ভারতে হিজাব বিতর্ক: বাংলাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত
(last modified Wed, 16 Feb 2022 09:55:38 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২ ১৫:৫৫ Asia/Dhaka
  • ভারতে হিজাব বিতর্ক: বাংলাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত

ভারতের কর্ণাটকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরিধানের ওপর বিধি-নিষেধের ঘটনায় বাংলাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ ও নিন্দা অব্যাহত রয়েছে।

কর্নাটকের মুসলিম ছাত্রী মুসকান খানের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং তার ওপর উগ্রবাদীদের চড়াও হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশের প্রধান বিচারালয় সুপ্রিম কোর্টে সভা করেছেন আইনজীবীরা।

গতকাল (মঙ্গলবার) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে ‘ভয়েস অব লাইয়ার্স অব বাংলাদেশ'-এর উদ্যোগে এ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন আহমেদের সভাপতিতে সভায় শতাধিক আইনজীবী অংশ নিয়ে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, হিজাব পরিধান করা ইসলামের একটি মৌলিক বিধান এবং এটা মুসলিম নারীদের একটি অধিকার। কিন্তু কর্ণাটকের কলেজছাত্রী মুসকান খানকে হিজাব পরিধান করায় তাকে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন সংঘবদ্ধভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে তার ওপর চড়াও হলে সে ‘আল্লাহু আকবার’, ধ্বনি দিয়ে প্রতিরোধ করেন।

সংগঠনের মুখপাত্র সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আশরাফ উজজামানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক ছাত্রনেতা সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আহমেদ বুলবুল চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ড. মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, বারের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, বারের সাবেক সহ-সভাপতি মুক্তার কবির, সাবেক সহ-সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব, মাইনুদ্দিন ফারুকী, ব্যারিস্টার গোলাম মোস্তফা তাজ, রফিকুল ইসলাম তালুকদার রাজা, আইনজীবী জাকারিয়া সরকার, মুজাহিদুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন ও বারের সাবেক নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খন্দকার।

মুসকান খান

এদিকে দেশের ইসলামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে ভারতে হিজাব বিরোধী তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেছেন,  মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশাসনের অন্যতম হিজাবের বিরুদ্ধে উগ্রবাদীদের হামলা ও মুসলমান নারীদের হেনস্তায় মুসলিম উম্মাহ চরমভাবে ক্ষুব্ধ। হিজাব নিয়ে ভারতীয় উগ্রবাদীদের ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না।

মোদি সরকারের আমলে মুসলমানদের ওপর নানা প্রকার নির্যাতন করার পর ব্যক্তিগতভাবে নিরীহ মুসলিম ছাত্রীদেরকে হেনস্তার ঘটনা অত্যন্ত আপক্তিকর ও অমানবিক। কালবিলম্ব না করে এইসব কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য মোদি সরকারের প্রতি বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অনুরোধ জানিয়েছেন।

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ নেজামী ইসলাম পার্টির সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাওলানা আব্দুর রকিব এবং মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবুল করিম খাঁন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতে হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের হেনস্তার ঘটনা মুলিম জাতির অন্তরে চরম আঘাত করেছে। ধর্ম নিরপেক্ষতার দাবিদার  ভারতের সংবিধানে মুসলমানসহ সকল ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে কোনো প্রকার আঘাত করার অধিকার দেওয়া হয়নি। অবিলম্বে এ ধরনের নোংরামি বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতি মো. আব্দুল কাইয়ূম এক বিবৃতিতে বলেন, মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরিধান আল্লাহ পাকের নির্দেশ এই ব্যাপারে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। তিনি অবিলম্বে ভারত সরকারকে হিজাবের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর আমির মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন আকন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের উগ্রপন্থী হিন্দু মৌলবাদি সম্প্রদায় হিজাবের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত হেনেছে। হিজাব শুধু ভারতের নারীর জন্য নহে, বিশ্ব মুসলিম নারীদের ধর্মীয় পোষাক। ভারতে হিজাব ইস্যুকে জঙ্গি ভাবা ঠিক হবে না।

ভারতীয় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে ও শিক্ষাঙ্গন থেকে এই ধর্মীয় স্বাধীনতার হিজাব মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আন্দোলনের কারণে ভারতের আদালত থেকে ধর্মীয় স্বাধীনতা হিজাবকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই হিজাব নিয়ে কটাক্ষ ও আক্রমণের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।

এ ছাড়া জাতীয় তাফসীর পরিষদ-এর চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা মাকসুদুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি বাকি বিল্লাহ ও মুফতী শরীফউল্লাহ সামদানী এক যুক্ত বিবৃতিতে কর্ণাটক প্রদেশের স্কুলে হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের হেনস্তার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের ঘটনা ধর্মীয় অধিকার ও নাগরিক খর্ব করার শামিল। তারা বলেন, হিজাবের অধিকার কেড়ে নেয়ার আখের ভালো হবে না। ভারতের সেক্যুলার সংবিধান অনুযায়ী নিজস্ব ধর্মীয় বিধান পালন ও পোশাক পছন্দের বিষয়টি একজন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে ও মুসলিমবিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কর্ণাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধের মতো সংবিধানবিরোধী নির্লজ্জ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকারকে সরে আসতে হবে। অন্যথায় দেশে দেশে প্রতিবাদের দাবানল জ্বলে উঠবে।

কর্ণাটকে শিক্ষার্থীদের হিজাব পরা নিয়ে বিতর্কে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখা দিয়েছে কর্নাটকসহ ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লী এবং অন্য প্রদেশেও; পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষকে কয়েকদিনের জন্য কর্নাটক রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশও দিতে হয়েছে।

এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে কর্ণাটক হাই কোর্টের এক রায়ে ‘হিজাব না পরে ক্লাসে ফেরার’ নির্দেশনায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব অনুমোদন পাবে কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত রায় আসার আগ পর্যন্ত ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের শিক্ষার্থীদের আপাতত ধর্মীয় পোশাক পরে ক্লাসে না যাওয়ার জন্য নির্দেশ  দিয়েছে দেশটির আদালত।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ