ডাকসু নির্বাচন: বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট ও অস্থিরতা নিয়ে বিশ্লেষক প্রতিক্রিয়া
(last modified Tue, 12 Mar 2019 10:31:30 GMT )
মার্চ ১২, ২০১৯ ১৬:৩১ Asia/Dhaka

দীর্ঘ আটাশ বছর পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে নতুন করে সংকট ও অস্থিরতার কবলে পড়েছে বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

গতকাল নির্বাচন শুরুর আগেই সিলমারা ব্যালট পেপারের বস্তা উদ্ধার, আগেভাগে  ব্যালট বাক্স সরিয়ে রাখা, সিরিয়াল নম্বরবিহীন ব্যালট পেপার ব্যবহার করা, সাধারণ ছাত্রদের ভোটদানে বাধা প্রদান এবং একজন ভিপি পদপ্রার্থীর উপর হামলা সহ নানা আনিয়মের অভিযোগে কেবলমাত্র সরকার সমর্থক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছাড়া সবক’টি প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে এবং পুনঃনির্বাচনের দাবী জানায়।তাদের দাবীর পক্ষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটও ঘোষনা করেছে।

এ অবস্থায় দুপুর দু’টায় ভোট শেষ করে গণনা শেষে রাতেই প্রথমে হল সংসদের এবং গভীর রাতে কেন্দ্রীয় সংসদের ফলাফল ঘোষনা করা হয়। ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায় ডাকসুর ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়লাভ করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এছাড়া, কেন্দ্রীয় সংসদের বাকি ২৩টি পদের একটিতে ছাড়া সবগুলোতেই জয় পেয়েছেন ছাত্রলীগের প্রার্থীরা। অনুরূপভাবে ১৮টি হল সংসদের  ১২টিতেই ভিপি পদে ছাত্রলীগের প্রার্থী জয় পেয়েছে। ৬টি হলে ভিপি হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

সোমবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টা ১৭ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা শুরু করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) হিসেবে নুরুল হক নুরের নাম ঘোষণার সাথে সাথেই প্রতিবাদ ও হট্টগোল সৃষ্টি করে  ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা।

এসময় ছাত্রলীগের বিজয়ী সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ভিপি পদের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এ পদে পুনরায় নির্বাচন দাবী করেন।

এর পর থেকে ছাত্রলীগ কর্মীরা ভিসির বাড়ীর সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগের কর্মীদের এসে অবরোধকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।  এসময় ভিসির বাসভবনের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। ওদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও পুরো নির্বাচনটি পুনরায় আনুষ্ঠানের দাবীতে আজ ক্যম্পাসে মিছিল করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত ভিপি (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুর  সোমবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ করে বলেছেন,  সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের পুরো প্যানেল জিততো। তার অন্যতম উদাহরণ সুফিয়া কামাল, শামসুন্নাহার ও কুয়েত মৈত্রী হল।

এদিকে  ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন চলাকালে রোকেয়া হলের প্রভোস্টকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা ও সদ্য নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুরুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সোমবার রাতে রেকেয়া হলের ছাত্রী  মারজুকা রায়না বাদি হয়ে শাহবাগ থানা  এই মামলাটি  দায়ের করেন।

প্রায় তিন দশক পরে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিশ্বিদ্যালয়য়ের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক মহলও তাদের  ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

সোমবার রাতে জাতীয় ঐক্যফ্যন্টের এক সভা শেষে  বিএনপি মহাসচীব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,জাতীয় নির্বাচনে যে ভোট ডাকাতি হয়েছে তারই পুরাবৃত্তি হয়েছে এবারের ডাকসু নির্বাচনে।

এদিকে, শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত একটি পর্যবেক্ষক দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শেষে সোমবার এক বিবৃতি বলেছে, ‘বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনের অনিয়মের ঘটনাগুলো আমাদের খুবই লজ্জিত করেছে। এই ঘটনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে বিনষ্ট করেছে। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে, যা সার্বিকভাবে একাডেমিক পরিবেশ বিঘ্নিত করবে।’

তাঁদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এত বছর পর অনুষ্ঠিত এই ডাকসু নির্বাচন সফলভাবে না করতে পারার ব্যর্থতার দায়ভার প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষক এবং সমগ্র শিক্ষক সম্প্রদায়ের নৈতিকতার মানদণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা চাই এই ব্যর্থতার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক। সে সঙ্গে এই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক।’

এ প্রসংগে শিক্ষাবিদ ও লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সংবাদপত্রে আজ একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে   জানিয়েছেন, এই ডাকসু নির্বাচন আমাদের শিক্ষক রাজনীতির অন্ধকার একটি দিক তুলে ধরল। একজন শিক্ষকের কাছে সব শিক্ষার্থীই সমান। তাঁর দলীয় পরিচয় যা–ই হোক না কেন। এই নির্বাচনে শিক্ষকেরা সেটি দেখাতে ব্যর্থ হলেন। এর ফলে তাঁদের ওপর শিক্ষার্থীদের আস্থা কমবে। শিক্ষক হিসেবে আমাদের সামাজিক মর্যাদা একটুখানি হলেও হারাব।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১২