বর্জ্য অপসারণে কাজ শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন
ভারতে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারি বিজিবি'র
বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে পশুর চামড়ার মূল্য অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় এবারের কোরবানির পশুর চামড়া যাতে কোনোভাবে ভারতে পাচার হতে না পারে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে বিজিবি।
২০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশে সীমান্তের চোরাই পথ দিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া যাতে কোনোভাবে ভারতে পাচার হতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
জয়পুরহাটের ২০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের নিয়ন্ত্রণাধীন সীমান্তের সর্বত্র অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করে টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি, এ সীমান্তের কোরবানির পশুর চামড়া জমায়েত হওয়ার স্থানগুলোতে সাদা পোশাকে নিজস্ব গোয়েন্দা সদস্যদের অবস্থান করে ২৪ ঘণ্টা কড়া নজরদারি ও পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে গোপনে দিনে কিংবা রাতে কোনোভাবে কোরবানির পশুর চামড়া ভারতে পাচার না হতে পারে।
চামড়া পরিবহন
এর আগে মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, কোরবানির সাত দিন পর্যন্ত চামড়াবাহী আন্তঃজেলা যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। পশুর চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য পশু কোরবানির পর প্রয়োজনীয় লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করতে হবে।
সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের চামড়া রপ্তানি বেড়েছে, আরও বাড়বে। সরকার দেশের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওয়েট ব্লু চামড়া কেস টু কেস ভিত্তিতে রপ্তানির অনুমতি প্রদান করছে। এতোদিন কোরবানির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় লবণযুক্ত না বিক্রয় করতে বাধ্য হতেন। এবারে চামড়ায় নির্ধারিত সময়ে এবং প্রয়োজনীয় লবণযুক্ত করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এখন আর কোনো চামড়া নষ্ট হবে না এবং বিক্রেতারা উপযুক্ত মূল্য পাবেন।
সভায় চামড়ার স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারদর, চাহিদা, সরবরাহ, রপ্তানির সার্বিক পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘চামড়া ক্রয় নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক প্রয়োজনীয় টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। দেশে প্রয়োজনীয় লবণ মজুত রয়েছে। লবণের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে।
বর্জ্য অপসারণ
এদিকে, কোরবানির বর্জ্য অপসারণে কাজ শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। নগরবাসীর সহায়তা পেলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন দুই মেয়র। যেখানে সেখানে বর্জ্য না ফেলার আহ্বান তাদের।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আসার আগেই নিজ আঙিনা পরিষ্কার করে ফেলেছেন অনেকেই। নিজ উদ্যেগে কঠিন বর্জ্য নির্দিষ্ট ব্যাগে ভরে বাকিটুকু পরিষ্কার করে নিচ্ছেন নগরবাসী।
কোরবানি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় নগর কর্তৃপক্ষের বর্জ্য সংরক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম। আগে থেকে সরবরাহ করা করপোরেশনের বর্জ্য সংরক্ষণ ব্যাগ সংগ্রহ শুরু করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। প্রতিটি সড়কে ছোট পিকআপ ভ্যান, তিন চাকার ভ্যানসহ নানা গাড়ি নিয়ে শুরু হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বর্জ্য সংগ্রহ।
পরে পরিবেশের সুরক্ষায় ছিটিয়ে দেন ব্লিচিং পাউডার ও স্যাভলন মেশানো পানি। তবে অনেক জায়গায় জমাট রক্তসহ বর্জ্য সংরক্ষণ না করে তা সরাসরি ফেলা হয়েছে সিটি করপোরেশনের ড্রেনে।
ঢাকার দুই নগর পিতা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বর্জ্য অপসারণের কাজ সম্পন্ন করবেন তারা।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা আমাদের সাহায্য করুন। আপনারা নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্যটা রেখে দিন। আমাদের সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে। জনগণের সহযোগিতা পেলে, আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই সব বর্জ্য অপসারণ করতে পারব।’
আর দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম দুপুর ২টায় শুরু করা হবে। যারা কোরবানি দিয়েছেন আমি সবাইকে অনুরোধ করব, খুব সুষ্ঠুভাবে, পরিবেশ বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সেটা যেন শেষ করা হয়।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য ২ লাখ ২০ হাজার পচনশীল বস্তা, ২০৫ গ্যালন স্যাভলন ও ৫০ টন ব্লিচিং পাউডার বিতরণ করেছে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।