বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস
(last modified Thu, 30 Jun 2022 17:11:09 GMT )
জুন ৩০, ২০২২ ২৩:১১ Asia/Dhaka
  • ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
    ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। এই বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাত পৌনে ৯টার দিকে কণ্ঠভোটে এ বাজেট পাস হয়। এর আগে বিকেল ৩টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের পর অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

গত ৯ জুন সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট।‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে আজকের বাজেট। গত দুবছর করোনা মহামারির কারণে থমকে ছিল সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। সেখান থেকে বেরিয়ে আগামী দিনগুলোয় উন্নয়নের গতিধারা ফিরে আসবে— এমন স্বপ্ন দেখছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট এরই মধ্যে ঝুঁকিতে ফেলছে বিশ্বসহ দেশের অর্থনীতিকে। কঠিন মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। এটি এবারের বাজেটের চ্যালেঞ্জ।

সংসদ সদস্যরা অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। করোনার কারণে দুই বছর পর সংসদ সদস্যদের স্বশরীরে উপস্থিতি এবং প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দীর্ঘ আলোচনা এবারই প্রথম।

জাতীয় সংসদ

প্রস্তাবিত বাজেটে পাচার হওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেশে আনার ক্ষেত্রে যে সুযোগ রাখা হয়েছিল- তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কেউ ঘোষণা দিয়ে নগদ অর্থ আনতে পারবে। সে ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা আনার সুযোগ রাখা হয়েছে।

একইসঙ্গে কম হারে করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে। যেসব কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখ টাকার বেশি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করবে, তারা কম হারে করপোরেট কর পরিশোধের সুবিধা পাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই সীমা ছিল বছরে ১২ লাখ টাকা।

এ ছাড়া সব সেবার ক্ষেত্রে ই-টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) যুক্ত করে রিটার্ন দাখিলের যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তাতেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। শুধু ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এদিকে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রায় মাসব্যাপী আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয়ের আকারসহ অন্যান্য মৌলিক ইস্যুতেগুলোতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা।

৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বাজেটের মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় করা হবে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্রসহ মোট ১৩ জন সংদ সদস্য ৬৬৪টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন।

এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।

বিরোধী দলের আলোচনার পর সবগুলো প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির অনুপস্থিতিতে তাদের মঞ্জুরি দাবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো দেন, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, রওশন আরা মান্নান, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রুস্তম আলী ফরাজী, পনির উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা, মোশাররফ হোসেন, গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৩০

ট্যাগ