চা শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত: শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
দৈনিক মজুরী ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা নির্ধারন করার দাবিতে বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগানের শ্রমিকদের ধর্মঘট আজ ১৪তম দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। তবে আজ (শুক্রবার) শ্রমিকদের সভা–সমাবেশ বা বিক্ষোভের মতো কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। বাগান মালিকদের সঙ্গে আগামীকাল (শনিবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে ইতিবাচক ফলাফলের আশা করছেন শ্রমিকরা।
এদিকে, চায়েরর রাজধানী শ্রীমঙ্গলে ৩৮টিসহ জেলার ৯২টি চা বাগানের কাজ বন্ধ রয়েছে। আজ (শুক্রবার) বেলা ১২টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে শ্রমিকদের তেমন একটা দেখা মেলেনি। বেশির ভাগ শ্রমিকই বাড়িতে রয়েছেন। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে নিজেদের মধ্যে পরবর্তী সম্ভাব্য করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছে।
উল্লেখ্য, ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ৯ই আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও পরে ১৩ই আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছেন না সাধারণ শ্রমিকেরা। আন্দোলন সফল করতে সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ অবরোধ করতে দেখা গেছে তাদের। দাবি আদায়ে গত কয়েক দিন ধরে বেশ উত্তাল ছিল চা বাগানগুলো।
এদিকে চলমান সংকট নিরসনে শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলামের আহ্বানে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেন বেশ কয়েকজন বাগান পঞ্চায়েত নেতারা। সেখানে জেলা, উপজেলা ও থানা প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে খবর আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাল শনিবার চা বাগানের মালিকদের সঙ্গে সভা করবেন। কাল শনিবার বিকেল চারটায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। অবশ্যই সবকিছু বিবেচনা করে তিনি একটি মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সাধারণ চা শ্রমিকেরা সেটাই মেনে নেবেন। আমাদের শেষ ভরসাস্থল থেকে এই আশাটুকু আমরা সবাই করছি।
এদিকে গতকাল দুপুরে দেশের বিভিন্ন ভ্যালীর চা বাগান পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে কালীঘাট চা বাগান নাটমন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভা থেকে চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে ও চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য ‘বাংলাদেশ চা শ্রমিক অধিকার পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কয়েক হাজার চা শ্রমিকের উপস্থিতিতে নতুন এ সংগঠনটির ঘোষণা দেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মোহন রবি দাস। চা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ও চলমান আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য নতুন এ সংগঠনটির জন্ম দেয়া হয়েছে। সেখানে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন কালীঘাট চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অবান তাঁতী। পাশাপাশি নারী বিষয়ক নেত্রী হিসেবে আছেন বাংলাদেশ নারী চা কন্যা সংগঠনের সভাপতি খাইরুন আক্তার।
মোহন আরো জানান, দেশের সব চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি সম্পাদক এবং প্রতিটি চা বাগানের দুজন ছাত্র যুবককে নিয়ে এই সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই গঠন করা হবে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।