বাজারে বেড়েই চলেছে খাদ্য পন্যের দাম: কৃচ্ছ্রসাধন করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
বাংলাদেশের প্রধান খদ্য পন্য চালের শুল্ক কমিয়ে আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও বাজারে এখনও তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। উল্টো কয়েকদিন পর পর কেজিতে দু-এক টাকা করে দাম বাড়ছে।
রাজধানীর বাজারে পাইকারি পর্যায়ে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দাম আরও ৫০ টাকা বেড়েছে। ২৫ কেজি ওজনের নাজিরশাইলের বস্তাতেও বেড়েছে ৫০ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে এ দুই ধরনের চালের মূল্য কেজিতে এক টাকা করে বেড়েছে, আর খুচরা বাজারে কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত বাড়ার আশংকা করছেন পাইকারী বিক্রেতারা।
বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা। গত সপ্তাহে মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। একইভাবে কেজিতে দুই টাকা বেড়ে বিআর-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৯২ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৯০ টাকা। এ ছাড়া গরিবের চাল বলে পরিচিত স্বর্ণা জাতীয় মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
এদিকে, পেঁয়াজের দাম পাইকারি পর্যায়ে গত দু'দিনে দুই টাকা কমে ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে আগের মতোই ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মহল্লার দোকানে কেউ কেউ ৬০ টাকা পর্যন্ত দাম রাখছেন। এ ছাড়া অপরিবর্তিত আছে সবজি, ভোজ্যতেল ও চালের দাম। তবে কাঁচামরিচের দাম এখনো আকাশচুম্বী। কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। আবার শুকনো মরিচের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বাজারে শসা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। সিমের কেজি ২৪০ টাকা, বটবটির কেজি ৮০ টাকা, ধুনধুলের কেজি ৫০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, প্রতিটি লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা এবং পেঁপের কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৬০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। বাজারে কমেছে মুরগির দাম। ব্রয়লার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায়।আ
ওদিকে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে ডিমের উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। ডিম ও মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান, দাম বেড়ে যাওয়ার পর বিক্রি কিছুটা কমেছিল। এখন বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, তাই দাম কমছে। কাওরানবাজারের বাজারের ডিম ব্যবসায়ীরা জানান , দাম বাড়ার কারণে মানুষ ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছে আগের কেনা ডিম মজুদ রয়ে গেছে। সগুলো বাজারে ছাড়ায় সরবরাহও বেড়েছে। ফলে ডিমের দাম ডজনে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমেছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) বলছে, গত জুলাইয়ের চেয়ে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫০ পয়সার বেশি। প্রতিটি ডিমের বর্তমান গড় উৎপাদন খরচ প্রায় সাড়ে ৯ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১৪০ টাকার বেশি। খামার পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম এখন ৯ টাকা ৭৩ পয়সা আর ব্রয়লার মুরগির কেজি প্রায় ১৪৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, ডিম ও মুরগির দাম নিয়ে কারসাজি ঠেকাতে বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডিম ও মুরগির পাইকারি এবং খুচরা দোকানে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানের কিছুটা প্রভাব বাজারে পড়ছে বলে মনে করেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল।
কৃচ্ছ্রসাধন করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে, কেউ কেউ অধিক মুনাফার জন্য অতিরঞ্জিত করছে। শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গতকাল জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ইউরোপে ইনফ্লেশন (মুদ্রাস্ফীতি) ১০ দশমিক ১ শতাংশে উঠে গেছে। সব দেশেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। আমাদের যে জিনিসগুলো আমদানি করতে হয়, তার প্রতিটির দাম বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। আমি জানি আমাদের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরে কিছু জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। তবে যেটা স্বাভাবিকভাবে বাড়ার কথা নয়, কেউ কেউ আবার অধিক মুনাফার জন্য কিছু অতিরঞ্জিত করছে।
আগামী মাস থেকে জিনিসপত্রের দাম কমবে: পরিকল্পনামন্ত্রী
সেপ্টেম্বর মাস থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আজ শুক্রবার দুপুরে সুনামগঞ্জ কালীমন্দিরে জন্মাষ্টমী উদযাপন অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আশা করছি আগামী মাস থেকে জিনিসপত্রের দাম কমবে। এর কিছু চিহ্ন দেখছি। চাল, তেল, লবণ, ডালের দাম প্রথম দিকে যেভাবে বাড়ছিল এখন সেরকম আর বাড়ছে না। বিশ্ব বাজারে এসব জিনিসপত্রের দাম কমছে। এই ঢেউ আমাদের এখানে লাগতে একটু সময় লাগবে।’
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।