সুন্দরবনের ক্ষতি হলে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতাম না: শেখ হাসিনা
বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবন ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য যা কিছু ভালো মনে হবে, আমি সেগুলো করবই।’
আজ (শনিবার) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা এদেশের স্বাধীনতা এনেছি, আমরা এ দেশের উন্নয়নে কাজ করছি। কাজে এতটুকু আস্থা আমার ওপর রাখা উচিত। কোনো ক্ষতি হলে আমি অন্তত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করতাম না।”
সংবাদ সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সুন্দরবন ও পরিবেশের ক্ষতি করবে না বলে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেন শেখ হাসিনা। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রকল্পকে ‘গণবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী’ উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

‘খালেদার বক্তব্য উদ্ভট, বানোয়াট ও অসত্য’
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনের দাবি নাকচ করে তার বক্তব্যকে উদ্ভট, বানোয়াট ও অসত্য বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ও দেশের উন্নয়নে বাধা দিতে এ ধরনের কথা বলছেন। খালেদা জিয়ার উপস্থাপন করা বিভিন্ন তথ্য সঠিক নয় বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়া রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে প্রকাশ্যে শামিল হয়েছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এই অপপ্রচারে প্রকাশ্যে যোগ দেয়ার পেছনে গভীর কোনো ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে যদি কোনো নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই থাকত, তাহলে তারা অনেক আগেই তা জনসমক্ষে প্রকাশ করত।
শেখ হাসিনা বলেন, "খালেদা জিয়া বলেছেন, সেখানকার জমি তিন ফসলি। খালেদা জিয়ার দেওয়া অন্যান্য তথ্য যেমন ঘনত্ব, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা, জমির পরিমাণ সবই ভুল। তিনি কোথা থেকে, কার কাছ থেকে এ ধরনের তথ্য পেয়েছেন, তা বোধগম্য নয়।"
‘আমরা কোনো আপোশ করব না’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "রামপালের কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় সরকার সবদিক থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে জার্মানির একটি ফার্মকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা কোনো আপোশ করব না।"
শেখ হাসিনা জানান, "রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বিভিন্ন গ্যাস-এসিড নিঃসরণে উচ্চপ্রযুক্তির যন্ত্রপাতি বসানো হবে। বাতাসে ওড়া ছাই ধরে রাখার ব্যবস্থা হবে, যা সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহার হয়। গ্যাস থেকে সার উৎপাদন করা হবে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস নিঃসরণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বেঁধে দেয়া সীমারেখার চেয়েও অনেক কম হবে।"
তিনি বলেন, "আমরা ক্ষমতায় আসার পর সুন্দরবন রক্ষা করা, বাঘ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করায় এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য বলে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো যে এলাকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে তা থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে।"
'বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র'
প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, "এটা বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সবচেয়ে গুণগত মান সম্পন্ন কয়লা অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা থেকে আমদানি করা হবে। রামপালের ছাই সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহৃত হবে। ২৭৫ মিটার চিমনি ব্যবহৃত হবে। এই চিমনি থেকে বের হওয়া ধোঁয়া থেকে কার্বন তৈরি করা যাবে। আধুনিক ফেসিয়াল মাস্কেওতো কার্বন ব্যবহৃত হয়। সেটা মুখ পরিষ্কারেও কাজে আসে।"
পরিবেশ ও প্রতিবেশ এর ক্ষতি হয় বলে যারা অভিযোগ করেন তাদের বড়পুকুরিয়া দেখে আসার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর।
প্রয়োজনে দেশের টাকায় রামপাল হবে
আজ দেশের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই প্রকল্পে ঋণ না দেয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৭৭টি প্রতিষ্ঠান ভারতের এক্সিম (এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট) ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়েছে। এক খোলা চিঠিতে এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ অনুরোধ করেছে ব্যাংকট্রাক নামে একটি সংস্থার পরিচালক জোহান ফ্রিজনস।
এ ব্যাপারে একজন সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমিও এটি দেখেছি। সংগঠনগুলো কারা সেটি আমরা খোঁজ নিচ্ছি। যদি তারা (এক্সিম ব্যাংক) অর্থ না দেয়, নিশ্চয়ই আমরা অন্য কোনো সোর্স থেকে (টাকা) পাব। আর তাও যদি না পাই তাহলে আমরা নিজেদের টাকায় করব। আমরা কি পিছাইয়া যাওয়ার লোক নাকি? পদ্মা সেতু বন্ধ করছিল না, আমরা কি করি নাই। আমরা নিজেরা করব। তখন এরা কী করে দেখব। এবং সেটা করার ক্ষমতা আমাদের আছে ইনশাল্লাহ। পারব।"
‘ভারতের জামিনদার হওয়ার কোনো কারণ নেই’
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "যে ৭০ শতাংশ ঋণ ভারতের এক্সিম ব্যাংক দিচ্ছে, বাংলাদেশ কেবল সেই ঋণের জামিনদার (গ্যারান্টার)। বাংলাদেশে প্রকল্প হচ্ছে। তাই ভারতের জামিনদার হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে লাভের অর্ধেক পাবে ভারত। বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। সেই বিদ্যুৎ কী হবে, তা বাংলাদেশ নির্ধারণ করবে। এখান থেকে ভারত কোনো বিদ্যুৎ নিচ্ছে না।"
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তারপর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৭