সংকট কাজে লাগিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে আমদানিকারকরা
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির চাপে ৭৪% পরিবারকে চলতে হচ্ছে ধার করে: সানেম
বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আসলেই অসহনীয়। প্রকৃতপক্ষেই অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ। প্রসঙ্গত নিম্নআয়ের মানুষের ওপর সম্প্রতি একটি জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। জরিপে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে গেল ৬ মাসে ৭৪ শতাংশ পরিবার ধার করে চলছে। ১৮ শতাংশ নিম্নআয়ের পরিবারের কখনো কখনো পুরো দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৭১ শতাংশ পরিবার প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খেয়েছে। আর ৩৭ শতাংশ পরিবার মাঝে মধ্যে কোনো এক বেলা খাবার না খেয়ে থেকেছে। ৮৫ শতাংশ পরিবার মনে করে আগামী ৬ মাসে আরও ধার করতে হবে।
নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে ৮১ শতাংশ পরিবার ভোজ্যতেল, ৭৭ শতাংশ ডিম, ৮৮ শতাংশ মাছ এবং ৯৬ শতাংশ পরিবার মাংস খাওয়া কমিয়েছে। খাদ্যাভ্যাসে এমন পরিবর্তন এনেছে ৯০ শতাংশ পরিবার। এছাড়া ৪৫ শতাংশ পরিবার ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান থেকে ধার করেছে, যার পুরোটাই উচ্চ সুদ। ৩৫ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙে খেয়েছে। অন্যদিকে উচ্চ মূল্যের কারণে ৫৫ শতাংশ পরিবার সঞ্চয়বিমুখ হয়েছে। এসব তথ্যও তুলে ধরেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক নিচে নেমে এসেছে। এতে নিম্নআয়ের মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। যারা দুই বেলা খেয়ে থাকত তারা এক বেলা খাচ্ছে। অনেকেই কম খাচ্ছে। আবার কেউ কেউ আমিষের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সবকিছু মিলে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। এ অবস্থায় অবশ্যই সরকারকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক।
এদিকে, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলছেন, বাংলাদেশে গরুর মাংস, চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় অনেক বেশি। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে এটি হয়েছে। যে কোনো সংকটে সুযোগ নিয়ে আমদানিকারকরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশ অর্থনীতির ভুল নীতি ও দুর্বল পরিকল্পনার মাশুল দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।#
পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৩১