রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৫ বছর
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ: মির্জা ফখরুল
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৫ বছর পূর্তি দিবস আজ। দিনটিকে 'কালো দিবস' আখ্যা দিয়ে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এ উপলক্ষে আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন কাম্পে ‘হোপ ইজ হোম’ শীর্ষক প্রচার সমাবেশ আয়োজন করেছেন রোহিঙ্গারা।
সমাবেশে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘আজকে 'গণহত্যা' দিবসে পালন করেছি। কারণ এইদিনে মিয়ানমার জান্ত সরকার আমাদের ‘গণহত্যা’ করেছে। আমরা রিফুজি হয়ে থাকত চাই না। এখন সোনালি আরকানে ফিরতে চায়। জান্তা সরকার আমাদের নিধন করতে ৫ বার বিতাড়িত করেছে মিয়ানমার থেকে। প্রতিবারই মানবিক বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানাই।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক দমন-পীড়নের মুখে দলবেঁধে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। মানবিক কারণে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। ওই সময় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়। অবশ্য এর আগে সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে কক্সবাজারে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ অভিযোগ করেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সরকার কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। রোহিঙ্গা ইস্যুকে জিইয়ে রেখে শুধু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল নয়, ব্যবসাও করছে সরকার।
আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পার হলেও সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চরমভাবে ব্যর্থ। মূলত, শুরু থেকেই সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করে চলেছে। গত ২২ আগস্ট জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এ সরকার গণতান্ত্রিক নয় বলেই বিশ্ব দরবারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমর্থন আদায় করতে পারেনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং সামাজিকভাবে জীবন-জীবিকায় চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা, নারীপাচার ও নানাবিধ অসামাজিক ও আইনবিরোধী কার্যকলাপ চলছে। এতে পরিস্থিতি অশান্ত ও অস্থির হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গারা মাদক চোরাচালান ও মাদকপাচারে জড়িয়ে পড়ছে। তারা অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে। এসব বিষয় চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই উপায়ে নিজ দেশে ফিরতে চায়। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার কক্সবাজার ক্যাম্প পরিদর্শনে গেলে তাকেও তারা এ দাবি জানায়। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের জন্য ‘নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন’ নিশ্চিত করতে হবে। আর এ প্রত্যাবর্তনকে শুধুমাত্র কাগুজে চুক্তিতে বন্দি না রেখে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তির কার্যকর প্রয়োগের পথে এগিয়ে নিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, আঞ্চলিক সংস্থা এবং বিশ্বশক্তিগুলোর স্ব স্ব ভূমিকা সুনিশ্চিত করতে হবে। কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা উপলদ্ধি করাতে হবে। কিন্তু তার আগে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায়, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব নিয়ে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই।
ওদিকে, মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে অবশ্যই রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলে দেশটির সামরিক সরকারের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস। ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার এ কথা বলেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ বলেন, গুতেরেস রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত নিয়ে অস্পষ্ট আকাঙ্ক্ষা উল্লেখ করেছেন। যারা বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে ব্যাপক বৈষম্যের সম্মুখীন। তারা বেশিরভাগ নাগরিকত্বসহ অন্যান্য অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
গুতেরেসের মুখপাত্র আরও বলেন, মিয়ানমারে সংঘটিত সব ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।