অবশেষে মারা গেলেন ফেনীর অগ্নিদগ্ধ মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত
বাংলাদেশের ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে অগ্নিদগ্ধ আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি (১৮) অবশেষে মারা গেছেন। আজ (বুধবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন নুসরাতের মৃত্যুর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মৃত্যুর কারণ রক্ত ও ফুসফুসের মারাত্মক সংক্রমণ থেকে কার্ডিও রেসপিরেটরি ফেইলিয়র (হৃদ্যন্ত্রে ক্রিয়া বন্ধ) হয়। এতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাত ৯টার দিকে নুসরাতের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দ্রুত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ছুটে যান চিকিৎসকরা। এরপর সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই মাদ্রাসাছাত্রী গতকাল চিকিৎসকদের বলেছিলেন, শনিবার পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় যাওয়ার পর বোরকা পরিহিত চার জন তাকে ছাদে নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাদ্রাসায় প্রবেশের পর চার জন তাকে তিন তলা প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু সর্বাঙ্গ ঢাকা থাকায় তাদেরকে তিনি চিনতে পারেনি। সেখানে তাদের মধ্যে একজন কথা বলছিল। সে সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। তিনি এতে অস্বীকৃতি জানালে ওই চারজন ওড়না দিয়ে তার হাত বেঁধে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল নুসরাত জাহানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর যাওয়ার মতো নুসরাতের শারীরিক অবস্থা না থাকায় সেখানকার চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেলেই নুসরাতকে চিকিৎসার দেওয়ার পরামর্শ দেন। অবস্থার একটু উন্নতি হলে সিঙ্গাপুর আনতে বলেন। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ঢাকাতেই নুসরাতের চিকিৎসায় সর্বাত্মক সেবা দেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে তিনি চলে গেলেন চিরতরে।
নুসরাতের মৃত্যুতে ঢাকা মেডিকেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা-বাবাসহ স্বজনরা। এ সময় হাসপাতালে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর আগে নুসরাতের মা বাদী হয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ তাকে ২৭ মার্চ গ্রেপ্তার করে। তিনি এখন সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তি দাবিতে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১০