গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড 'গণহত্যা'র শামিল: জাতিসংঘ
ইউরোপের ফাঁকা প্রতিশ্রুতি ইরানকে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে: লারিজানি
-
আলী লারিজানি
পার্সটুডে: ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী লারিজানি বলেছেন, ইউরোপ এক বছর ধরে ফাঁকা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইরানকে অপেক্ষায় রেখেছিল কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন যদি কাউকে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয় তবে তা আমেরিকা ও ইউরোপ, ইরান নয়।
আলী লারিজানি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তথাকথিত 'স্ন্যাপব্যাক মেকানিজম' প্রসঙ্গে বলেন, এই প্রক্রিয়ার দর্শন হলো—যদি কোনো পক্ষ তার অঙ্গীকার পূরণ না করে, তবে অপরপক্ষ পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল, প্রথমে আমেরিকা চুক্তি থেকে বের হয়ে গেল এবং নিজের অঙ্গীকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হলো। এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা একটি বিশেষ ব্যাংক তৈরি করবে অথবা ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবে, তবে বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ইরান এক বছর ধরে ইউরোপের প্রতিশ্রুতি পূরণের আশায় ধৈর্য ধরেছিল, কিন্তু কিছুই না দেখে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।
লারিজানি আরও বলেন, দশ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আমেরিকা ও ইউরোপ তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করেনি, বরং ওয়াশিংটন চুক্তি থেকে সরে গেছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানও চালিয়েছে। সুতরাং প্রশ্ন হলো, এখন কাকে জবাবদিহি করতে হবে?

গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আইনি অর্থে 'গণহত্যা': জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধীনস্থ 'স্বাধীন তদন্ত কমিশন' এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড বাস্তব ও আইনি উভয় দিক থেকেই ১৯৪৮ সালের গণহত্যাবিরোধী কনভেনশনের সংজ্ঞার সাথে মিলে যায়। এতে 'ভৌত উপাদান' এবং 'বিশেষ উদ্দেশ্য' উভয়ই রয়েছে, যা গণহত্যা প্রমাণে প্রয়োজন।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গাজায় বড় ধরনের আক্রমণ শুরুর পর যে হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি, পরিকল্পিত জীবনযাপনের অবস্থা তৈরি করে জনগোষ্ঠীর ধ্বংস এবং সন্তান জন্মদান বা প্রজনন বাধাগ্রস্ত করার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—এসবই গণহত্যার উপাদান। এ কর্মকাণ্ডকে অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধ থেকে আলাদা করেছে মূলত সেই 'বিশেষ উদ্দেশ্য'—যা হলো গাজার ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করা।
চীন ও রাশিয়ার প্রস্তাব: স্নাপব্যাক মেকানিজম ছয় মাসের জন্য স্থগিত
রাশিয়া ও চীন শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব করে যে, “স্নাপব্যাক মেকানিজম” ছয় মাসের জন্য স্থগিত রাখা হোক। এর আগে, ইউরোপের তিন দেশ—ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি—২৮ আগস্ট অবৈধভাবে ৩০ দিনের স্নাপব্যাক প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, যাতে নিরাপত্তা পরিষদের পূর্বে বাতিল হওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের বিরুদ্ধে পুনর্বহাল করা হয়।

নিরাপত্তা পরিষদের বাতিলকৃত প্রস্তাব পুনর্বহাল কূটনীতিতে 'প্রাণঘাতী আঘাত': আরাকচি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, বাতিল হওয়া প্রস্তাবগুলো পুনর্বহাল করা কেবল কূটনীতির জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক পরমাণু-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্যও মারাত্মক আঘাত হবে।
তিনি ইউরোপের তিন দেশের অবৈধ পদক্ষেপের নিন্দা করেন এবং নিরাপত্তা পরিষদের চলতি সভাপতি হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেন। আরাকচি সব সদস্য রাষ্ট্রকে আহ্বান জানান, যেন তারা এই পরিষদকে অপব্যবহার করে কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস হতে না দেয়।
তেল আবিবে ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র গতকাল (শুক্রবার) ভোরে এক বিবৃতিতে জানান, ইয়েমেন সেনাবাহিনী দখলদার ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গাজায় গণহত্যার জবাবে তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারিয়ি বলেন, “ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণ ও মুজাহিদদের সমর্থনে এবং গাজায় গণহত্যা ও ইসরায়েলি আগ্রাসনের পাশাপাশি ইয়েমেনের ভূমিতে হামলার জবাবে সেনারা বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট 'ফিলিস্তিন-২' ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে দখলকৃত ইয়াফা অঞ্চলের (তেল আবিব) একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এই হামলায় লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, লাখো ইহুদিবাদী বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়েছে এবং লড বিমানবন্দরের (বেন গুরিয়ন) কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
বিবৃতির আরেক অংশে জানানো হয়, ইয়েমেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট বৃহস্পতিবারের আগ্রাসনের সময় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলোর বিরুদ্ধে একাধিক ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

ন্যাটো ও ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে: ল্যাভরভ
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের ফাঁকে জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বলেন, ন্যাটো ও ইউরোপ ইউক্রেনের মাধ্যমে কার্যত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ সনদের নীতিসমূহ উপেক্ষা করে স্পষ্ট নয়া-ঔপনিবেশিক প্রবণতা বিশ্ব অস্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক সংঘাত বাড়াচ্ছে।
আফগানিস্তান বিষয়ে চীন, ইরান, পাকিস্তান ও রাশিয়ার চারপক্ষীয় বৈঠক
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে আফগানিস্তান ইস্যুতে চীন, ইরান, পাকিস্তান ও রাশিয়ার চতুর্থ চারপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা আফগানিস্তানকে একটি স্বাধীন, ঐক্যবদ্ধ ও স্থিতিশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সমর্থন ব্যক্ত করে—যা সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ ও মাদকমুক্ত হবে।#
পার্সটুডে/এমএআর/২৬