হোসেনি দালানে হামলা: পরিকল্পনাকারীকে কেন আসামি করা হয়নি, প্রশ্ন বিচারকের
-
হোসেনি দালানে বোমা হামলার মামলার রায়ের আগে আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়
বাংলাদেশের রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনি দালান গ্রেনেড হামলার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী নোমানকে কেন আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি- সে বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে কোনও বক্তব্য দেননি বলে পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে আরও কিছু অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে আদালত বলেছেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সফিউদ্দিন শেখ মারাত্মক ভুল করেছেন এবং চরমভাবে দায়িত্ব অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন।’
আজ (মঙ্গলবার) ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেন।
আদালত জানান, আসামি কবির হোসেন এবং আরমান দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, হোসনি দালান গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ছিল আলবানী এবং নোমান। আর আসামি আরমানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায়, হামলা করেছেন রানা এবং হিরন। নথিতে আরও দেখা যায়, আসামি জাহিদ হাসান ও রানা ঘটনার সময় শিশু ছিল বিধায় বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগ পত্র দেওয়া হয় বিধায় তাদের বিচারের জন্য শিশু আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে আদালত প্রতিবেদনে অসঙ্গতির কথা তুলে ধরে বলেন, আসামি হিরন ও আলবানী নাম পাওয়া গেলেও তারা এই মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আগেই ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে তাদের নাম পুলিশ প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করে নাই’ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. সফিউদ্দিন শেখ কার কাছ থেকে কিংবা কোথায়, কীভাবে এ তথ্য জানতে পেরেছেন— সে বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন নাই। এমনকি হিরন ও আলবানী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার সমর্থনে কোনও কাগজপত্র আদালতে দাখিল করেননি।
আরও পড়ুন: পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে বোমা হামলায় দু'জনের কারাদণ্ড, খালাস ৬

তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই আসামি চাঁন মিয়া, ওমর ফারুক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ ও শাহজালাল মিয়াকে অত্র মামলায় আসামি হিসেবে অযথাই গ্রেফতার করে বিচারের জন্য পাঠিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সফিউদ্দিন শেখ মারাত্মক ভুল করেছেন এবং চরমভাবে দায়িত্ব অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। এর ফলে হোসনি দালান গ্রেনেড হামলা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী নির্দেশদাতা ও হামলাকারীদের আইনের আওতার বাইরে রয়ে গেছে।
আর কোনও প্রকার সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই যে চার আসামিকে আসামি করা হয়েছে তাদের বিষয়ে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা খামখেয়ালির কারণে আসামি চাঁন মিয়াসহ চার আসামি হয়রানির শিকার হয়েছেন এবং তারা শারীরিক ও মানসিক কষ্টের শিকার হয়েছে।
২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর তাজিয়া মিছিলের জন্য পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে হোসাইনী দালান ইমামবাড়ায় সমবেত হলে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা হোসেনি দালানে বোমা হামলা চালায়। এতে দু'জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।