ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ৬ জন গ্রেফতার: এখনই বাতিল হচ্ছে না গণিত পরীক্ষা
(last modified Tue, 14 Feb 2017 13:01:31 GMT )
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭ ১৯:০১ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এখনই বাতিল হচ্ছে না গণিত পরীক্ষা
    বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এখনই বাতিল হচ্ছে না গণিত পরীক্ষা

বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা (এসএসসি) পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন, রাজু আহম্মেদ, ফয়সালুর রহমান ওরফে আকাশ, জোহায়ের আয়াজ, মহিউদ্দিন ইমন, স্বাধীন আল মাহমুদ ও কাজী রাশেদুল ইসলাম।

পুলিশ বলছে, ডিবি (উত্তর) বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম কলাবাগান, পশ্চিম রামপুরা ও ভাটারা থানা এলাকা থেকে গতকাল সোমবার তাঁদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনের কাছ থেকে ল্যাপটপ, সিপিইউ, রাউটার, মোবাইল ও সিমকার্ড জব্দ করা হয়। কলাবাগান থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, ফেসবুকে পোস্ট করা প্রশ্নের স্ন্যাপশটের সঙ্গে পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এসব প্রশ্নের সঙ্গে শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ মিল পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার হওয়া চক্রটি ফেসবুকে ক্লায়েন্ট গ্রুপ খুলে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করতে তারা বিভিন্ন পোস্ট দেয়। এরপর প্রশ্ন পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে বিকাশে টাকা আদায় করে। পরীক্ষার গুরুত্ব ও চাহিদা অনুযায়ী তারা ৫০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা আদায় করে আসছিল।

এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলম নাহিদ  আজ বলেছেন, একক প্রচেষ্টায় প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতাও প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা আড়াইটায় চার দিনের সফরে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছে ওসমানী বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, প্রশ্ন কখন ফাঁস হয়েছে, কিভাবে কতটুকু ফাঁস হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের ওপর এর প্রভাব কতখানি পড়েছে, তা খতিয়ে দেখার পর এসএসসি গণিত পরীক্ষা বাতিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা হল পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানো হয়। একই দিন অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চিরকাল প্রশ্ন ফাঁস হয়ে আসছিল। আমরা তা বন্ধ করেছি। বর্তমানে যে প্রশ্নে পরীক্ষা হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীরা খুশি। তারা আনন্দ উল্লাসের মধ্যে পরীক্ষা দিচ্ছে।

কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসিতে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল। তবে পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। অনেকে রাতেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন প্রশ্নপত্রের মূল কপি। এরপর ইংরেজি প্রথমপত্র এবং দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে।

গত রোববার ছিল গণিত পরীক্ষা। মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই নেয়া হয় এসএসসির ঢাকা বোর্ডের গণিতের পরীক্ষা।

একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে পরীক্ষার্থী সেজে এক সংবাদকর্মী শনিবার রাতে গণিতের  যে প্রশ্ন পেয়েছিলেন, হুবহু সেই প্রশ্নেই গণিতের সৃজনশীল ও এমসিকিউ অংশের পরীক্ষা হয়েছে। এসএসসিতে রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গণিত (আবশ্যিক) বিষয়ের পরীক্ষা হয়। দুপুরে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে এ বিষয়ে গতকাল  শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের  বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের সত্যি সত্যিই প্রমাণ মিললে চলতি এসএসসির গণিত পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তবে আগে অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১৪

 

ট্যাগ