নদী দখল মুক্ত করার আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই বাস্তবে
(last modified Tue, 14 Mar 2023 10:55:15 GMT )
মার্চ ১৪, ২০২৩ ১৬:৫৫ Asia/Dhaka

নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদ-নদী করুণ দশায় পতিত হয়েছে। বহু নদী চিরতরে হারিয়ে গেছে। জীবিত নদীর অনেকগুলোই এখন অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার পথে।

স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১০০টি নদী হারিয়ে গেছে। একসময় বাংলাদেশে ৭শ টি নদী ছিল। এখন ৪০৫টির অস্তিত্ব থাকার কথা উঠে আসছে বিভিন্ন গবেষকদের আলোচনায়। এসব নদীও দখলে-দূষণে রুগ্ন হয়ে পড়েছে। ঢাকার চার পাশে নদীগুলোর অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। মনুষ্য সৃষ্ট দূষণের পাশাপাশি নাব্যতা হারিয়ে এসব নদী মরে যাচ্ছে।

শুধু রাজধানী ঢাকার  আশপাশের চিত্রই নয়, দেশের উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী,দক্ষিণের বরিশাল, মাদারীপুর, খুলনা কিংবা সিলেট ফেনীর চিত্রও প্রায়ই  এক। একারণে ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা।

গবেষকদের মতে, প্রতি বছর গড়ে ১০টি নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। সহজেই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের নদীমাতৃকতা বিশেষণটি হারিয়ে যেতে বসেছে মূলত নদী দখলের ফলে।স্থানীয় নদী গবেষকরা বলছেন, নদী দখল হচ্ছে দুইভাবে। ভূমিদস্যুদের প্রকোপে নদী ভরাট করে স্থাপনা তৈরি এবং বর্জ্য ও শিল্প বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে নদীতে ফেলে।

আমাদের দেশের প্রায় সব এলাকায় নদী, খাল-বিল এসব অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ার কারণে পানিপ্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে নদ-নদী সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। ফলে বর্ষাকালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে গ্রামীণ এলাকায় অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি জমে ফসল ও বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাচ্ছে। ঠিক একই কারণে শহরাঞ্চলের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করছে না। বৃষ্টি ও অতি বৃষ্টিতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করছে।

এমন বাস্তবতায় ১৪ মার্চ,বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালিত হচ্ছে। ১৯৯৮ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে সারা বিশ্বে । ১৯৯৭ সালের মার্চে ব্রাজিলের কুরিতিয়া শহরে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নদীর প্রতি মানুষের করণীয়, নদী রক্ষায় দায়িত্ব, মানুষের দায়বদ্ধতা কতোটুকু এসব বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতেই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত। এবারের আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নদীর আইনি অধিকার।

এবিষয়ে পরিবেশ বাচাও আন্দোলন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, নদী রক্ষা আন্দোলনের ফলে আইনি অনেক কিছু সংযুক্ত ও উন্নত করা হলেও মাঠ পর্যায়ে নদী রক্ষা করা আইনের কোন বাস্তবায়ন নেই। তাই নদীর স্বীয় আইনগত অধিকারের প্রতি সম্মান ও স্বীকৃতির সময় এসেছে বলে মনে করেন এই পরিবেশবাদী নেতা।

আবু নাসের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের সঙ্কট এবং অন্যান্য দুর্যোগে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃতির পুনরুজ্জীবনে এখন প্রাগৈতিহাসিক সমাধানগুলোর পথে এগোচ্ছে বহু দেশ। বিশ্বের অনেক দেশ এখন তাদের আদালত ও আইন সভার মাধ্যমে প্রকৃতিকে সুসংহত রাখতে তাকে মানুষের আইনি অধিকারের সমতুল্য মর্যাদা প্রদান করছে। প্রকৃতির আইনি অধিকারের বিষয়টি আসলে কোনো পঞ্চশক্তি নয়। তাই দীর্ঘ অবহেলিত নদীগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হলে সরকার, আদালত, বিভিন্ন সংস্থা এবং সুশীল সমাজকে সাথে নিয়ে ব্যাপক এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন বলেই মনে করেন আবু নাসের। #

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/গাজী আবদুর রশীদ/১৪