চাল কেটে মিনিকেট নাজিরশাইল নামে বিক্রি: বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, হাইকোর্টে রিট
(last modified Mon, 22 Nov 2021 12:50:12 GMT )
নভেম্বর ২২, ২০২১ ১৮:৫০ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য চাল। আর এ চাল নিয়ে অনেক দিন ধরেই চলছে জোচ্চুরি। সাধারণ মানের মোটা চালকে মেশিনে কেটে বা ছাঁটাই করে চিকন এবং উন্নত মানের চাল হিসেবে বেশি দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছিল অনেক বছর ধরেই।

সম্প্রতি এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পর নড়ে চড়ে বসে সংশ্লিষ্ট  সরকারি সংস্থাগুলো। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি তথ্য প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রংপুরের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক সরকার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এভাবে চাল চিকন করতে গিয়ে চালের উপরের অংশ ছাটাই করে দেয় যাতে খাদ্য মান কমে যায় এবং এ চাল খেয়ে ভোক্তারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে যায়। তাছাড়া, চালকে চকচকে করতে যে সব রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয় সেটাও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিষয়টির জনগুরুত্ব বিবেচনা করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে একটি রিট  আবেদন করে।

জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেয়।

হাইকোর্ট তার রুলে যেসব অটো রাইস মিলে চাল কেটে বা ছেঁটে মিনিকেট বা নাজিরশাইল নামে বিক্রি করছে তাদের তালিকা চেয়েছে। এ বিষয়ে চার মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া চাল কেটে বা ছেঁটে উৎপাদনের কারণে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি না এবং খাদ্যের পুষ্টিমান নষ্ট হয় কি না- সে বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে চাল কেটে বা ছেঁটে পুষ্টিগুণ নষ্ট করে বাজারজাত বা বিক্রি করা বন্ধে নির্দেশনা বা গাইডলাইন তৈরি করার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান।

এ প্রসঙ্গে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ রেডিও তেহরানকে জানান, বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন চালকে অটো রাইস মিলের মাধ্যমে কেটে বা ছেঁটে পুষ্টি অধিক মুনাফার লোভে বাজারজাত করা হচ্ছে। এমনকি যেসব ধান বাংলাদেশে উৎপন্ন হয় না সেসব নামেও বাজারে চাল সরবরাহ করছে অসাধু মিলাররা। ভোক্তা আইন অনুযায়ী এটি ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা এবং অপরাধ। এতে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট উপস্থাপন করে মনজিল মোরসেদ বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে অধিক চকচকে পলিশকৃত ও ছাঁটাইকৃত চালে দরকারি খাদ্য মান  হ্রাস পায় এবং পুষ্টি উপাদান অনেক কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে চালের ওপরের অংশ ছেঁটে ফেলার কারণে যে চাল মানুষ গ্রহণ করছে সেখানে কার্বোহাইড্রেডের অংশ বেশি। যে কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের শঙ্কা বাড়ছে।

আদালতের রুলে তিন সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, খাদ্য সচিব, কৃষি সচিব, বাণিজ্য সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের ডিজি, র‍্যাব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বিএসটিআই, রাইস রিসার্স ইনস্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং অটো রাইস মিলস মালিক সমিতির সভাপতি বা সেক্রেটারিকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।#

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ