যানজটের নগরী ঢাকা
ধীর গতির যানবাহনে ক্ষতি হচ্ছে কর্মঘণ্টার, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন অর্থনীতি
যানজটের কারণে ঢাকা পরিণত হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধীরগতির শহরে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে কর্মঘণ্টা ও জ্বালানির অপচয় হচ্ছে, বায়ুদূষণও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের এক গবেষণায় ঢাকার বিষয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার সূচকে ঢাকার পয়েন্ট ০.৬০। পরের অবস্থানে নাইজেরিয়ার লাগোস, পয়েন্ট ০.৫২।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ছাড়াও বিশ্বের শীর্ষ ২০ ধীরগতির শহরের তালিকায় বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের নামও আছে। ময়মনসিংহের অবস্থান নবম, চট্টগ্রাম ১২তম। উল্টো দিকে বিশ্বের শীর্ষ ২০ গতিশীল শহরের ১৯টিই যুক্তরাষ্ট্রে।
ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০-এরও বেশি শহরের মোটরযানের গড় গতির ওপর গবেষণা চালিয়েছে। গবেষণা থেকে দেখা গেছে, দরিদ্র দেশগুলোর তুলনায় ধনী দেশগুলোর শহরগুলোতে মোটরযানের গড় গতি অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি।
২০২০ সালে করা বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে ব্যস্ত সময়ে (পিক টাইমে) চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার। ২০২২ সালে এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪.৮ কিলোমিটারে। উল্টো দিকে শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের হাঁটার গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় এর চেয়েও বেশি। ফলে যানজটে নাকাল নগরবাসী ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
বিশ্ববিখ্যাত গবেষণা প্রকাশনী সংস্থা প্লাস ওয়ান জার্নাল এক গবেষণায় বলছে, ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪.৯ কিলোমিটার। ৩০ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫.১ কিলোমিটার। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই গতি ঘণ্টায় ৪.৮২ কিলোমিটার। আর সত্তরোর্ধ্ব মানুষ ঘণ্টায় হাঁটতে পারেন ৪.৫ কিলোমিটার। এভাবে বিভিন্ন বয়সী মানুষের গড় হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪.৮৩ কিলোমিটার, যা বর্তমানে পিক টাইমে ঢাকার সড়কে চলা গাড়ির গতির চেয়েও বেশি।
এ প্রসঙ্গে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজজামান বলেন, ২০০৫ থেকে ২০২০ সময়কালে দেশের যানবাহনের গতি কমেছে ক্রমাগত হারে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তা দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য ক্ষতি কারন হয়ে দাঁড়াবে। আর যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক মনে করেন, রাজধানী ঢাকার ধারণ ক্ষমতা চেয়ে পরিবহনের অনুমোদন বেশি হওয়া এই সংকটের জন্য মূল দায়ী।#
পার্সটুডে/বাদশা রহমান/আশরাফুর রহমান/২৯