বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন: আশাবাদী বিএনপি, আওয়ামী লীগ বলছে তামাশা
(last modified Fri, 03 Jun 2022 12:34:22 GMT )
জুন ০৩, ২০২২ ১৮:৩৪ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টির পথে অনেকখানি এগিয়েছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বলে তারা দাবি করছে। সব মত ও পথকে একই সুতায় বাঁধতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করেছে দলটি। এর ফলে বৃহত্তর ঐক্যের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী দলটির নীতিনির্ধারকরা।

বিএনপি ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, সরকারবিরোধী সব দলের সঙ্গে সংলাপের পর একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। আপাতত সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়নি।

তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনে করছে, বৃহত্তর ঐক্য’ সৃষ্টির নামে তামাশা সৃষ্টি করে বিএনপি নিজেদের ব্যর্থতা আড়ালের ‘অপচেষ্টা’ চালাচ্ছে।

এদিকে, বিএনপি’র সাথে সংলাপে কয়েকটি দল সুনির্দিষ্ট করে প্রস্তাব দিয়েছে যে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে।

ক্ষমতায় গেলে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে এসব দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপিও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চায়। ক্ষমতায় গেলে প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজ করবে তারা।

বৃহত্তর ঐক্যের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আপাতত যুগপৎ আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামায়াত তাদের মতো করে কর্মসূচি পালন করবে। সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোও বিএনপি’র  এমন অবস্থানে সায় দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং ভোটাধিকার ফেরাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া এ দানব সরকারকে হটানো যাবে না। তাই আমরা বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। সবার কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। বাকি দলগুলোর কাছ থেকেও একই ধরনের সাড়া পাব বলে আশা করি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ফটো)

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব দেশের সকল বাম-ডান রাজনৈতিক দলকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এই সরকার সহজেই বিদায় হবে না। তাদের বিদায় করতে হবে। তার জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। আবারো একটা যুদ্ধ করে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের (ফাইল ফটো)

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) সকালে রাজধানীর সেতু ভবনে ব্রিফিংকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেন, বিএনপি জনগণের কাছে যাওয়ার কোনো ইস্যু খুঁজে পাচ্ছে না। তারা এখন সময় ক্ষেপণের জন্য নিজ বলয়ে সংলাপ করছে। বিএনপির নেতায় নেতায় সংলাপ জনগণ এর আগেও দেখেছে। কিন্তু জনগণ পর্বতের মুষিক প্রসব ছাড়া আর কিছুই দেখেনি।

এদিকে, আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগ নেতা  ওবায়দুল কাদেরকে উল্টোপাল্টা কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসুন। গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন। মানুষকে কথা বলতে দিন। অধিকার প্রয়োগ করতে দিন। তা না হলে আপনাদের ভয়ানক পরিণতি হবে।

এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছিল। আজকে আবার খাদ্যশস্যের দাম বাড়ছে। খাদ্যের দাম বাড়ছে। মানুষের হাহাকার শুরু হয়ে গেছে।

‘সেই ভয়ানক পরিণতি যাতে না হয় তার জন্য এখন থেকে জনগণের অধিকারকে ফিরিয়ে দেন। মানুষ হত্যা বন্ধ করেন। গুম করা বন্ধ করেন। মিথ্যা মামলা দেওয়া বন্ধ করেন। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। তা না হলে আপনাদের কোনো দিন মুক্তি হবে না।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশের মানুষ আজ হাহাকার করছে। তাই ইতিহাস থেকে ওবায়দুল কাদেরকে শিক্ষা নিয়ে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/৩

ট্যাগ