ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে বিনা চিকিৎসায় মরার অবস্থা অসহায় হতদরিদ্রদের; স্বাস্থ্যখাত সিন্ডিকেট মুক্ত করার দাবী ভোক্তাদের
(last modified Mon, 19 Jun 2023 10:18:16 GMT )
জুন ১৯, ২০২৩ ১৬:১৮ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে নিত্যপণ্যর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ আন্দোলন হলেও পর্দার আড়ালে ক্রমেই বাড়ছে ওষুধের দাম। অনেক পরিবারে চিকিৎকের পরামর্শে কয়েক প্রকারের ওষুধ সেবন করতে হয়। কিন্তু অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর দুর্দশা চরমে।

নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে ওষুধের মতো অতিপ্রয়োজনীর পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। কোম্পানীগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো ওষুধের দাম বাড়িয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করছেন। আবেদন মঞ্জুর হচ্ছে। আর ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রতিটি ওষুধের মূল্য গত কয়েক মাসে ২০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। ওষুধের দামে কার্যত নৈরাজ্য চলছে। দেখার যেন কেউ নেই।

ডাক্তারের পরামর্শে যাদের নিয়মিত প্রতিদিন ওষুধ খেতে হয় তাদের অনেকেই বলছেন, আগে প্রতিমাসে ওধুষে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা লাগতো। এখন সেই ওষুধ কিনতে লাগছে ৪ হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা লাগছে। বাজারে বিক্রি হয় এমন ২৩৪টি ওষুধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে । সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো জোর করেই ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও অনেকটা বাধ্য হয়ে বর্ধিত দাম অনুমোদন করছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের শীর্ষ ৬টি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি তাদের উৎপাদিত ২৩৪টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে ওষুধগুলোর দাম। আরো ১০টি প্রতিষ্ঠান তাদের ওষুধের দাম বাড়াতে অধিদপ্তরে আবেদন করেছে। আবার চাল.ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ব্রয়লার মুরগির সি-িকেটের মতোই বেশি দামে বিক্রির আশায় বড় ব্যবসায়ীরা ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাম বৃদ্ধির তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড, প্রতিষ্ঠানটি গত কয়েকমাসে ৫২টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যাস লিমিটেড ৪৭টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ৪৬টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বাড়িয়েছে ৩৯টি ওষুধের দাম। এছাড়াও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ৩৬টি ওষুধের এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ১৪টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে।

বিক্রেতাদের দেওয়া তথ্য মতে, লরিক্স ক্রিম আগে ছিল ৫৫ টাকা, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, অ্যান্টাসিড প্লাস ট্যাবলেট প্রতিপিস দুই টাকা থেকে এখন হয়েছে আড়াই টাকা, জিম্যাক্স (৫০০ মি.গ্রা.) ছিল ৩৫ টাকা পিস, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে। এজিসিন (৫০০ মি.গ্রা) আগে বিক্রি হতো ৩৫ টাকা করে, এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, ক্যালসিয়ামের ওষুধ অস্টোক্যাল ডি একমাস আগেও বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকা করে, এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা করে। ভিটামিন ওষুধ নিউরো-বি ট্যাবলেট ২৪০ টাকা ছিল, এর বর্তমান দাম ৩০০ টাকা।

হঠাৎ করে ওষুধের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ওষুধের দাম বৃদ্ধি আসলে সাধারণ মানুষের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষের সংসার চালাতেই তো এখন হাঁসফাঁস অবস্থা। এই অবস্থায় ওষুধের দাম বাড়ালে তো সাধারণ মানুষকে রোগে ভুগে মারা যেতে হবে।#

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/এমবিএ/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ