ফেনীর অগ্নিদগ্ধ সেই মাদ্রাসাছাত্রীকে সিঙ্গাপুর নেয়া সম্ভব হচ্ছে না
(last modified Tue, 09 Apr 2019 06:39:27 GMT )
এপ্রিল ০৯, ২০১৯ ১২:৩৯ Asia/Dhaka
  • অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি
    অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, প্লেনযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ফেনীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে সিঙ্গাপুর নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, স্থানান্তর করা সম্ভব নয়।

আজ (মঙ্গলবার) ঢামেক হাসপাতালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মাদ্রাসাছাত্রীর বিষয়ে আমরা সকাল ৯টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানালেন- এ অবস্থায় দীর্ঘ পাঁচঘণ্টার প্লেনযাত্রা তার জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এজন্য এখন তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো ঠিক হবে না। শারীরিক পরিস্থিতি একটু স্ট্যাবল হলে তখন এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, সিঙ্গাপুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ওই ছাত্রীর জন্য নতুন কিছু চিকিৎসা সাজেশন দিয়েছেন। আমরা সেই সাজেশনগুলো তার চিকিৎসা ব্যবস্থায় যোগ করব। আগামী ১৭ এপ্রিল সিঙ্গাপুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পাঁচদিনের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজে আসবেন। ওই ছাত্রীর যদি ততদিন স্টে করে তাহলে তারাও তাকে দেখবেন।

অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দৌলা ও মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি

এর আগে সোমবার বিকেলে ঢামেক বার্ন ইউনিটে নুসরাতকে দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী সচিব ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমি এখানে (ঢামেক বার্ন ইউনিট) এসেছি। প্রধানমন্ত্রী ওই ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচার হবেই

গতকাল ডা. সামন্তলাল সেনও বলেন, তিনি নুসরাতের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। নুসরাতের অবস্থা সম্পর্কে ওনাকে (প্রধানমন্ত্রী) জানালাম পরে তিনি নির্দেশ দিলেন, দগ্ধ ছাত্রীকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে কথা বলতে। যদি সিঙ্গাপুর তাকে নিতে রাজি হয় তাহলে দ্রুত সেখানে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সিঙ্গাপুর জেনারের হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে

গত শনিবার নুসরাত জাহান রাফি আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। তারা ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দেয়া শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলে নিতে বলে। এতে তিনি সে রাজি না হলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাতের বর্তমান অবস্থা আশঙ্কাজনক।  গতকাল সোমবার তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থায় (লাইফ সাপোর্ট) রাখা হয়েছে।

মেয়েটির ভাই মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজীর ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দৌলা আলিম পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেবেন বলে তাঁর বোনকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। ওই দিনই তাঁদের মা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা করেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করেন। তখন থেকেই তাঁদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ৬ এপ্রিল সকাল পৌনে ১০টার দিকে তাঁর বোন আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে যান। এরপরই বোরকা পরা একটি মেয়ে তাঁকে জানান, নিশাত নামের এক বান্ধবীকে ছাদে মারধর করা হচ্ছে। খবর পেয়ে তিনি মাদ্রাসার ভেতরের সাইক্লোন শেল্টারে তৃতীয় তলার ছাদে যান। সেখানে তাঁর বোনের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।#

 

ট্যাগ