এবারের বাজেট ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট: মির্জা ফখরুল
(last modified Sat, 11 Jun 2022 12:56:23 GMT )
জুন ১১, ২০২২ ১৮:৫৬ Asia/Dhaka
  • এবারের বাজেট ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অবৈধ অর্থ-সম্পদকে বৈধতার লাইসেন্স দিয়ে সরকার পুরো দেশ ও জাতির যে অপূরণীয় ক্ষতি করছে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের  ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনাকে “ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট” বলে অভিহিত করে বলেছেন, অর্থ পাচারকারীদের অর্থকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোগ করার বৈধতা দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আরো পরিস্কার অর্থে বললে, সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী স্বজনদের অর্থ পাচার করার সুযোগ করে দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহৃত চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্য হ্রাসের কোন কার্যকরী কৌশল না নিয়েই শুধু মাত্র নিজেদের বিত্ত বৈভব বৃদ্ধির লক্ষ্য এই বাজেট প্রণিত হয়েছে।

মির্জা ফখরুল  বলেন , এবারের বাজেটে লুটের টাকা বিশেষকরে বিদেশে পাচার করা অবৈধ অর্থকে সামান্য কিছু করের বিনিময়ে বৈধতা দিয়ে দুর্নীতির দুয়ার অবারিত করা হচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক আইন ও আমাদের দেশের প্রচলিত আইনের বিরোধী। সরকার এর মাধ্যমে “দুষ্টের পালন, শিষ্টের দমন” নীতি গ্রহণ করলো। এটা সুশাসন ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। এটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি “সামাজিক ন্যায় বিচার” বিরোধী। আর তাই দেশবিরোধীও বটে।

ঊল্লেখ্য , দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল অঙ্কের টাকা সামান্য  কর দিয়ে বৈধ করার পর  এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যেকোন কর্তৃপক্ষ। বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে এর উপর ১৫%, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১০% ও বাংলাদেশে পাঠানো রেমিটকৃত নগদ অর্থের ওপর ৭% কর আরোপের মাধ্যমে তা বৈধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে এ ব্যবস্থা বহাল থাকবে।

মির্জা ফখরুল ব্যাখ্যা করে ব্লেন, বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের যুক্তিতে পাচারকৃত অবৈধ অর্থ বৈধ করার প্রস্তাব কেবল অনৈতিক নয়, এটা রীতিমতো আইনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে রাজ ক্ষমা ঘোষণার শামিল। এতে বর্তমানে চলমান অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এটি অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতি সহায়ক সুযোগ সৃষ্টি করবে। অর্থ পাচারকারীরা আরো উৎসাহী হবে। যেখানে পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা এবং তাদের অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনাই আইনগতভাবে প্রত্যাশিত, সেখানে তাদের এ অর্থ-সম্পদ বৈধ করে পাচারকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির সাথেও সাংঘর্ষিক এবং অসাংবিধানিক বটে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গর্হিত এই অপরাধের জন্য শাস্তির বদলে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার শামিল।

বিএনপি মহাসচীব উল্লেখ করেন, গত ১৪ বছরে সরকার ঘনিষ্ট লোকজনই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে নিয়েছে। এখন এগুলি বৈধতা  দেবার ঢালাও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।  এর আগেও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবার পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। প্রথমবারের মতো পাচারকারীদের এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক যে কোন মানদন্ডেই   অগ্রহণযোগ্য। পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দিলে যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁরা হতাশ হবেন। যাঁরা সৎভাবে ব্যবসা করছেন, তাঁরা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। এর ফলে পি. কে. হালদারের মত বিদেশে পালিয়ে থাকা কেউ একজন যদি কর দিয়ে কালো টাকা নিয়ে আসে তাহলে তাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না। এতে টাকা আরও পাচার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। টাকা পাচারকারীরা উৎসাহিত হবে।

নামমাত্র কর দিয়ে প্রশ্নহীনভাবে পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে আনার সুযোগ স্পষ্টতই অর্থ পাচারকারীদের অনৈতিক সুরক্ষা প্রদান। অথচ অর্থ পাচার রোধ আইন অনুযায়ী অর্থ পাচার গুরুতর অপরাধ। দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচার করা অর্থ বাজেয়াপ্ত এবং তার দ্বিগুণ জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদÐ। অর্থ পাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার আরও বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে। এটা অন্যায়, অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ।

মির্জা ফখরুল  পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সরকারী  ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানান এবং  এবং এটি বাতিল করার জোর দাবী জানান। অনতিবিলম্বে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানান বিএনপি মহাসচীব।

এ সময় ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা কালে বিএনপি মহাসচীব বলেন, সরকার অবশেষে স্বীকার করেছে বহিঃস্থ এবং কিছু অভ্যন্তরীণ কারণে ম‚ল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ম‚ল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। কিন্তু কিভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে তার কোন রোড-ম্যাপ দেননি অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি, সামস্টিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য হীনতা, ঋণাত্মক ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট একাউন্টস, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে ঘাটতি, ডলার  মূল্যের অস্থিতিশীলতা ইত্যাদির স্বীকৃতি সত্বেও জিডিপি প্রাক্কলন যেভাবে ৭.৫% অপরিবর্তিত রাখা হলো তা বাস্তব ভিত্তিক নয়। রাজনৈতিক এ বাজেটে প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলন ও তাই রাজনৈতিকই, জীবনধর্মী নয়।

বিএনপি মহাসচীব তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ববিহীন এই সরকার দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের কোভিড পরবর্তী চরম মুল্যস্ফীতিজনিত দুঃসহ জীবনযাপন ও দৈনন্দিন সংগ্রামের বিষয়টি সম্প‚র্ণ বিস্মৃত হয়ে এমন একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে যা দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণীর স্বার্থরক্ষায় নিবেদিত। অবাক হবার কিছু নেই, এতে করে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এই বাজেটে নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়া আড়াাই লক্ষ জনগোষ্ঠী, দিন আনে দিন খায় এই শ্রেণী এবং হতদরিদ্রের জন্য নগদ সহায়তা ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রণোদনার যে সামান্য অর্থ দেয়া হয়েছে তাও স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে প্রকৃত দুস্থদের কাছে পৌঁছায়নি। টিসিবির ট্রাকে হতদরিদ্রের লম্বা লাইন এবং বার বার একই মোবাইলে প্রণোদনার নগদ টাকা প্রদান এসবই ‘টক অফ দা টাউন’ এ পরিণত হয়েছে। শিক্ষা খাত ও এসএমইদেরকে প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রেও বৈষম্য প্রকট। মালিকপক্ষ কিছু অর্থ পেলেও দরিদ্র শ্রমিকশ্রেণী কিছুই পায়নি বলা চলে। অথচ শ্রমিকরাই অর্থনীতির চাকা চলমান রেখেছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে বিএনপি কয়েকবার আনুষ্ঠানিকভাবে দিন আনে দিন খায় এই ধরনের দরিদ্র শ্রমিকশ্রেণীর হাতে নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা সহ নানাবিধ প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাব জাতির সামনে তুলে ধরেছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের নিজস্ব স্টাইলেই চলছে। চুরি আর দুর্নীতি ছাড়া এরা কিছুই বোঝে না

বলা হচ্ছে দুই বছরে করোনার প্রেক্ষিতে লক্ষ হাজার কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল; আমাদের প্রশ্ন সে টাকা গেল কই ? তার মধ্যে একটি টাকাও কি পরিশোধ করা  হয়েছে ? জনগণ জানতে চায়। শুনি, রফতানি না কি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেন ? কারা কারা এই প্রণোদনা পেয়েছে এবং এ পর্যন্ত কি পরিমাণ টাকা পরিশোধ করেছে, তার ওপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ।

বিএনপ মহাসচ দৃঢ়তাড়ব্যক্ত করে বলেন, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় সকল দল, মত ও পথের মানুষকে সাথে নিয়ে শান্তিপ‚র্ণ উপায়ে কঠোর গণআন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীকে অপসারণ করে জনগণের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দিনে যুগোপযোগী, কার্যকরী ও প্রয়োজনীয় “অর্থনৈতিক সংস্কার” করে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও সামাজিক নিরাপত্তাভিত্তিক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলব ইন-শা-আল্লাহ্। #

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ