পর যেন বন্দি অবস্থায় চলার পথে যেখানেই যাত্রাবিরতি করা হবে, সেখানে তাঁর মজলুম হওয়ার কথা তুলে ধরা হয় এবং জনগণের বিশেষ করে সিরিয়ানদের কানে তা পৌঁছানো হয়।

ইমাম হুসাইন (আ) নিজেই তাঁর অনুসারীদের আশুরার শোক ও ব্যাপক কান্নাকাটি বা মাতম অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে তা ভবিষ্যৎ-প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবার নির্দেশ দেন। শোকাশ্রু বিসর্জন এবং আশুরার দিনে তাঁর মুসিবতের কথা স্মরণ করে আযাদারী করার তাৎপর্য প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন : ‘আমি অশ্রুর শহীদ,আমি নিহত হয়েছি চরম কষ্ট স্বীকার করে,তাই কোন মুমিন আমাকে স্মরণ করলে ক্রন্দন না করে পারে না।’

মোটকথা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জন্য ক্রন্দন ও আযাদারীর শিকড় প্রোথিত রয়েছে ইসলাম ধর্মের গভীর বিশ্বাসের ভেতরে এবং বিভিন্ন বর্ণনা মোতাবেক এর অশেষ প্রভাব ও বরকত রয়েছে। তার মধ্যে উৎকৃষ্টতম প্রভাব হল তা আমাদের অন্তরগুলোর মরিচা দূর করে,আমাদের জীবনকে উন্নত করে এবং সত্যের পথে অকুতোভয় ও বাতিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার দুনির্বার মানসিকতা দান করে। ফলে আল্লাহ্‌র রহমত সকলের ওপরে অবারিত হয়। শোকের এ শক্তি কত জালিমকে উৎখাত করেছে,কত মজলুমের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে,ইসলামকে কতবার যে ধ্বংসের কবল থেকে উদ্ধার করেছে তা কেবল ইতিহাসই বলতে পারে।

ইমাম যাইনুল আবেদীন (আ.) তাঁর পিতার শাহাদাতের পর ইবনে যিয়াদের কাছে যেসব দাবি তুলে ধরেন তার অন্যতম ছিল,একজন বিশ্বাসভাজন লোককে কাফেলার সাথে দেয়া যাতে সে যাত্রা বিরতির স্থানগুলোতে আযাদারীর ব্যবস্থা করে। আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় সেদিন দুশমন এ শর্তটি মেনে নিয়ে নোমান ইবনে বাশীরকে কাফেলার সাথে পাঠায়। নোমান ওই শর্ত মেনে চলে। ফলে ইমাম হুসাইনসহ কারবালার শহীদদের কঠিন বিপদ ও দুর্দশার কথা বর্ণনার মাধ্যমে একদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইমাম পরিবার সম্পর্কে সহানুভূতি সৃষ্টি হয়,অন্যদিকে জালেম ইয়াযীদ ও তার দোসরদের মুখোশ খুলে পড়ে। স্বয়ং নোমান দীর্ঘ এ যাত্রাপথে ইমাম যাইনুল আবেদীন ও হযরত যাইনাবের বয়ান শুনে উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকে।

এরপর কাফেলা যখন মদীনায় পৌঁছে,তখন নোমান সবার আগে ছুটে গিয়ে মদীনায় প্রবেশ করে এবং আকুল হয়ে কাঁদতে কাঁদতে একটি কাসিদার মাধ্যমে আহলে বাইতের মুসিবতের কথা মদীনার জনগণের কাছে বর্ণনা করে। কাসিদাটির অংশবিশেষ নিম্নরূপ :

‘হে মদীনাবাসী! তোমাদের জন্য আর কোন থাকার জায়গা রইল না। কারণ, হুসাইন কতল হয়েছেন। গায়ের জামাগুলো ছিঁড়ে ফেল, কারণ,তাঁর পবিত্র দেহ কারবালার ময়দানে টুকরো টুকরো হয়েছে। আর তাঁর কাটা মস্তক এখন বর্শার মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে!’

মদীনার জনগণ এ খবর শুনে বেহাল হয়ে ছুটে আসে। সবাই উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকে। ফলে হৃদয়-বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় যা মদীনা কোনদিন দেখেনি। সবাই পাগলপারা হয়ে নবী পরিবারের কাফেলার দিকে ছুটে যায়। ঘরে ঘরে শোক-প্রকাশ এবং কান্নার রোল পড়ে গেল। একটি তাঁবু বানানো হয় ইমাম যাইনুল আবেদীন (আ.)-এর জন্য। শোকার্ত মানুষ তাঁকে ঘিরে রেখে সান্ত্বনা দিচ্ছিল এবং তাঁর হাতে-পায়ে ভক্তিভরে চুম্বন করছিল। পুরুষরা উচ্চস্বরে কাঁদছিল আর নারীরা তাদের মুখ ও বুক চাপড়াচ্ছিল। কাফেলা যখন শহরে প্রবেশ করে,তখন ইমাম হুসাইন (আ.)-এর ইয়াতিম বাচ্চাগুলোকে মদীনার নারীরা বুকে টেনে নেয়। আর পুরুষরা ইমাম যাইনুল আবেদীনকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল।

ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের পর বিখ্যাত সাহাবী হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্ আল আনসারী কারবালা প্রান্তরে যান। সেখানে তাঁর বুকফাটা ক্রন্দন এবং সাইয়্যেদুশ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইনের কবর-পার্শ্বে তাঁর আকুলতার ভাষাগুলো যে কোন মুমিনের অন্তরে শোকের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এভাবে আযাদারীর বিস্তার ঘটতে ঘটতে গোটা দুনিয়া জুড়ে ইমাম হুসাইন(আ.)-এর স্মরণে শোক ও মাতম এক আদর্শে রূপ নেয় যা আজও অব্যাহত আছে। আজ শত সহস্রগুণ বেশি ভক্তকুল সব বাঁধা অতিক্রম করে ইমামের শোক ও যিয়ারতের মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। এ শোক পালনের মাধ্যমে হক তথা সত্য সবসময় সমহিমায় হচ্ছে উদ্ভাসিত এবং বাতিল হচ্ছে উৎপাটিত। ফলে ধর্মদ্রোহী উমাইয়্যারা ও ইয়াযীদরা ধর্মব্রতী সেজে আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। পাশাপাশি হুসাইনী হয়ে বেঁচে থাকার প্রবল আকুতিতে ভরা শোকানুষ্ঠান ইসলামের ইতিহাসে অনেক নজিরবিহীন বীরত্বগাঁথা ও মহাকাব্যের জন্ম দিয়েছে। মুমীনদের আত্মপরিচয় খুঁজে পাওয়ার এবং উন্নত মনোবৃত্তির সকল শিক্ষা রয়েছে ইমাম হুসাইনের জন্য শোক ও মাতমের মধ্যে।

আসলে যতদিন ইমাম হুসাইনের এ মহান আত্মত্যাগের স্মরণে অন্তরে ভক্তি ও ভালবাসা থাকবে,আর জিহ্বায় থাকবে তার সাহসী প্রকাশ,ততদিন এ রক্তাক্ত শাহাদাতের বাণী সমুন্নত ও চিরন্তন থাকবে,পৌঁছে যাবে পরবর্তী বংশধরদের কাছে।#

পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/২৯

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন