অশনি সংকেত: নিজেদের সৃষ্ট সমস্যায় পিছিয়ে পড়ছে ইউরোপের অর্থনীতি
https://parstoday.ir/bn/news/world-i155094-অশনি_সংকেত_নিজেদের_সৃষ্ট_সমস্যায়_পিছিয়ে_পড়ছে_ইউরোপের_অর্থনীতি
পার্সটুডে- ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট তথাকথিত স্বেচ্ছায় আরোপিত শুল্ক এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেছেন, এসব বাধা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহ সীমিত করছে। তিনি অবিলম্বে কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন।
(last modified 2025-12-14T13:39:23+00:00 )
ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫ ১৯:৫৬ Asia/Dhaka
  • ইউরোপের অর্থনীতিতে অশনি সংকেত
    ইউরোপের অর্থনীতিতে অশনি সংকেত

পার্সটুডে- ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট তথাকথিত স্বেচ্ছায় আরোপিত শুল্ক এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেছেন, এসব বাধা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহ সীমিত করছে। তিনি অবিলম্বে কাঠামোগত সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমানে এক জটিল অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের কারণে জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মহাদেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে সীমিত হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন সতর্কবার্তাগুলো এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বহিরাগত হুমকির আগেই গভীর অভ্যন্তরীণ ও কাঠামোগত বাধাগুলো ইউরোপের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা এবং একক বাজারের ভিত্তিকে দুর্বল করছে। এসব চ্যালেঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতের ভবিষ্যৎ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

লাগার্দের সতর্কতা: ইউরোপ নিজের ক্ষতি করতে পারদর্শী

ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দ এক সাক্ষাৎকারে এই জোটের স্বেচ্ছায় আরোপিত শুল্কের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এসব অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতা কার্যত সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সেবাখাতে ১১০ শতাংশ এবং পণ্যখাতে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সমতুল্য—এটাকে তিনি “চমকে দেওয়ার মতো” ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেন। লাগার্দ জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় পর্যায়ে ইউনিয়নের চাহিদার বাইরে অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি বৈশ্বিক পর্যায়ে ইউরোপের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

ঝড়ের কেন্দ্রে জার্মানি: মন্দা, দেউলিয়াত্ব ও ব্যাপক প্রতিরক্ষা ব্যয়

ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জার্মানিতে সংকট দেখা দিয়েছে। “ক্রেডিটরিফর্ম” ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে কোম্পানির দেউলিয়া হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে এবং প্রায় ২৩ হাজার ৯০০-এ দাঁড়াতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সতর্ক করে বলেন, “জার্মান অর্থনীতি তার প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা হারাচ্ছে। উচ্চ ব্যয়, অতিরিক্ত বুরোক্রেসি এবং দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক দুর্বলতাই দেউলিয়াত্বের প্রধান কারণ।” এমন সময়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো আরও তীব্র হচ্ছে, যখন বার্লিন নজিরবিহীনভাবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াচ্ছে। সামরিক বাজেট জিডিপির ৩.৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা (২০২৯ সালের মধ্যে প্রায় ১৬২ বিলিয়ন ইউরো) শুধু বর্তমান অর্থনীতির ওপর বড় ধরণের চাপই সৃষ্টি করছে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর এই বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে সম্পদের প্রাপ্যতা কমিয়ে দিচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ঝুঁকি এবং প্রযুক্তি নিয়ে বাণিজ্য যুদ্ধ

ইউরোপ এখন কেবল উৎপাদন খাতই ঝুঁকিতে নেই। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ জ্বালানি ব্যয়, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এবং “কার্বন লিকেজ”-এর ঝুঁকির কারণে ইউরোপের ইস্পাত শিল্প গুরুতর হুমকির মুখে রয়েছে। এ কারণে নির্মল প্রযুক্তিতে তাৎক্ষণিক সহায়তা ও বাণিজ্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অবস্থানও উত্তেজনার আরেকটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে অ্যাপল ও মেটার মতো কোম্পানির ওপর আরোপিত জরিমানা থেকে ইউনিয়নের আয় (৩.৮ বিলিয়ন ইউরো) এমনকি ইউরোপীয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর মোট কর আয়ের চেয়েও বেশি ছিল। কিছু বিশ্লেষকের মতে, এই প্রবণতা মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে “অ-শুল্ক আক্রমণ” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাহ্যিক হুমকির মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রয়োজন

ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সতর্কবার্তা এবং জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের কয়েকটি খাতের পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরেছে। এই বাস্তবতা হলো- ভূরাজনৈতিক হুমকি ও তীব্র বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়েও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও নিজের অভ্যন্তরীণ বুরোক্রেটিক ও কাঠামোগত বাধার জালে আটকে রয়েছে। একসময় ইউরোপের অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে পরিচিত একক বাজার এখন নিজেদের আরোপিত শুল্কের কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ইউরোপের প্রতিযোগিতামূলক ভবিষ্যৎ কেবল পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের ওপর নয়, বরং অভ্যন্তরীণ দেয়াল ভেঙে ফেলা, বুরোক্রেসি সংক্রান্ত জটিলতা কমানো এবং ব্যবসার জন্য সত্যিকারের সমন্বিত পরিবেশ গড়ে তোলার রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। এসব সংস্কার ছাড়া ভবিষ্যৎ ধাক্কা মোকাবিলায় ইউরোপের সহনশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।#

পার্সটুডে/এসএ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।